Featured Post
গল্প ।। যথা ইচ্ছা তথা যা ।। অরুণ চট্টোপাধ্যায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ঢোলগোবিন্দের কড়চা
(তৃতীয় পর্ব)
যথা ইচ্ছা তথা যা
ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়
মঙ্গলে ঊষা বুধে পা/ যথা ইচ্ছা তথা যা। আজ মামা এসেছে ঢোলের বাড়ি।
তার মা খুব খুশি। হেসে বলল, ওমা দাদা, অনেক দিন পরে এলে?
মামা বলল, দেখ আজ বুধবার। আজ আমার ছুটির দিন তা তো জানিস।
ভোর হতেই কে যেন কানে কানে বলল, মঙ্গলে ঊষা বুধে পা/ যথা ইচ্ছা তথা যা।
তোর কথাই প্রথমে মনে পড়ল তাই চলে এলুম।
-বেশ করেছ দাদা বেশ করেছ। তুমি তো আবার নারকোল দিয়ে মোচার ঘন্ট খেতে
খুব ভালবাস। বস বস ঢোলের বাবাকে এখুনি বাজারে পাঠাচ্ছি কাঁটালি কলার
মোচা কিনে আনবে।
মামা ভাল আইসক্রিম এনেছিল। সেটা নিয়েই লাফাতে লাফাতে ঢোল চলে এসেছে
বাইরে। এখুনি গোবিন্দের বাড়ি না গেলে হবে না। দুজনে মিলে একসঙ্গে না খেলে
আয়েস হবে না।
দুজনে মিলে খেলেই হবে না। আবার বাইরে বেরিয়ে বেড়াতে বেড়াতে খেতে হবে।
তাই গোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিল আর ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে বলছিল,
মঙ্গলে ঊষা বুধে পা/ যথা ইচ্ছা তথা যা। মঙ্গলে ঊষা---কথাটা তার খুব ভাল লেগে
গেছে। আজ মঙ্গলবারের ঊষা মানে বুধবার ভোরেই মামা এল আবার তার জন্যে
ভাল আইসক্রিম নিয়ে এল। তাই কথাটা মনে একেবারে মনে গেঁথে গেছে। রাস্তায়
পড়ে প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের বাড়ি। প্রফেসর এ সময় চা খান।
ঢোল আর গোবিন্দ দুজনেই তাঁর খুব ভাল বন্ধু। ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে আর কথাটা
বলতে বলতে যাচ্ছে দেখে উঠে গিয়ে ডাকলেন তাদের।
জিভ কাটল দুজনেই। বিজ্ঞানীর বাড়ির পাশে এইভাবে চেঁচান তাদের মনে হয় ঠিক
হয় নি।
-কিছু মনে করবেন না স্যার। আমরা মানে মামা আইসক্রিম এনেছে তাই একটু ফূর্তি
হয়েছে আর কি।
-ঠিক আছে ঠিক আছে।
বলে প্রফেসর তাদের ডাকলেন ঘরে। বসালেন আর বললেন, আইসক্রিমের সঙ্গে তো
আর কিছু চলে না তাই-
-মিষ্টি চলে স্যার। তাড়াতাড়ি বলে উঠল ঢোল।
গোবিন্দ বলল, আপনিও মিষ্টি খেতে বেশ ভালবাসেন জানি আমরা।
প্রফেসর ক্ষেপে গেলেন না ওদের বায়নায়। বরং হেসে বললেন, তা পাবে। ফ্রিজে আছে।
এখন বল তো তুমি কি বলছিলে?
-ওই তো আমার মামার মুখে শুনেছি তাই-
-তা ঠিক মামার মুখের কথা মামার আনা আইসক্রিমের মতই মিষ্টি হবে। কিন্তু তোমরা
কি সত্যি সত্যি যথা ইচ্ছা তথা যেতে চাও?
-আবার মহাকাশে স্যার? দুজনেই লাফিয়ে উঠল।
-না ঠিক মহাকাশে নয় তবে আকাশে তো বটেই।
দুজনেই খুব খুশি। গোবিন্দ বলল, এবার বুঝি দুজনের পিঠে ডানা করে দেবেন?
ঢোল বলল, দারুন হবে স্যার। একেবারে পাখি হয়ে যাব।
প্রফেসর গম্ভীর হলেন, না পিঠে ডানা নয়। আগের বারের মত পায়ে জুতোও নয়। তবে
কোমরে পরতে হবে চওড়া বেল্ট। তাতে থাকবে কনট্রোল। যেখানে খুশি সেখানে যেতে
পারবে।
ঢোল নেচে উঠে বলল, তার মানে যথা ইচ্ছা তথা যা স্যার? মানে মামার কথাই সত্যি
হবে?
প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস বললেন, এখন যাও। সাতদিন পরে তোমাদের ফোন করব। ট্রেনিং
হবে তিনদিনের।
তারপর-
খুব উৎসাহী দুজন। প্রফেসরের কথা শেষ হতে না হতেই প্রশ্ন করল, তারপর?
প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস তো ক্ষেপে লাল। চোখ গরম করে বললেন, আমার মুখের ওপর
কথা বল এমন বেয়াদব হয়েছ তোমরা?
ওরা তো খুব বিপদে পড়ে গেল।এই সেরেছে, প্রফেসর যদি বিগড়ে যান? তবে তো
মুশকিল।
তাড়াতাড়ি ঢোল বলে উঠল, সরি, সরি স্যার-
গোবিন্দ বলল, আর কখনও হবে না স্যার এই নাক কান মুলছি।
নাক কান মোলা পর্ব শেষ হতে তারা বিদায় নিল।
দশ দিন পরে মোবাইলে মেসেজ এল দুজনের। ইতিমধ্যে ওরা কিছু ইংরেজি শিখে
নিয়েছে প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের কাছ থেকে। মোবাইলের মেসেজ টেসেজ পড়তে
ইংরেজি লাগবে।
প্রফেসর ওদের বলেছেন, দেখ আমাদের এই বিশ্বটা শুধু বাংলা বা ভারতকে নিয়ে নয়।
সারা বিশ্ব কিন্তু ভাষায় এক আর সেটা হল ইংরেজি। এটা না জানলে কিন্তু হবে না।
প্রফেসর লিখেছেনঃ কাম শার্প এট সেভেন ও ক্লক মর্নিং।
ওরা পড়ি কি মরি সকাল সাতটায় দৌড়ে এসেছে। দেরি হলে যদি চান্স ফস্কে যায়।
তিনদিন ট্রেনিং হবে। আর ট্রেনিং হবে আকাশে। প্রফেসরের বাড়িতেই বেশ জম্পেশ
করে ব্রেকফাস্ট হল। খাওয়া দাওয়ার পর তিনটে মজার বেল্ট আনা হল তিনজনের
জন্যে। সাধারণ বেল্ট নয়। তার চেয়ে বেশ একটু চওড়া বেল্ট। বেল্টের সামনের
দিকে কতগুলো ছোট ছোট বাক্স মতন আর মিটার। ওদের কোমরে পরিয়ে দিলেন
প্রফেসর। নিজেও পরলেন। বললেন, এই বেল্ট হচ্ছে তোমাদের কাছে সব কিছু।
এর মধ্যে রয়েছে ইঞ্জিন। কম্পিউটার, স্পিডোমিটার, মাইলোমিটার ইত্যাদি। আর
রয়েছে নেভিগেশন সুইচ। মানে কোন দিকে কতটা ঘুরবে। আর পরিয়ে দিলেন তাদের
বাঁ হাতের কব্জিতে একটা ব্রেসলেট।
প্রথমে বেল্টের একটা ছোট লাল সুইচ টিপলেন প্রফেসর। বললেন, এবার ইগ্নিশন হল
মানে ইঞ্জিন অন হল। তারপর-
আবার সেই বেয়াদপিটা করল ঢোল। মানে কথার মধ্যে কথা। বলল, আমাদের কি তবে
এমন ঝুঁকে ঝুঁকে সুইচ টিপতে হবে নাকি স্যার?
গোবিন্দ বলল, সে বড় ঝক্কির স্যার। কোমর ব্যথা হয়ে যাবে।
ভারি বিরক্ত হলেন প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস, তোমাদের বড় দোষ ঢোলগোবিন্দ। আমার
মুখের কথাটা শেষ করতে দাও না।
-সরি স্যার। দুজনেই বলল।
-তোয়াদের কাজ শুধু সোজা হয়ে থাকা আর সোজা সামনের দিকে তাকান। দেখ লাল
সুইচটা অন করতেই তোমাদের সামনে একটা ভার্চুয়াল মনিটর এসে গেল। একে মনিটর
না বলে ভার্চুয়াল কি-বোর্ডও বলতে পার। ভার্চুয়াল কেন বলছি জান?
লাফিয়ে উঠে ঢোল বলল, এটা শুধু দেখাই যায়-
গোবিন্দ বলল, ধরা যায় না স্যার।
-ঠিক। এই বোর্ডে দেখ অনেক বাটন মানে বোতাম আছে। সব বোতামের গায়ে নম্বর
আছে। ঠিক স্মার্ট ফোনের মত। এই বাটনে-
-আমাদের আঙ্গুল ঠেকাতে হবে নাকি?
ঢোলের কথার উত্তরে প্রফেসর বললেন, আরে না না সে কষ্টও তোমাদের করতে হবে না।
গোবিন্দের কথার উত্তরে প্রফেসর বললেন, তোমরা শুধু বাটনের নম্বর মুখে বলবে।
এই বাটনগুলো সব সাউন্ড সেনসিটিভ। মানে শব্দ দিয়ে অপারেট করতে হবে। যেমন ধর
আমি এক বলছি। তোমরাও আমার সঙ্গে সঙ্গে বল।
তিনটে গলা একসঙ্গে বলে উঠলঃ ও-য়া-ন!
প্রফেসর কি ম্যাজিক জানেন? কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে তারা আস্তে আস্তে ওপরে
উঠতে লাগল।
বেশ মজা লাগল দুজনের। প্রফেসর চেঁচিয়ে বললেন, স্টপ এন্ড ফ্লোট।
ওরাও তাই বলল। ওদের ওপরে ওঠা বন্ধ হল। কিন্তু নিচেও পড়ল না। ভেসে রইল শুধু।
প্রফেসর বললেন, এক নম্বর বাটন হচ্ছে এন্টি গ্র্যাভিটি বাটন। এটা বললে তোমাদের
শরীরের ওজন কমে যাবে আর হালকা হয়ে ওপরের দিকে যাবে। স্টপ বাটন হল থামার।
স্টপ করার পর ফ্লোট বললে শুধু আকাশে ভাসবে। আর এবার নেভিগেশন বাটন হল
তিন। তার আগে মোশন বাটন বললে তোমরা চলতে থাকবে। তিন বললে তোমাদের
নেভিগেশন মানে তোমরা কোন দিকে যাবে তা জানতে চাওয়া হবে। এই নেভিগেশন
তিনশ ষাট ডিগ্রির হয়। এগুলো সব থিয়োরিটিক্যালে শিখিয়ে দেব।
এবার গো টু দি বটম বললে, নিচের দিকে নামবে। কিন্তু তার স্পিড নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
জোরে কি আস্তে কি মাঝামাঝি। বল গো টু দি বটম স্পিড মিডিয়াম।
তিনজনে সোজা নিচের দিকে নামতে লাগল। আস্তে আস্তে মাটি স্পর্শ করল।
ঢোল বলল, স্টপ বলতে হবে না স্যার?
