Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

ছবি
সম্পাদকীয় প্রিয় বন্ধুরা, আবার এল আগস্ট মাস। ছাতা মাথায় বৃষ্টি ভেজা দিন, স্কুলে দেরি, আর খেলার মাঠে কাদামাটি—সব মিলিয়ে একেবারে অ্যাডভেঞ্চারের মরশুম! তবে আগস্ট মানে শুধু বৃষ্টির দুষ্টুমি নয়, স্বাধীনতারও মাস। ভাবো তো, যদি আমাদের দেশ স্বাধীন না হতো, তবে কি আজ আমরা এত মজা করে খেলাধুলা, গান, পড়াশোনা করতে পারতাম? স্বাধীনতা মানেই সুযোগ—যে সুযোগ দিয়ে তোমরা নিজেদের স্বপ্ন গড়ে তুলতে পারো। কিন্তু সেই স্বাধীনতার পথে কত আত্মত্যাগ, কত রক্ত, কত অশ্রু লুকিয়ে আছে—তা ভোলা যায় না। আজকের কিশোররা যদি সেই ত্যাগের ইতিহাস মনে রাখে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনো পথ হারাবে না। তোমাদের হাতে আজকের কলমই আগামী দিনের অস্ত্র—যা দিয়ে গড়ে উঠবে বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প আর মানবিকতার এক নতুন পৃথিবী।  এই সংখ্যায় পাবে ভ্রমণের উপন্যাস, নিবন্ধ, গল্প  আর তোমাদের জন্য লেখা দারুণ সব ছড়া আর কবিতা। পড়ে দেখো, আর তোমাদেরও লেখা বা আঁকা আমাদের পাঠিয়ে দিও—আগামী সংখ্যায় প্রকাশের জন্য।   সকলে ভালো থেকো, আনন্দে থেকো।       শুভকামনাসহ-- প্রিয়ব্রত দত্ত ও কার্তিক চন্দ্র পাল। কার্যনির...

ভৌতিক গল্প ।। আত্মীয় ভূত ।। শ্যামল হুদাতী

আত্মীয় ভূত 
আত্মীয় ভূত
শ্যামল হুদাতী 


ভূত আমি বিশ্বাস করিনা। ভূতের যে অস্তিত্ব আছে আমি কোনদিন টের পাইনি এখনও। বিজ্ঞানের যুগে এখন কি কেউ ভূত মানতে চাইবে? 

আমার জীবনে একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল সেটি আপনারা ভৌতিক বলতে পারেন কিংবা অলৌকিক বলতে পারেন কিন্তু আমি এটি ভৌতিক বা অলৌকিক কিছুই বলব না। 'আত্মার আত্মীয়' বলে একটা কথা আছে - সেটা আমি মেনে নিতে রাজি আছি। 

গল্পটা শুরু করা যাক। মাসির বাড়ি যাচ্ছি দুর্গাপুরে। বয়েস ২২/২৩ বছর। কলেজে পড়ছি। মাসি মেসো আমাদের বাড়িতে অনেকবার এসেছেন । কিন্তু আমার কোনদিন মাসির বাড়িতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। সকালে তুফান এক্সপ্রেস ধরলাম সকাল দশটায়। সম্পূর্ণ একা ট্রেনে সফর এই প্রথম। দুর্গাপুরে পৌঁছাব দুপুর দুটোর আগেই। মাসি কে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম চিঠি মারফত।

ব্যান্ডেল স্টেশনে থামতেই অনেক লোক উঠলো কিছু লোক নামলো। চরম ব্যস্ততা। জানালার পাশে বসে খুব আনন্দ উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা মেয়ে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বয়স খুব জোর ১৩/১৪ বছর হবে। দেখতে খুবই সুন্দরী। লাল ফ্রক পড়ে দেখতে দারুন লাগছে। আমাকে কেন ডাকবে? আমি ভাবছি অন্য কাউকে, আমারই ভুল হয়েছে। চোখাচোখি হতেই আমায় সে আবার হাতছানি দিয়ে ডাকলো। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই সে বিপদে পড়েছে। তাড়াতাড়ি ট্রেন থেকে নামলাম। মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম। মেয়েটা হাতের ইশারায় স্টেশন মাস্টারের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে বলল। আমি ওর মন্ত্রমুগ্ধের মতো পেছন-পেছনে চললাম। কোন কথা বলল না। শুধু ইশারায় বলল - আরেকটু এগাতে। আমি ভাবলাম, মেয়েটা নিশ্চয়ই কোন বিপদে পড়েছে, আমার সাহায্য দরকার। স্টেশন মাস্টারের ঘরে প্রবেশ করলেন - আমিও ওর সাথে ঢুকলাম। 

