[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
চুনি গোস্বামী স্মরণে আনন্দ বক্সী
পরাধীন ভারতে জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলা
ছোট থেকেই ভালোবাসতেন হরেক রকম খেলা।
ক্রিকেট-ফুটবল-টেনিস বা হোক না তা সে হকি
সব খেলাতেই সমানভাবে করতেন চকমকি।
ফুটবল খেলাটায় ছিল অন্য রকম টান
তাঁর পায়ের কারিকুরিতে হয়ে যেত সব ম্লান।
বলের ওপর ছিল যে তাঁর দারুণ নিয়ন্ত্রণ
গতির সাথে বল কাটিয়ে ছিঁড়তেন রক্ষণ।
দেশপ্রিয় পার্কেই তিনি করতেন কসরত
বলাই দাস খুঁজে পেলেন ফুটবল-জহরত।
অধিনায়ক ছিলেন তিনি তীর্থপতি স্কুলের
অতুলনীয় হাসিটা তাঁর প্রস্ফুটিত ফুলের।
খেপ খেলাতে পেতেন ডাক ছোট থেকে লাগাতার
মনোহরণ করে নিতেন জিত হোক আর হার।
আট বছর বয়সে তাঁর হয়ে গেল যোগাযোগ
মোহনবাগান-ছোট দলে পেয়ে গেলেন সুযোগ।
তাক লাগিয়ে দিলেন তিনি অপরূপ ফুটবলে
ছাড়পত্র পেয়ে গেলেন মোহন'-বড়োর দলে।
প্রকাশ পেল ক্রমে ক্রমেই তাঁর সকল গুণ-ই
সুবিমল গোস্বামী থেকে হলেন সবার চুনি।
ঠিকানা লেখা পাশ দিতেন সতীর্থদের মাঝে
সুযোগগুলো অবলীলায় লাগাতেন তাঁরা কাজে।
নিখুঁত শটে গোল করাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার
বড়ো প্লেয়ার ছিলেন তবু ছিলনা অহংকার।
একই ক্লাবে খেলেন তিনি চোদ্দ বছর প্রায়
অন্য দলে খেলতে তাঁর চিত্ত দেয়নি সায়।
ডুরান্ড-রোভার্স হোক আর কোলকাতা লীগ
জিতেছেন তিনি বহু ট্রফি এক বা সে একাধিক।
ব্রিটিশ ক্লাবের অফারও ফেরান নির্দ্বিধায়
টাকাপয়সার বিষয়টি রাখেননি ভাবনায়।
পাঁচ মরশুম ছিলেন যে মোহন-অধিনায়ক
আস্থা এবং বিশ্বাস দু'য়ের পরিচায়ক।
টলিউড-বলিউড হলো তাঁর খেলার ভক্ত
রাধাকৃষ্ণানও ছিলেন তাঁরই অনুরক্ত।
তাঁর জন্য খুলল শেষে জাতীয় দলের দ্বার
ফাটাফাটি ফুটবলে তাঁর পেলনা যে কেউ পার।
ষাট সালেতে পেয়ে গেলেন সুযোগ অলিম্পিকে
জাতীয় দলে সাথি হলেন চুনি-বলরাম-পিকে।
ফুটবলকে নিয়ে গেলেন অন্য উচ্চতায়
ফুল ফোটালেন মাঠে তাঁরা ম্যাজিক দেখিয়ে পায়।
সতীর্থদের মাঝে তিনি বাড়িয়ে দিতেন জিদ
ভিতর থেকে পেতেন তাঁরা ভালো খেলার তাগিদ।
বাষট্টির সে এশিয়াডে করলেন সোনা জয়
অধিনায়ক হিসাবে তিনি রাখলেন পরিচয়।
এশিয়ান-মারডেকা কাপে চিনিয়ে দিলেন জাত
অংশ নেওয়া দেশগুলোকে করলেন কুপোকাত।
ফাইনালে হারলেও ভাই স্থান করে নেন মনে
চুনি নামটা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের কোণে কোণে।
পঞ্চাশটি ম্যাচ খেলেন তিনি দেশের জার্সি গা'য়
তেরটি গোল লেখা রয়েছে রেকর্ডের খাতায়।
কম বয়সে জানিয়ে দিয়ে ফুটবলকে বিদায়
ধীরে ধীরে আসলেন তিনি ক্রিকেটর আঙিনায়।
অলরাউন্ডারূপেই কুড়োলেন বেশ খ্যাতি
বাংলার রঞ্জি দলেও ঢুকলেন রাতারাতি।
দু'দুবার ফাইনাল খেলে অধরা রইল ট্রফি
অধিনায়করূপেও তাঁর দল করল ফ্লপই।
ওয়েস্টইন্ডিজ-সাথে এক প্রস্তুতি ম্যাচে
মাতিয়ে দিলেন গোটা মাঠ ব্যাটিং-বোলিং-ক্যাচে।
বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানকে স্যুইংয়ে দেন শুইয়ে
ইনিংসেই হারেন তাঁরা মানসম্মান খুইয়ে।
টেস্ট ম্যাচ হয়নি খেলা জাতীয় দলের হয়ে
হাসি মুখেই মানিয়ে নেন সব অভিমান সয়ে।
বাসন্তী দেবীর সাথে বাঁধলেন গাঁট ছড়া
একপুত্র সন্তানেই সংসার তাঁর গড়া।
'এশিয়ার সেরা স্ট্রাইকার' হন বাষট্টি সালে
'অর্জুন'-'পদ্মশ্রী'ও যে পেয়েছেন কালে কালে।
'টাটা অ্যাকাডেমি'র যে তিনি প্রথম পরিচালক
ক্রীড়াজগতে ছিলেন এক বর্ণময় আলোক।
বহুমুখী প্রতিভা নিয়েও থেকেছেন সংযত
তাঁর প্রয়াণে ভারতবাসী গভীর মর্মাহত।
___________________________________
আনন্দ বক্সী
গ্রাম-বেলিয়াডাঙ্গা,ডাক-দক্ষিণ বারাশত, থানা-জয়নগর, জেলা-দক্ষিণ ২৪ পরগনা ,সূচক ৭৪৩৩৭২।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন