Featured Post

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছবি
আকাশটাকে খোঁজে দীনেশ সরকার            পড়তে বসলে জানলা দিয়ে মন ছুটে যায় দূরে গাইছে পাখি ওই যে গাছে মিষ্টি-মধুর সুরে। কিংবা যখন হাত বাড়িয়ে আকাশ আমায় ডাকে পড়ার পাতায় মন আমার কি বাঁধা তখন থাকে?   পূবের হাওয়া কড়া নাড়ে যখন আমার দোরে কিংবা অলি গুনগুনিয়ে চতুর্দিকে ঘোরে প্রজাপতি পাখা মেলে ওড়ে ফুলের মেলায় কখন যেন অবুঝ এ মন যায় হারিয়ে হেলায়।   কাঠবেড়ালি কাটুস্‌-কুটুস্‌ আমার দিকে তাকায় মন তখন কি আটকে থাকে পড়ার বইয়ের পাতায়? টুনটুনিটা তিড়িং-বিড়িং পুচ্ছ নাচায় গাছে মনটা বাঁধা তখন কি আর অঙ্কখাতায় আছে?   অঙ্ক কষতে ভুল হয়ে যায়, পড়া যাই যে ভুলে স্যারের বকা মাঝে মাঝেই খাই আমি ইস্কুলে। মনকে আমি কত্ত বোঝাই, মন তবু কি বোঝে সুযোগ পেলেই জানলা দিয়ে আকাশটাকে খোঁজে।   ******************************************** দীনেশ সরকার ১৪০ ডি, হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি, প্রেমবাজার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর---- ৭২১৩০৬

গল্প ।। উন্মুক্ত স্বর্গদ্বার ।। শংকর ব্রহ্ম

   


[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
 
 

উন্মুক্ত স্বর্গদ্বার

শংকর ব্রহ্ম



প্রায় তিন'শ বছর আগে অচিনপুরে এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ থাকতেন।তা'র নিজের বলে কেউ ছিল না।নগরের কারও কোন বিপদ আপদ দেখলে তিনি অস্থির হয়ে পড়তেন।তা'কে সকলেই খুব ভালবাসত।

   প্রচন্ড এক শীতের রাতে তার বাড়িতে পাঁচ জন অতিথি এলেন।তারা রাতটা সেখানে কাটাতে চাইলেন।ব্রাহ্মণ তাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন।বললেন,আপনারা বিশ্রাম করুন,আপনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।বলে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন, তার ঘরে তো পাঁচজনকে খেতে দেবার মতো কিছু নেই।পাঁকশালায় ঢুকে তার বিস্ময়ের অন্ত রইল না।হাঁড়ি ভরা খাবার।তা দিয়েই তিনি অতিথিদের সেবা করলেন।

       পরেরদিন সকালে অতিথিরা বিদায় নিতে চাইলেন। তাদের মধ্যে একজন জানতে চাইল, বুঝতে পেরেছেন, আমরা কা'রা?

ব্রাহ্মন বললেন,জানি না, তবে আপনারা সাধারণ কেউ নন। সেটা বুঝতে পেরেছি।

- হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। আমরা দেবতা, আপনার উপর খুব খুশি হয়েছি।

আমরা হলাম, কার্তিক গনেশ বিষ্ণু শিব ব্রহ্মা।

আপনি একটি বর ব্রহ্মার কাছে চেয়ে নিন।

ব্রাহ্মণ তখন ব্রহ্মার কাছে এসে বললেন, 'হে প্রভু আমার বসার জন্য ঘরে যে টুলটি আছে, ওটাতে কেউ বসলে যেন আমি না বলা পর্যন্ত, সে উঠতে না পারে।'

- তথাস্তু।

কার্তিক বলল,আপনি এটা কি বর চাইলেন? যান আবার বিষ্ণুর কাছে গিয়ে অন্যরকম বর চান।

ব্রাহ্মণ বিষ্ণুর কাছে এসে বললেন,

'হে প্রভু,আমার বাড়িতে যে আম গাছটা আছে,ওটাতে কেউ উঠলে যেন,আমি না বলা পর্যন্ত, সে নামতে না পারে।'

বিষ্ণু বললেন, তথাস্তু।

বর চেয়ে ফিরে এলে, গনেশ রেগে বলল, আপনি আবার এটা কি বর চাইলেন?

যান এবার শিবের কাছে গিয়ে এমন কিছু বর চান,যাতে আপনার মঙ্গল হয়।

ব্রাহ্মণ শিবের কাছে এসে বললেন, 'হে প্রভু আমি যেন দাবা খেলায় কখনও কারও কাছে না হারি।'

শিব বললেন, তথাস্তু।

ব্রাহ্মণের এইরকম বর চাওয়া দেখে, কার্তিক গনেশ খুব বিরক্ত হলেন। কোথায় নিজের মঙ্গলের জন্য কিছু চাইবেন ,তা না করে হাবিজাবি কিছু বর চাইলেন ব্রাহ্মণ। তারা ব্রাহ্মণ কে বললেন, আপনি খুবই ভাল মানুষ, তবে বড্ড বোকা। বলে তারা সকলে বিদায় নিলেন।


        তারপর বহুদিন কেটে গেছে। ব্রাহ্মণের বয়স যখন আশি, হেমন্তের এক পাতাঝরা রাতে, তার দরজায় এসে কে কড়া নাড়ল। ব্রাহ্মণ দরজা খুলে দেখেন, সামনে একজন কালো কদাকার কুৎসিত লোক দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ।

ব্রাহ্মণ বলল, কি চাই?

- আমি যমদূত, আপনার জীবনের মেয়াদ শেষ হয়েছে, আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি আমি।

ব্রাহ্মণ বললেন, বেশ,  তবে আমি প্রস্তুত হয়ে আসি, আপনি এই টুলটায় বসে ততক্ষণ বিশ্রাম করুন।

যমদূত বলল, ঠিক আছে, আপনি তাড়াতাড়ি করুন।

ব্রাহ্মণ একটু মুচকি হেসে বললেন, আচ্ছা, বেশ।

একটু পরেই ভাল জামা কাপড় পরে বেরিয়ে এসে ব্রাহ্মণ বললেন, চলুন তবে।

যমদূত যেই টুল থেকে উঠতে যাবে , আর  কিছুতেই উঠতে পারল না।

সে খুব রেগে গিয়ে বলল, এ আপনি কি করেছেন?

ব্রাহ্মণ হেসে বললেন, ওটা মন্ত্রপূত টুল।

আমি না বলা পর্যন্ত উঠতে পারবেন না।

রাগে দুঃখে যমদূত বলল, আপনি কি চান তবে?

- আগামী একশ' বছর আপনি আমার ধারে কাছে আসবেন না।

- ঠিক আছে, বলে যমদূত বিদায় নিল।

একশ' বছর পর আবার যমদূত এসে হাজির হল। বলল, আপনি এবার তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে নিন, আমি অপেক্ষা করছি বাইরে ।

- বেশ, আপনি ততক্ষণ বরং গাছের কয়েকটা আম খান, আমি তো চলেই যাব, কে আর এ'সব খাবে বলুন ?

যমদূত দেখল ,গাছে আমগুলি পেকে সিঁদুরে রঙ ধরেছে। সে লোভে পড়ে গাছে উঠে কয়েকট আম পেড়ে খেয়ে দেখলেন, অপূর্ব স্বাদ, গন্ধে মনটা ভরে যাচ্ছে।

একটু পরেই ব্রাহ্মণ এসে বললেন, চলুন এবার তাহলে ।

যমদূত গাছের থেকে আর নামতে পারল না। সে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠল, কি করেছেন আবার আপনি ?

ব্রাহ্মণ হেসে বলল, এটা মন্ত্রপূত গাছ, আমি না বলা পর্যন্ত নামতে পারবেন না।

যমদূত রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল, কি চান এবার আপনি?

- আগামী একশ' বছরের মধ্যে যেন আপনার মুখ আমায় দেখতে না হয় ।

যমদূত ঠিক আছে বলে, রাগে দুঃখে বিদায় নিল।

      একশ' বছর পর আবার যমদূত এসে হাজির হল । এবার সে সাবধান ও সতর্ক খুব। এবার সে আর কোন ভুল করবে না। 

     ব্রাহ্মণ দাবার ছক আর ঘুটিগুলো নিয়ে বেরিয়ে এলেন। পিছে ফিরে বাড়িটার দিকে তাকালেন। প্রায় তিনশ' বছর এই বাড়িটার সাথে তার নাড়ির টান। বড় মায়াটান অনুভব করলেন, বিষন্ন আবেগ তাকে গ্রাস করল।

     যমদূত দাবার ছকটা দেখে বলল , কি ব্যাপার এটা সঙ্গে নিয়েছেন কেন?

- অনেক দূরের পথ, ক্লান্ত হয়ে গেলে, গাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নিয়ে, একহাত দাবা খেলে নেওয়া যাবে।

যমদূত বলল, আমি তো কোন বাজি ছাড়া দাবা খেলি না।

ব্রাহ্মণ বলল, বেশ তবে তাই হবে। আমি রাজী। কি বাজি?

যমদূত উপহাসের সুরে বলল, আমি যদি জিতি তবে তোমার আত্মাটা আমাকে দিয়ে দিতে হবে।

ব্রাহ্মণ বললেন,আর যদি আমি জিতি?

- আপনি যা চাইবেন,তাই পাবেন।

- আমাকে নরক থেকে একশ' আত্মা এনে দিতে হবে।

যমদূত ব্যাঙ্গের সুরে বলল, বেশ তাই হবে।

যমদূতের আত্মবিশ্বাস উপচে পড়ছিল, তার চেয়ে দক্ষ আর কেউ নেই দাবা খেলায়, যে তাকে হারাতে পারবে।

কিন্তু ব্রাহ্মণের কাছে ছিল, শিবের দেওয়া বর।

প্রথমবার যমদূত কিছু বোঝার আগেই হেরে গেল। একশ' আত্মা যমালয় থেকে ছাড়া পেল। আবার খেলা শুরু হল। আবারও হারলেন। আরও একশ' আত্মা ছাড়া পেল। যমদূত যত খেলায় হেরে যেতে লাগল, তত তার জেতার জন্য জেদ আরও মনে চেপে বসল। এইভাবে বারবার হারার পর আর দেবার মতো কোন আত্মা সেখানে রইল না। যমালয় সম্পূর্ণ খালি হয়ে গেল।

ব্রাহ্মণ বলল, তবে এখানেই আমাদের যাত্রা শেষ। যমদূত কোন উত্তর দিল না।

          ব্রাহ্মণ সব আত্মা নিয়ে এবার চলল স্বর্গের দিকে। স্বর্গের দ্বারে এসে পৌঁছাতেই দ্বাররক্ষী আটকালো তাকে।

ব্রাহ্মণ নিজের পরিচয় দিলেন। সব শুনে দ্বাররক্ষী বলল, ঠিক আছে, এতজনকে নিয়ে তো আপনি ঢুকতে পারবেন না। আপনি একা ঢুকতে পারেন।

ব্রাহ্মণ বললেন, ঠিক আছে। আপনি তবে একবার ব্রহ্মার কাছে একটা কথা জিজ্ঞাসা করে আসুন।

দ্বাররক্ষী বললেন, কি?

ব্রাহ্মণ বললেন, এক শীতের রাতে তিনি তার চার সঙ্গী নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিলেন, আমি তাদের আপ্যায়ণের কোন ত্রুটি রাখিনি, আর আজ আমি আমার সাথীদের নিয়ে এসেছি বলে, আমাকে একা স্বর্গে ঢুকতে হবে? তা'হলে কি আমি মনে করব, আমি তাঁর চেয়েও বেশী মহান?

দ্বাররক্ষী বলল, ঠিক আছে আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।

কিছুক্ষণ পর দ্বাররক্ষী ফিরে এসে স্বর্গের দ্বার খুলে দিয়ে, গম্ভীর স্বরে বললেন, প্রভু আপনাদের সকলকেই ঢুকতে বলেছেন।

ব্রাহ্মণ নিঃস্বার্থ বুদ্ধির জোরে সকলকে নিয়ে সানন্দে স্বর্গে ঢুকলেন।


___________________________________________________________________________

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

চোখের ভাষা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত

ছড়া ।। শীতের দু'টি মাসে ।। গোবিন্দ মোদক

প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র ।। 24th issue: September 2023

ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় - ২২ ।। জুলাই ২০২৩

ছড়া ।। দৃষ্টিকাড়া বৃষ্টি ।। শচীন্দ্র নাথ গাইন

ছড়া ।। অদ্ভূতুড়ে ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

কবিতা ।। আকাশ-সাগর ।। শান্তনু আচার্য

ছড়া ।। শৈশবের রথ ।। ইয়াসমিন বানু

কবিতা ।। নতুন বছর ।। জীবন সরখেল

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

অণুগল্প ।। ঝুমুক ঝুমুক ।। ব্রজ গোপাল চ্যাটার্জি

ছোটগল্প ।। হেমন্ত দাদার সাথে ।। দীপক পাল

ছড়া ।। আকাশটাকে খোঁজে ।। দীনেশ সরকার

ছড়া ।। শীতবুড়িটা ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

কবিতা ।। খুকির বায়না ।। খগেশ্বর দেব দাস

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র ।। 29th Issue: February

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। পঞ্চত্রিংশ সংখ্যা ।। আগষ্ট ২০২৪

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২