স্টেশন মাস্টার আমাকে প্রশ্ন করলেন। আমি স্টেশন মাস্টারের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম -
 " কি ব্যাপার, ঘরে ঢুকলে অনুমতি ছাড়াই?"

- "দেখুন এই মেয়েটা কিছু অসুবিধায় পড়েছে মনে হয়," আমি উত্তর দিলাম। 

- "কোন মেয়েটা?" স্টেশন মাস্টার জিজ্ঞাসা করলেন।

পেছন ফিরে চেয়ে দেখি মেয়েটা উধাও। আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। কি উত্তর দেব বুঝতে পারলাম না। 

- "কোন মেয়েটার কথা বলছ, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।" স্টেশন মাস্টার একটু ধমকের সুরে কথাগুলো বললেন আমার উদ্দেশ্যে।

- "দেখুন আমি তুফান এক্সপ্রেসে দুর্গাপুর যাচ্ছিলাম। একটি মেয়ে আমাকে ইশারায় ডাকলো, আমি নেমে আসলাম।"

- "ট্রেন তো এইমাত্র ছেড়ে দিল।" স্টেশন মাস্টার জানাল।
- "আমি যাব কিভাবে?" আমি প্রশ্ন করলাম উদ্বিগ্ন সুরে

- "অনেক ট্রেন পাবে চিন্তা নেই। টিকিটটা দেখাও?"

টিকিটটা পকেটে ছিল। স্টেশন মাস্টারকে দেখালাম। কিন্তু আমার ব্যাগটা গেল। সামান্য কিছু প্যান্ট জামা ছিল। 

- "তুমি বাইরে একটু বস। কোন ট্রেনে যাবে আমি পরে বলে দেব," স্টেশন মাস্টার জানালো।

একটা প্রশ্ন বারবার মনে আসতে লাগলো - মেয়েটি কোন উদ্দেশ্যে আমাকে ইশারায় ডাকলো এবং স্টেশন মাস্টারের ঘরের দিকে নিয়ে গেল। সমস্ত বিশ্রাম কক্ষগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। মেয়েটাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। সে আশ্চর্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেল।

প্রায় এক ঘণ্টা পর খবর পেলাম তুফান এক্সপ্রেস একটা মাল গাড়ির সাথে ধাক্কা মেরেছে। অনেক লোক আহত হয়েছে মারাও গেছে অনেকজন। আপাতত সব গাড়ি বন্ধ। দুই একটা ট্রেন সাহায্যের জন্য ছোটাছুটি করছে। স্টেশন মাস্টারের কামড়ায় খুবই ভিড়। পরে আরও খবর পেলাম, তুফান এক্সপ্রেস সামনের চারটি বগি লাইনচ্যুত এবং অনেক লোক আহত ও মারাও গেছেন। সামনের দু'নম্বর বগিতে আমি ছিলাম। সেই মুহূর্তে নতুন করে আবার সেই মেয়েটার কথা মনে এল। মেয়েটা  যদি হাতছানি দিয়ে আমাকে  ডেকে না নিয়ে যেত, আমার কি অবস্থা হত, তা ভেবেই শিউরে উঠলাম। 

সঙ্গে সঙ্গে দুটি টেলিগ্রাম করলাম। একটা কলকাতার বাড়িতে অন্যটি দুর্গাপুরে মাসির বাড়িতে। লিখে দিলাম যে ভাগ্যক্রমে দুর্ঘটনা হাত থেকে আমি বেঁচে গেছি। 

লোকাল ট্রেনে প্রচন্ড ভিড়ে কোনমতে দুর্গাপুরে পৌঁছালাম। ট্রেনে যেতে যেতে শুধু মেয়েটার কথা চিন্তা করছিলাম। ভগবান স্বয়ং মেয়ের রূপে এসে আমার প্রাণ রক্ষা করলেন।

সব ব্যাপারটা মাসিকে খুলে বললাম। তিনি বললেন, " ভগবানের আশীর্বাদ ছাড়া এ কাজ কি কেউ করতে পারে? নিশ্চয়ই তুই আগের জন্মে কোন ভালো কাজ করেছিলিস।

কোণের ঘরের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে মাসি বললেন, ওই ঘরটা তোর। তুই আপাতত ধুতি পড়ে চালা। কাল সকালে তোর প্যান্ট জামা কিনে দেব। আমি তোর খাওয়ার ব্যবস্থা করি। শরীর খুবই ক্লান্ত ছিল। ঘরের এক কোণে খাট। শুয়ে পড়লাম। বালিশে মাথা দিয়ে হঠাৎ দেয়ালে এক ছবি চোখে পড়ে গেল। ছবিটি দেখে সারা শরীর বিদ্যুৎপৃষ্ঠের মতো কেঁপে উঠল। বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মনে হল ভয়ের কালো একটা ছায়া আমাকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করছে। তাড়াতাড়ি বাইরে এসে ডাকলাম, মাসি মাসি.....

মাসি মনে হয় রান্না করছিলেন। আমার সারা পেয়ে দৌড়ে আসলেন। বললেন, কিরে কি হয়েছে?

- "ঘরে এসো তো।"

- "এত ঘামছিস কেন ? শরীর ঠিক আছে তো?"

- "এই ছবিটি কার?"

- "আমার মেয়ে ডালুর ছবি।"

- "মেয়ে?"

- "হ্যাঁ তাকে তুই দেখিস নি। তুই যখন ছোট ছিলিস, ডালু তের বছর বয়সে মারা যায়।"

মাসির কণ্ঠস্বর দুঃখে ভারী হয়ে গেল। কিন্তু কিরে কি বলবি বল? মাসি বললেন।

তোমাকে যে মেয়েটির গল্প বলেছিলাম , মেয়েটি ছিল তোমার ডালু। আবার মাসিকে সব কথা খুলে বললাম। মাসির চোখ দিয়ে টস্ টস্ করে জল পড়ছে।

কি করে এটা সম্ভব? মারা যাবার পর কি আত্মার স্নেহ, দয়া মায়ার আকর্ষণ থাকে? নিজের আত্মীয়দের কিংবা কাছের লোকদের বাঁচাবার জন্য তারা কি মানুষের দেহ ধরে আবার ফিরে আসতে পারে? শুধু একটা কবিতার লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার - 

"তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকির্ণ করি
বিচিত্র ছলনা জালে,
হে ছলনাময়ী। 
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে 
সরল জীবনে।"
_______________________________________________________________________________________

শ্যামল হুদাতী 
৩৫৭/১/১৩/১, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড 
কলকাতা - ৭০০০৬৮

[চিত্রঃ: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]




মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

ছড়া ।। গ্রামের হাট ।। গোবিন্দ মোদক

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় মাসিক পত্রিকা ।। পঞ্চচত্বারিংশ সংখ্যা ।। আগস্ট ২০২৫

ছড়া ।। আয় বৃষ্টি আয় ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

কবিতা ।। প্রত্যয় ।। শৈবাল কর্মকার

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

ছড়া।। পাখপাখালির মেলা ।। চন্দন মিত্র

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

ছড়া ।। ছড়া ফুল ।। বদ্রীনাথ পাল

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৫ ।।আগস্ট, ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

ছড়া ।। গ্রামের হাট ।। গোবিন্দ মোদক

ছড়া ।। আয় বৃষ্টি আয় ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় মাসিক পত্রিকা ।। পঞ্চচত্বারিংশ সংখ্যা ।। আগস্ট ২০২৫

ছড়া।। পাখপাখালির মেলা ।। চন্দন মিত্র

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

কবিতা ।। প্রত্যয় ।। শৈবাল কর্মকার

শব্দখেলা, ক্যুইজ, ধাঁধা ।। 4th issue: January 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৪ ।। জুলাই ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪১ ।। এপ্রিল ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪২ ।। মে ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৩ ।। জুন ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ষড়ত্রিংশ সংখ্যা ।। সেপ্টেম্বর ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২