গোবিন্দ বলল, হ্যাঁ তাইতো। স্টপ বলা হয় নি।
-বলতে হবে না। বটম বলেছ তাই বটম স্পর্শ করতেই সেন্সর কাজ করবে আর বটমে
এসে স্টপ হয়ে যাবে।
তাহলে এন্টি গ্র্যাভিটি কি ভাবে কাজ করছে দেখতেই পাচ্ছ? এই এন্টি গ্র্যাভিটিই
আকাশে তোমাদের ভাসিয়ে রাখবে। এর জন্যে কোনও লিফট লাগবে না।
-কিন্তু স্যার মাটি থেকে নিচে নামতে গেলে?
ঢোলের কথার উত্তরে স্যার বললেন, সেখানে ডাউন বাটন পুশ করতে হবে আর
তোমার গ্র্যাভিটি কমাতে হবে। প্রথমে জিরো রেখে পরে একটু একটু করে বাড়াতে
হবে যাতে গর্তের ভেতরে তুমি মুখ থুবড়ে পড়ে না যাও।
পরের দিন আবার ট্রেনিং শুরু হল। লাল সুইচ টিপে ইগনিশন অন করা হল।
তারপর ‘ওয়ান’ বলে মাটি থেকে প্রথমে ত্রিশ ফুট ওপরে উঠে স্টপ বলা হল।
চৌধুরীদের বাড়ির আড়াই তলা পর্যন্ত। এবার শুরু ট্রেনিং-এর দ্বিতীয় পর্ব।
প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস বললেন, এবার তোমাদের জি-পি-এস অন করতে হবে।
জি-পি-এস জান তো?
ঢোল বেশ ইংরিজি শিখেছে। বলল, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম?
গোবিন্দ বলল, মানে গুগুল ম্যাপ।
-ঠিক ধরেছ। জি-পি-এস বললেই তোমার সামনের মনিটরে গুগুল ম্যাপ খুলে যাবে।
যে জায়গায় যাবে সেটা মুখে বলবে। ম্যাপ ঠিক সেই জায়গায় ব্লিংক করতে থাকবে
মানে আলোটা জ্বলতে নিভতে থাকবে।
ঢোল বলল, আমি মামার বাড়ি যাব।
গোবিন্দ বলল, কেন রে ঢোল আবার আইসক্রিম ম্যানেজ করতে যাবি?
-না রে মামিমাকে দেখে আসব। অনেক দিন দেখি নি মন কেমন করছে।
-আসল কথা বল না ঢোল, মামিমা তোর ভাল চিংড়ি মালাইকারি রাঁধে সেটা খেতে যাবি?
এসব কথায় কান দিলেন না প্রফেসর। গম্ভীর হয়ে বললেন, ভাল করে দেখার জন্যে
দরকার হলে জিপিএস জুম ইন মানে বাড়িয়ে অথবা জুম আউট মানে কমিয়ে নিতে পার।
ভাল কথা তোমার মামার বাড়ির জায়গার নাম বল। মনে রাখবে যদি সবাই একসঙ্গে যাও
তো যেকোনও একজন কাজকর্মগুলো করলেই হবে। তবে পাশাপাশি থাকতে হবে।
তার ইচ্ছেকে যে এমন ভাবে পাত্তা দেবেন প্রফেসর ভাবতে পারে নি ঢোল। আহ্লাদে
আটখানা হয়ে চেঁচিয়ে উঠল, বলরামপুর!
-ব্যস ব্যস দেখ জি-পি-এস জায়গাটা ব্লিংক করছে।
সতিই তাই।
-এখন এক কাজ কর। এবার গতির ইঞ্জিন স্টার্ট করতে হবে। এটা কিন্তু একটা পাম্প।
ফুয়েলে চলে।
-ফুয়েল মানে পেট্রল? ট্যাংক কই স্যার? ঢোলের প্রশ্নে গোবিন্দ বলল, পেট্রল কেন
ব্যাটারিও তো হতে পারে। তাই না স্যার?
প্রফেসর বেশ খুশির হাসি হেসে বললেন, তুমি ঠিক ধরেছ গোবিন্দ। তবে এটা এমনি
ব্যাটারি নয়। এটা সৌরশক্তিতে চলে।
ঢোল অবাক হয়ে বলল, রোদ দিয়ে স্যার?
- হ্যাঁ তাই। সেজন্যে পরিবেশ দূষণ হয় না। এটা পরিবেশ বান্ধব বা গ্রীন সিস্টেম বলে।
মনে রাখবে এই মেশিন শুধু সামনে বা পেছনে যাবার জন্যে লাগে। ওপরে উঠতে বা
নিচে নামতে লাগে না। সে কাজটা করে-
গোবিন্দ চট করে বলল, এন্টি গ্র্যাভিটি তাই না স্যার?
স্যারের মুখে হাসি আর ধরে না। এত চট করে তাঁর ছাত্ররা বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ধরে
ফেলবে ভাবতে পারেন নি। এখন মুখে ‘ব্যাটারি অন বললেই ব্যাটারি অন হবে। আর
মেশিন অন বললেই পাম্প চলতে শুরু করবে। তবে একটা জিনিস মনে রাখবে এই
কাজ করতে গেলে যেহেতু তোমাদের মুখের নির্দেশে বাটনগুলো সব অন অফ হয়ে
যাচ্ছে তাই এটাকেও নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। সেজন্যে আগে মুখে মিউট অন বলে
মিউট বাটন চালু করবে। তখন তোমার নির্দেশ আর সিস্টেম পাবে না। আর নির্দেশ
দেওয়ার সময় মিউট অফ বলে আবার মুখের নির্দেশ দিয়ে দেবে।
গোবিন্দ বলল, মানে শুধু মুখের হুকুম আর কি।
ঢোল বলল, দারুন মজা স্যার। আমার মুখের কথায় মেশিন কাজ করবে।
-ঠিক তাই। সবচেয়ে ভাল হয় সবাই নিজেরা কিছু না করে এখন শুধু আমাকে ফলো
করে যাও। তোমরা দুজনে মিউট অন বলে নিজেদের মিউট করে দাও। যাতে
তোমাদের নির্দেশে মেশিন আবার বিগড়ে না যায়।
সবাই তাই করল। প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস বললেন, তার আগে বলি এই মেশিন
কি করে কাজ করে। আসলে এটা একটা হিটার। নাইক্রোমের কয়েল আছে।
সোলার ব্যাটারি অন করাই আছে। এবার সে নির্দেশ পেলে এই হিটার চালু করে
দেবে। আর আছে একটা পাম্প সে বাইরের বাতাস হিটারের ভেতরে ঢোকাবে
আর সেট গরম হয়ে বেরোনার পথ খুঁজবে। যেদিক দিয়ে ঢুকবে সেদিক দিয়ে
সে কিন্তু বেরোতে পারবে না ভালভ থাকার জন্যে। ভালভ এই হিটিং চেম্বারে
বাতাস শুধু ঢুকতেই দেবে বাইরে বেরোতে কিন্তু দেবে না। তাকে বেরোতে হবে
অন্য পথ দিয়ে সরু পথ। এই সরু হওয়ার কারণে বাইরে বেরোনর সময় প্রচুর
চাপ দেবে আর তোমাকে মানে ইঞ্জিনটাকে গতিশীল করবে। এই চাপ নিয়ন্ত্রণ
করবে তোমার বাঁ হাতের রিস্টে থাকা এই ব্রেসলেটের রিংটা এটা কিন্তু
ভার্চুয়ায়াল নয়। রিং বাঁ দিকে বা ডান দিকে ঘুরিয়ে গতি কমাবে বা বাড়াবে।
-এটা কি করে হবে স্যার? ঢোলের চোখে তো ছানাবড়া।
-এই রিং বাঁ দিকে করলে হাওয়া ঢোকার রাস্তা কমে গিয়ে কম হাওয়া ঢুকবে
আর চাপ কমে গিয়ে গতি কমে যাবে। আর ডান দিকে করলে বেশি হাওয়া
ঢুকে চাপ বাড়িয়ে গতিও বেড়ে যাবে।
এবার প্রফেসর ব্যাটারি আর হিটার অন করলেন। পাম্প সবুজ আলো জ্বালিয়ে
বলল সে প্রস্তুত। এখন বাঁ হাতের ব্রেসলেটের রিং আস্তে আস্তে ডানদিকে ঘোরাতে
লাগলেন গতি বাড়তে লাগল।
-তোমার যদি জিপিএস অন করা থাকে তবে এই ইঞ্জিন কিন্তু নিজেই সেদিকে নিয়ে যাবে।
তবে তোমার সামনে যদি-
একটা বড় পাখি সোঁ করে এসে পড়তেই দাঁতে দাঁত চেপে নেভিগেটর এদিক ওদিক
করে সামলে নিয়ে প্রফেসর বললেন, এমনি ভাবে তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এখানে এই নেভিগেটর কিন্তু তোমার গাড়ির স্টিয়ারিং খেয়াল রাখবে।
মিনিট দশেকের মধ্যেই বলরামপুর এসে গেল। যেটা আসতে ঢোলের কম করে আড়াই
ঘন্টা লাগত। উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, স্যার এত কম সময়ে চলে এলুম?
প্রফেসর এবার গ্রাভিটেশন বাড়িয়ে নিচে নামাতে লাগলেন। ঢোলের নির্দেশ মত
নেভিগেটরের স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে আর এক্সিলারেটর দিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণ করে নেমে
পড়লেন একেবারে ঢোলের মামার বাড়ির দরজায়।
কলিং বেলে বাজাতে মামাই খুলে দিল। ঢোলের সঙ্গে তার বন্ধু আর একজন অপরিচিত
লোককে দেখে প্রথমে অবাক হলেন। কিন্তু পরে প্রফেসরের পরিচয় পেয়ে আর বিজ্ঞানী
হিসেবে জানতে পেরে খাতির যত্ন যাকে বলে একেবারে সেই ‘নোজ নো বাউন্ড’ আর কি।
ঢোলের মামি গদগদ হয়ে প্রফেসরকে বললেন, স্যার যদি রাগ না করেন তো একটা কথা
বলি? প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের মেজাজ তো সর্বদাই চটিতং। তা বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে আর
কি বলবেন।
বললেন, "বলুন না দিদি? কি বলবেন?"
দিদি মানে ঢোলের মা বিগলিত হয়ে বলল, মানে ঢোলের মামা বড় বড় গলদা চিংড়ি
এনেছে। আমি যদি মালাইকারি রাঁধি- মানে ঢোল বলে আমি খারাপ রাঁধি না- মানে
আপনি যদি—
প্রফেসরের মেজাজ এখন খুব ঠান্ডা। মিশন বেশ খানিকটা সাকসেসফুল। দিলখুশ
হেসে বললেন, বেশ বেশ। পৌঁছতে তো লাগবে মাত্র দশ মিনিট। আপনার আদেশ
আর অমান্য করি কি করে বলুন?
এক সপ্তাহ পরের কথা। ডিরেক্টর কুঞ্জবিহারীর ফোন। আবার শুটিং হবে দুজনকে নিয়ে।
তাদের আকাশ পথের ভ্রমণ নিয়ে। প্রফেসরের স্ক্রিপ্ট লেখা হয়ে গেছে। নাম দিয়েছেন-
যথা ইচ্ছা তথা যা।
________________________________________
DR. ARUN CHATTOPADHYAY
181/44 G.T.ROAD (GANTIR BAGAN)
P.O. BAIDYABATI
DIST. HOOGHLY
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন