Featured Post
অণুগল্প ।। অলৌকিক জলযান ।। শংকর ব্রহ্ম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
অলৌকিক জলযান
শংকর ব্রহ্ম
প্রতিদিন সন্ধ্যায় মাণিক কারখানার কাজ শেষ করে, সেখান থেকে বন্ধুদের সঙ্গে একসাথে বাড়ি ফেরে। কিন্তু সেদিন কাজ বেশি থাকায়, দু'ঘন্টা ওভার টাইম কাজ করে, তার বাড়ি ফিরতে দেরী হয়ে যাবে বলে সে তার বন্ধুদের বিদায় জানাল।
কাজ শেষ করে, সেদিন বাড়ি ফিরতে তার বেশ রাতই হল।
কারখানা ছাড়ালেই শেওড়া বন। বনের শেষে নদী, ওপারে চাঁদপুর গ্রাম। সেখানে মানিকের বাড়ি।
বেশ রাত হয়ে গেছে। একা একা বনের ভিতর দিয়ে যেতে তার খুব ভয় করছে। নদী পেরিয়ে মাঠ থেকে মানিকের বাড়ি ফিরতে শাড়ি শাড়ি বাঁশঝাড় পড়ে। লোকে বলে সেখানে ভূত থাকে। গ্রামের অনেকের কাছে শুনেছে রাতের বেলা সেই ভূতগুলো বের হয়। যারা রাত করে একা বাড়ি ফেরে তাদের বাগে পেলে ঘাড় মটকে দেয়।
মাণিক নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, 'ভূত-প্রেত বলে দুনিয়ায় কিছু নেই। শুধু শুধু ভয় পেয়ে কাজ নেই। ভগবানের নাম নিয়ে রওনা দিই। কিছুই হবে না।'
এইভাবে মনে সাহস নিয়ে সে চলতে লাগল শ্যাওড়া বনের মধ্য দিয়ে । বন পার হতেই নদী। রাত হয়েছে। খেয়া নৌকা ঘাটে বাঁধা থাকলেও, কোন মাঝির দেখা পেল না সে ,শীতকালের সুনসান রাত। নদীর ওপাশে ঝোঁপ ঝাড়। ঝোঁপের মধ্যে বাঁশগুলো মট মট আওয়াজ করছে। অজান পাখির কর্কশ ডাক শুনে মনটা কেঁপে উঠে।
এর মধ্যে একটা ভটভটি ভটভট করে আওয়াজ তুলে এদিকেই আসছে দেখল সে। ভটভটিটা কাছে আসতেই মানিক দেখতে পেল একটি রোগা লিকলিকে লোক ভটভটিটা চালাচ্ছে। তার মনে ভয় কিছুটা দূর হল, মানুষের দেখা পেয়ে।
মনে মনে ভাবল, ভগবানই রাতের বেলা তার জন্য এই লোকটাকে ভটভটি দিয়ে পাঠিয়েছে।
লোকটি বলল, ' কোথায় যাবেন বাবু?
-ওই পাড়ে যাব।
-চলুন,আপনাকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসি।
-কত নেবে?
-সে আপনি যা খুশি হয় দেবেন।
তার গলা কেমন খনখনে শোনালো।
মানিক বলল, 'ঠিক আছে, চল যাই।' কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে লোকটি হাসল।
লোকটি বলল, 'আমি প্রতি রাতে মানুষের জন্য অপেক্ষা করি।'
মানিক বলল, 'কেন'?
-"না এমনি। রাতে মানুষের দেখা পাওয়া যায় না তো। কিন্তু আজ মানুষের দেখা পেয়েছি ", বলেই লোকটা ভটভটিটা ছেড়ে দিল। সেটি ততক্ষণে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে। মাণিক ভয়ে ভয়ে ভিতরে বসে রইল মনে একরাশ উৎকনাঠা নিয়ে। একসময় ভটভটি এসে এ'পারে থামল। মাণিক নামতে গিয়ে দেখল সে একা, আর কেউ নেই ভটভটিতে।
খুব ভয় পেল সে। মনে মনে রাম নাম জপতে জপতে সে বাড়ি পৌঁছাল।
আজকাল মাণিক নদী পেরিয়ে কারখানার কাজে যায় ঠিকই , তবে দেরী করে আর বাড়ি ফেরে না। বন্ধুদের সঙ্গে
একসাথেই বাড়ি ফেরে।
সেদিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মানিক কারখানায় যাওয়ার জন্য বের হওয়ার পর টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। কাক ভেজা হয়ে সে কারখানায় এসে দেখল, ওপার থেকে তার বন্ধুরা কেউ আজ আসেনি কাজে। তার মানে আজও তার একা ফিরতে হবে। তাই ভাবল দুপুরের পরই কারখানা থেকে বেরিয়ে পড়বে সে।
আকাশ এত মেঘলা যে দুপুরেরই যেন সন্ধ্যা নেমেছে।
ঘাটে একটা নৌকা আছে দেখে, সে স্বস্থি পেল মনে।
কিন্ত আশ্চর্য হল দেখে যে সেই একই লোক, সেদিন যে ভটভটি চালিয়ে এসেছিল।
সে আর কিছু না বলে ভিতরে গিয়ে বসে, লোকটাকে লক্ষ্য করতে লাগল। ওই রোগা শরীরে লোকটা স্বাভাবিক ভাবে দাঁড় টেনে চলেছে। মাণিক তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পেল না। তাই সে দু'পারের দৃশ্য দেখতে লাগল। আকাশ দেখল।
একসময় নৌকা এসে পারে ভিড়তেই, সে নামতে গিয়ে দেখে, সেদিনের মতো আজও নৌকায় কোন মাঝি নেই।
সে অবাক হয়ে নৌকাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনে পড়ে যায় ছোট বেলায় শোনা একটা গল্পের কথা।
ঈশ্বরের প্রেরিত দূতের সতর্কবাণী পৃথিবীর প্রাণীরা অমান্য করায় রুষ্ট হলেন ঈশ্বর-
"আমার সৃষ্ট মানুষকে আমি দুনিয়ার উপর থেকে মুছে ফেলব,আর তার সঙ্গে সমস্ত জীবজন্তু, বুকে-হাঁটা প্রাণী ও আকাশের পাখীও মুছে ফেলব। এই সব সৃষ্টি করেছি বলে আমার মনে অনুতাপ হচ্ছে।"
তাই তিনি নোয়াকে নির্দেশ দিলেন বিপুলায়তন এক জাহাজ নির্মাণের-
"তুমি গোফর কাঠ দিয়ে একটা জাহাজ তৈরি কর। তার মধ্যে কতগুলো কামরা থাকবে, আর সেই জাহাজের বাইরে এবং ভিতরে আলকাতরা দিয়ে লেপে দিবে। জাহাজটা তুমি এইভাবে তৈরি করবে, সেটা লম্বায় হবে তিনশো হাত, চওড়ায় পঞ্চাশ হাত, আর উচ্চতা হবে ত্রিশ হাত। জাহাজটার ছাদ থেকে নীচে এক হাত পর্যন্ত চারদিকে একটা খোলা জায়গা রাখবে আর দরজাটা হবে জাহাজের একপাশে। জাহাজটাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থাকবে। আর দেখ, আমি দুনিয়াতে এমন একটা বন্যার সৃষ্টি করব যাতে আসমানের নীচে যে সব প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছে তারা সব ধ্বংস হয়ে যাবে। দুনিয়ার সমস্ত প্রাণীই তাতে মারা পড়বে।"
"তুমি ও তোমার পরিবারের সবাই উঠবে ওই জাহাজে। আমি দেখতে পাচ্ছি, এখনকার লোকদের মধ্যে কেবল তুমিই সৎ। পশুর প্রত্যেক জাতের মধ্য থেকে স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে সাত জোড়া করে তোমার সঙ্গে নেবে, আর মানুষের মধ্য থেকেও স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে এক জোড়া নেবে। আকাশে উড়ে বেড়ায় এমন পাক-পাখীদের মধ্য থেকেও স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে সাত জোড়া করে তোমার সঙ্গে নেবে।"
অতঃপর চল্লিশ দিন চল্লিশ রাতের প্রলয়ংকরী ভারি বর্ষণ এবং প্লাবনে বাকি সকল জীব পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
মাণিক দেখল, অলৌকিক জলযানটি ক্রমে দূরে হারিয়ে যেতে লাগল।
----------------------------------------------------------------------------- [ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সূচিপত্র
সূচিপত্র
-
-
-
-
-
-
-
- প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জু...
- প্রবন্ধ ।। শিশুর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে...
- গল্প ।। মহাবিড়ালের দেশে ।। অরুণ চট্টোপাধ্যায়
- ছড়া ।। শারদীয় ।। নিরঞ্জন মণ্ডল
- ছোটোদের পাতা ।। ছড়া ।। বৃষ্টি ।। সুনিস্কা চক্রবর্তি
- ছোটদের পাতা ।। ছড়া।। পরিবেশ রত্ন করি যত্ন ।। সমৃদ...
- ছোটোদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় - ১০।। জুলাই ২০২২
- ক্যুইজ, ধাঁধা, শব্দখেলা, 10th issue: July 2022,
- ছড়া ।। তুচ্ছ জিনিস ।। বদ্রীনাথ পাল
- ছড়া ।। ভাবে খুকু ।। দীনেশ সরকার
- ছড়া ।। শহরেও আছি গ্রামেও আছি ।। চন্দন মিত্র
- ছড়া ।। কাঁঠাল ।। আনন্দ বক্সী
- কবিতা ।। ব্যস্ত ।। সুশান্ত সেন
- ছড়া ।। ওরে রাখাল ছেলে ।। জয়শ্রী সরকার
- ছড়া ।। ছড় রা ।। শুভাশিস দাশ
- ছড়া ।। বর্ষাদিনে ।। অজিত কুমার জানা
- কবিতা ।। ফোটার শব্দে ।। নীলমাধব প্রামাণিক
- ছড়া ।। দাদুর প্রেম ।। সাইফুল ইসলাম
- গল্প ।। দাঁতটা ভাঙাই ছিল ।। রণেশ রায়
- অণুগল্প ।। অলৌকিক জলযান ।। শংকর ব্রহ্ম
- ছড়া ।। মায়ের খোকা ।। সুদীপ ঘোষ
- কবিতা ।। সকালের ছোঁয়া ।। শাহীন খান
- ছড়া ।। ফল-কথা ।। অরবিন্দ পুরকাইত
- ছড়া ।। ফুচুর খাবার ।। অরুণ কুমার
- ছড়া ।। জল থই থই ।। সুব্রত চৌধুরী
- ছড়া । বাদলা রাতে ।। শীলা সোম
- ছড়া ।। জীবন গড়ো ।। গৌর গোপাল পাল
- কবিতা ।। এবার নামব আমি ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
- অণুগল্প ।। আকাশের রূপকথা ।। সিরাজুল ইসলাম ঢালী
- ছড়া ।। গল্পের দেশে ।। সায়নী আচার্য্য
- ছড়া ।। ছোটনদী ।। নির্মল কুমার দে
- ছড়া ।। এটা কোনো ছড়া নয় ।। গোবিন্দ মোদক
- ছোটগল্প ।। স্বপ্নপূরণ ।। মিঠুন মুখার্জী
- ছড়া ।। বাঁচবে ভবিষ্যৎ? ।। কার্ত্তিক মণ্ডল
- কবিতা ।। জ্ঞানের মর্ম ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
- ছড়া।। ছেলেটা ।। ঊষা মল্লিক
- ছড়া ।। ভূতের ছানা ।। কাশীনাথ হালদার
- ছড়া ।। গাঁয়ের উপকণ্ঠে ।। গোপা সোম
- ছড়া ।। বৃষ্টির দিনে ।। সুভাষ চন্দ্র রায়
- ছড়া ।। জন্মদিন ।। রূপালী মুখোপাধ্যায়
- কবিতা ।। আজব দেশ ।। রমলা মুখার্জী
- কবিতা ।। চাঁদে পাড়ি ।। রানু বর্মণ
- ছড়া ।। ছুটির দিন ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল
- ছড়া ।। দাও না মাগো ছুটি ।। জগদীশ মাল
-
-
-
-
-
-
-

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন