শিশুর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে হবে
বিভাস গুহ
শিশু এক অপার বিস্ময়। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এজন্য বলা হয় ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে। তাই প্রতিটি শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শিশুরা সঠিকভাবে যেন বেড়ে উঠে সে দায়িত্ব বাবা মা ভাই বোন পরিবারের সকলের এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের। কারণ শিশুর বেড়ে উঠার মাধ্যমে নির্ভর করবে শিশুর ভবিষ্যৎ আর শিশুর ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করবে দেশের ভবিষ্যৎ। শিশু জন্মগ্রহণের সাথে সাথে তার প্রতিভা বিকাশের সময় সুযোগ এবং পরিবেশ যদি নিশ্চিত করা যায় তবে সে শিশুর ভবিষ্যৎ সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল হবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে রাষ্ট্রের সকল শিশু বেড়ে উঠার সুস্থ পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের সন্তানেরা কিংবা এতিম শিশুরা পেটের দায়ে শিশুশ্রম অথবা ভিক্ষার থালা হাতে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে দুবেলা দুমুঠো অন্নের সন্ধানে। যে শিশুর এ বয়সে বিদ্যালয়ে গিয়ে মনের আনন্দে বইয়ের সাথে মিতালি করার কথা, অবসরে মাঠে ঘাটে প্রাণ খুলে খেলাধূলায় মেতে থাকার কথা, বেলা শেষে ঘরে ফিরে মায়ের আঁচল তলে আদর স্নেহ মমতা ভালবাসায় ডুবে শান্তিতে ঘুমানোর কথা সে শিশু আজ অভাবের তাড়নায় কিংবা মা বাবার অবহেলায়, হয়ত উদাসীনতায় বাধ্য হয়ে সামান্য কিছু রোজগারের আশায় পথে নেমে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির শতকরা ১৫ ভাগই শিশু। যেসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা কাজ করছে তন্মধ্যে রাজমিস্ত্রির হেলপার, গাড়ির হেলপার, রিক্সা শ্রমিক, হোটেল বয়, কুলি, হকার, গাড়ির গ্যারেজ, ইট ভাটা, ক্ষেত খামার, ফার্ম, ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের মাদক পাচারের মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা নিয়োজিত থেকে পরিবারের আর্থিক আয়ের জোগান দিচ্ছে।
যে বয়সে শিশুর হাসি আনন্দে মেতে ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্নে মেতে থাকার সময় সে বয়সে অবুঝ শিশুরা পথে পথে গাড়ির স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে ঘুরে বিপদ আপদকে উপেক্ষা করে সামান্য কিছু অর্থের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। যে বয়সে শিশুর পরিবারের আনন্দে উৎসাহ উদ্দীপনায় নানারকম স্বপ্ন বুনে বেড়ে উঠার সময়, যে বয়সে শিশুর বন্ধুদের সাথে মাঠে ময়দানে ফুটবল ক্রিকেট নিয়ে রোনালদো মেসি শচীন হবার স্বপ্ন গড়ার সময়, যে বয়সে শিশুর বই খাতা নিয়ে মনের আনন্দে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠে মনোনিবেশের সময় সে বয়সে শিশু পেটের দায়ে অভাবের তাড়নায় রাস্তায়!
এর দায় কার? আমার আপনার সকলের নয় কী? যদিও আমরা মধ্যম আয়ের দেশ বলে স্বীকৃতি লাভ করেছি কিন্তু আমাদের সমাজের কিছুটা অংশ এখনও দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। দিনের ভাত দিনে খেতে পারে না। ভূপেন হাজারিকার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হচ্ছে- "আমি তো দেখেছি প্রাচীন অট্টালিকার সারি তার ছায়াতেই দেখেছি অনেক গৃহহীন নরনারী।" সে গৃহহীন নরনারীরা কিন্তু অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। আমরা অনেকে সাধ্য থাকা সত্ত্বেও দেখেও না দেখার ভান করে তাদেরকে এড়িয়ে যাচ্ছি। তাতে সামগ্রিকভাবে সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারের চেষ্টার ত্রুটি নেই কিন্তু রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক হিসাবেও আমাদের দায় দায়িত্ব রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি আমরা সাধারণ নাগরিকরাও যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দায়িত্ব নিয়ে থাকি তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রভূত কল্যাণ হবে এবং সরকারের যে টার্গেট সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা এবং শিশুশ্রম রোধ করা সেটাও নিশ্চিত হবে। আর যদি না পারি তবে কবি সুকান্তের বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দিতে পারব না।
"বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।"
কবির সে অঙ্গীকার আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি তা আজ ভাববার বিষয়?
__________________________________________________________________________________
বিভাস গুহ
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন