Featured Post
গ্রন্থ আলোচনা ।। কবিতা অর্ধশত / পড়াতে তুষ্টি কত! ।। অরবিন্দ পুরকাইত
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
কবিতা অর্ধশত
পড়াতে তুষ্টি কত!
অরবিন্দ পুরকাইত
তোমরা যারা ছড়া পড়
কিংবা তা আবৃত্তি কর
জানো নিশ্চয়ই উত্থানপদর নাম,
বিজলী তাঁর পদবি হয়
ছড়ায়ও কম বিজলী নয়
মগরাহাটের নারিকেলডাঙ্গা ধাম।
কবিতা ছড়াতে চিনি,
অশীতিপর মানুষ তিনি
গড়ায় দক্ষ হরেক রকম ছড়া,
শিশু কিশোর মনটি নিয়ে
শীতলপাটি দেন বিছিয়ে—
শব্দ ছন্দে গড়েন মিঠেকড়া।
কোনও ছড়া ছবি ধরে
আকাশ থেকে মাটির পরে
গাছ পাখি ফুল চাঁদ নদীরা আসে,
উদাস-করা কোনও ছড়া
কোনওটি ভয়-বিস্ময়ভরা
বেদন জাগায়, ভরেও সুবাসে।
ইদানীং তাঁর বই 'কিশোর কবিতা ৫০'
নামেই বুঝছ পঞ্চাশটি কবিতার প্রকাশ
পড়ে মজা পাবে, কখনও ভাবাবে
পড়ার শেষেও তারা রেশ রেখে যাবে :
"ছড়া লিখি শুধু কি আর?
ছড়ায় ছবি আঁকি
গাছপালা ও ফুলের বাগান
সঙ্গে হরেক পাখি।
ছড়ায় আঁকি বন-প্রান্তর
নৌকো, মাঝি, যদি—
আসবে ছুটে ঢেউ তুলে ঠিক
উচ্ছ্বসিত নদী।
কিছু ছড়ায় প্রীতি ছড়ায়
গভীর ভালবাসে
কিছু ছড়ায় দূরের মানুষ
কাছে ছুটে আসে।"
'আমরা যারা ছড়া লিখি'তে এ দেখি
পড়লে বইটি বুঝবে এ সত্য, নয় মেকি।
আরও দু-এক দৃষ্টান্ত রাখি বই থেকে
বুঝবে কত ছবি সে হাত গেছে এঁকে :
"এই যে ছবি চতুর্দিকে
চোখের সামনে দেখি
কোনটা ফেলে কোনটা করি
তুলির লেখালেখি
ছবির খাতা থাকুক ফাঁকা
বলবে আমায় কে কি?
...
এদিক ওদিক নানা ছবি,
ছবির এমন হাটে
দেখতে দেখতে সময় ফুরায়
দিনটি কেমন কাটে
ছবির খাতায় রইল ফাঁকা
সূর্য যাচ্ছে পাটে।" (এই যে ছবি)
আবার দেখো উলটো ছবি
বেদনার্ত নন কি কবি!—
"আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
কম্পিউটারের পাঠ সাঁতারের ফাঁকে
দেখার সময় নেই চাঁপা গাছটাকে...
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে।
...
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
নদী-তীরে কাশবন ফুল লাখে লাখে
চিক চিক বালুচরে পাখি নামে ঝাঁকে...
ছোটদের ছেলেবেলা কারা বেঁধে রাখে?" (আমাদের ছোট নদী)
"ইচ্ছে নদী বর্ষা-জলে বানভাসি
মাঠে ভেসে যায় ফসল ডোবে সব চাষির
পথঘাট সব জলের তলায়, ভাঙছে ঘর
গরীব মানুষ ভাবে বা কী! ক'দিন পর—
রিলিফ-বাবু দিচ্ছে চিড়ে শুকনো গুড়
ছেলেগুলোর খিদের জ্বালায় করুণ সুর
ইচ্ছে নদী ইচ্ছে মতো চলছে বেশ
বুঝছে না কি মানুষ জনের কেমন ক্লেশ!" (ইচ্ছে নদী/১)
কারও যখন খিদেয় স্বপ্ন মরে
কেউবা তখন স্বপ্ন সওদা করে!—
"বাবা ছিল ট্রেনে হকার
পড়ল কাটা রেলে
হঠাৎ করে হারিয়ে গেল
অনাথ করে ফেলে।
এখন আমার স্বপ্ন কোথায়?
স্বপ্ন গেছে উড়ে
পেটের খিদে... ভাতের অভাব...
কান্না নয়ন জুড়ে।" (স্বপ্ন নেবে গো...)
"স্বপ্ন আছে, পড়ে শুনে
বড় হবার
স্বপ্ন আছে, মানুষ হয়ে
কথা কওয়ার
স্বপ্ন আছে, দেশের সেবা
দশের সেবা
স্বপ্ন আছে, হিংসা মুছে
শান্তি দেবার।" (স্বপ্নের ফেরিওয়ালা)
পড়বে ছড়া বা কবিতা
মজা যেমন পাবে,
অভিজ্ঞ ও দক্ষ লেখায়
অনেক শেখা যাবে।
কেবল ছন্দ-অন্ত্যমিলে
ছড়ায় কি প্রাণ জাগে!
ভাব ভাষা ও ভালবাসার
অনুভূতি লাগে।
তোমরা কেবল পড়বে নাকি
লিখবেও তো কত!
লিখতে লিখতে শিখতে শিখতে
হবে নিজের মতো।
"ছড়ারা ছড়িয়ে আছে আমাদের চতুর্দিকে
যে চেনে চিনেছে ঠিক পটাপট নিচ্ছে লিখে।
সে জানে কোথায় আছে ফোটা ফুল পদ্মপুকুর
ঘোরে সে চরকি যেন, মানে না গরম দুপুর।
...
সকলে জানে না তো কেমনে জানবে বা তাই
তাহলে সহজ হত সহজে লিখত সবাই।
ক'জনে লিখতে জানে ক'জনে পারছে বা তা
ছড়ারই নামে কেবল কী যে ছাই ভরায় খাতা!" (ছড়ারা ছড়িয়ে আছে)
"উদার আকাশ মাথার ওপর
বলছে ডেকে হেসে,
হৃদয়খানি কর না বড়ো
সবার ভালোবেসে।" (ডাকছে কি কেউ?)
আলোচনায় সবকিছু কি আসে
গোটা একটা বই
কয়েকখানার অংশবিশেষ ভাসে—
তৃপ্তি পুরো কই!
দক্ষ কবি-ছড়াকারের লেখা
পড়লে নিরন্তর
বৃহত্তর জগৎ যাবে দেখা
জানবেও বিস্তর।
"প্রজাপতি ওড়ে ফুলের বাগানে
পাখি কথা বলে সুর তুলে গানে
চাঁদ হাসে যদি সারাটি রাত্রি ধরে—
দুঃখ থাকে কি আর কোন চরাচরে?" (ফুল মেঘ নদী)
"এখনো সবকিছু আছে
আগের মতো ঠিকঠাক
বয়স বাড়ছে বাড়ুক
মনটি তাজা শুধু থাক।" (সবকিছু আছে)
প্রতি ছড়ার সঙ্গে পাবে
এক, একাধিক ছবি
পার্থ মৈত্রের হাতে আঁকা
লাগবে ভাল সবই।
প্রতি লেখার নিচে আছে
প্রথম প্রকাশতথ্য
পত্রিকা ও সংখ্যা দেওয়া
ঐতিহাসিক সত্য।
এমন সব বই পড়তে পেলে
শেখার সহায় হবে,
ভুল-ত্রুটি পেরিয়ে তোমার
লেখাই কথা ক'বে।
লেখো কিংবা নাই-ই লেখো
পড়ে তো সুখ পাবে,
ছড়ার সূত্রে জানার কত
দরজা খুলে যাবে!
মানে, কেবল তুষ্টি তো নয়
পুষ্টি কিছু মেলে,
ছড়ার রাজ্যে যাও হারিয়ে
একটু সুযোগ পেলে।
===================
পুস্তকের নাম : কিশোর কবিতা ৫০
লেখকের নাম : উত্থানপদ বিজলী
প্রকাশকের নাম : পালক
প্রকাশকাল : কলকাতা বইমেলা ২০২৩
মূল্য : ১৫০/-
অরবিন্দ পুরকাইত
গ্রাম ও ডাক — গোকর্ণী,
থানা — মগরাহাট,
জেলা — দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন