Featured Post
গল্প ।। দুর্গাপূজা ।। স্তুতি সরকার
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
দুর্গাপূজা
স্তুতি সরকার
মিনুর চোখেতে খুশির ঝিলিক।
বাবা আসছেন চণ্ডীগড় থেকে পাঁচ মাস পর। পূজোর ছুটিতে সবাই মিলে তাই যাওয়া হচ্ছে দেশেরবাড়িতে, অনেক দিন পরে পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে পূজোর দিনগুলো কাটাতে। কাকা, কাকিমা আর বাবানও আসছে ডিব্রুগড় থেকে। জেঠু, জেঠিমা, জাড়তুতো তিন দাদারা তো ওখানেই অর্থাৎ দেশের বাড়িতেই থাকেন। ছোট পিসি আসছে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে পিসেমশায় আর বাবলু ও টুবলু দাদার সঙ্গে। বড় পিসি আসছেন আসানসোল থেকে তিন দিদির সঙ্গে । সীতাদিদি, মিতা দিদি আর গীতা দিদি। ওরা তিন বোনই খুব ভালো গান করেন। বড়ো পিসেমশায় গত বছর মার্চ মাসে কোভিডে মারাগেছেন। অহল্যা বাড়ির জাগ্রত দুর্গা পূজো দেখতে মুখার্জি বাড়ির সকলেই আসেন প্রতি বছর পূজোর কটাদিন একসঙ্গে কাটাতে।
আশ্বিন মাস। চারি দিকে পূজো পূজো গন্ধ। কাশ ফুল দুলছে মাঠেঘাটে। একটু আগে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। মাটির থেকে সোঁদাসোঁদা গন্ধ উঠছে। ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে । আজ মহাষষ্ঠী। একচালা ঠাকুর। সাত্ত্বিক ভাবে বরাবর পূজো হয় এখানে।ঘরোয়া ভাবে নিয়ম মেনে, নিষ্ঠা সহকারে। দুতিনটে গ্রামের মধ্যে এই একটাই পূজো। কাজেই গ্রামবাসীদের সকলেই এখানেএকত্রিত হন, সুখ দুঃখের গল্প করেন। মা, জেঠি, কাকিমারা হাত লাগান পুজোর কাজে। সেই অন্ধকার থাকতে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে গরদের লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে ঠাকুর দালানে চলে আসেন সকলে। সপ্তমীর দিনে কলাবৌ স্নান করাতে ঠাকুর মশায় চলে যান ছোটো একটা কলাগাছ সঙ্গেনিয়ে সেই বড়ো দীঘির দিকে। সঙ্গে যায় ঢাকি , কাঁসর ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে ছোটো ছেলের দল। বাড়ির বড়ো আর কচিকাঁচার দল ও বাদ যায় না। কলা গাছকে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে বড়ো দীঘির জলে স্নান করাতে করাতে সুতির লাল পাড় সাদা শাড়িপরিয়ে দেন। কলা গাছের পাতাগুলোকে ঘোমটা দিয়ে অনেক নীচ পর্যন্ত শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে তাতে সিঁদুর দান করেকলাবৌতে পরিণত করা হয়। তারপর আবার কাঁসর ঘণ্টা ঢাক বাজাতে বাজাতে ফেরা। ছোটোদের উৎসাহ দেখবার মতো। অষ্টমীতে সন্ধি পুজো। এখানে পাঁঠা বলি নিষিদ্ধ। পরিবর্তে কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। মহা সমারোহে অষ্টমী পুজা সাঙ্গ করেই নবমীপুজার যোগাড়যন্ত্র করতে হবে। কারণ এবারে অষ্টমী নবমী একই দিনে পড়েছে। এবার ঢাকিতে যেন বাজে বিদায়ের সুর।সকালের মধ্যেই দশমী পড়ে গেলো যে। একটা দিন কম পাওয়া গেলো। বিকেল বিকেল সিঁদুর খেলা শেষ করে বিসর্জনের আয়োজন শুরু হয়। দেখতে দেখতে বিসর্জনের কাঠি ছুঁয়ে যায় ঢাকে। বলো দুগ্গা মাই কি জয়… শাঁখ, কাঁসর ঘন্টা ঢাক বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে বাড়ির বড়ো ছোটো সকলে ঠাকুরের সঙ্গে চলে প্রসেশান করে। তাদের সঙ্গে পাড়ার লোক, আশেপাশের পাড়ার সকলে যোগ দেন বিসর্জনের প্রসেশনে। বাড়িতে থেকে যান অশক্ত ঠাকুরমা, জেঠিমা, জ্যাঠামশাই । তাঁরা আভূমি নত হয়ে ঠাকুরপ্রণাম করে আশীর্বাদ চেয়ে চোখের জলে এবছরের মতো ঠাকুরকে বিদায় দেন। চণ্ডীমণ্ডপে প্রদীপ জ্বলতে থাকে। আসছে বছরআবার হবে.. বলে এ বছরের মতো পুজো সমাপ্ত হয়।
এবার যে যার ঘরে ফেরার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। অহল্যা বাড়ি আবার এক বছরের মতো নিঝুম পুরিতে পরিণত হয়।
_____________________________________________________________________________________
স্তুতি সরকার,
হাইল্যাণ্ড উইলোজ,
ব্লক-১, ফ্ল্যাট নং- ৫০৪,
নিউটাউন , একসান এরিয়া ২ বি,
কলকাতা- ৭০০ ১৫
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন