Featured Post
গল্প ।। দাঁতটা ভাঙাই ছিল ।। রণেশ রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
দাঁতটা ভাঙাই ছিল
রণেশ রায়
কলকাতা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে আধা শহর একটা অঞ্চলে আমাদের যৌথ পরিবার। পাঁচ ভাই বাবা মা আর আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে জনা পনেরোর বাস। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চাকুরীর স্বার্থে কখনও কখনও ভিন প্রদেশে কখনও কখনও এখানে এ বাড়িতে। তার সঙ্গে আমাদের দিদি আর বোন, তাদের ছেলেমেয়ে বাড়ির জামাইদের ধরলে সংখ্যাটা কুড়ি বাইশ হয়ে যায়। সবাই একসঙ্গে হলে বাড়ির সঙ্গে পুরো পাড়াটা সরগরম হয়ে ওঠে ছেলেমেয়েদের বন্ধুবান্ধবের সমাবেশে। দেখা যায় এ বাড়িতে প্রায়ই সবাই একজোট হয়। কুঁচে কাঁচারা জানে না তারা নিজেদের ভাই বোন না জ্যাঠতুতো পিসতুতো না খুড়তোতো। তারা একজোট হলে তো কথাই নেই। মায়েদের প্রাণ অতিষ্ঠ। দাদু দিদা দুজনের অপার স্নেহে প্রশ্রয়ে তারা লাগামহীন। এরই মধ্যে দাদু বেশ রাশ ভারী। তার প্রশ্রয়টা ফল্গুধারা। বাইরে তেমন প্রকাশ নেই। বরং তার বকাবকির ভয়ে বাড়ির বৌ ছেলেমেয়েরা তঠস্ত। আবার শিশুদের মধ্যে ছোট মেয়ের মেয়ে কলির প্রতি একটু যেন বেশি পক্ষপাতিত্ব। বাঙালি পরিবারের এটা বৈশিষ্ট্য। মেয়েদের কল্যানে মেয়ের ঘরের নাতি নাতনিদের প্রতি আনুকূল্য।
আমাদের পাঁচ ভাইয়ের ছোটবোন রুমা বাড়ির মধ্যমণি। রুমা বলতে সবাই অজ্ঞান। তার মেয়ে কলি যে আমাদের আদরের দুলালী হবে তা নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠে না। আর দিদি বাড়ির অভিভাবক। আমার দাদা তো সারাদিন অমিতাভ বচ্চনকে নকল করে হেরে গলায় গেয়ে যায়, " ফুলকলি রে ফুলকলি বলতো এটা কোন গলি"। আমার আবার তেমন আদিখ্যেতা নেই। আমি ওদের কাছে একজন সিরিয়াস মামু বা কাকু জ্যেঠু। অন্য ভাইয়েরা দাদার অনুগামী। বাচ্চাদের ভাই বোনের মধ্যে ঝগড়া খুনটুসি লেগেই থাকে। এদের মধ্যে কলি আমার ছেলে ভোলা আর ভাইয়ের মেয়ে বুটু মাথায় মাথায়। অন্যেরা একটু বড় দাদা বা দিদির বয়েসী আরেকটা গ্ৰুপ। এই কঁচি কাঁচারা একসঙ্গে সারাদিন ঝগড়া তামাসায় যুক্ত। দাদুকে সমীহ করে চলতে হয় যেন না খেপে। যতক্ষণ তিনি না খেপেন ততক্ষণ ভালো, ওদের অবাধ দৌরাত্ম। দিদার কাছে যত আবদার। লুচি তরকারি থেকে পায়েস পিঠে। বাচ্চাদের মধ্যে আমার ছেলে ভোলা আবার হাতে কলমে দুষ্টু। কলি তেমন দুষ্টু নয়। আর বুটুও দুষ্টু নয়। তবে ওকে ভোলার সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতে হয় বলে ভোলার ঘুষি পাকানোকে ভয় পেতে হয়। আর দাদুর ভোলার ওপর সতর্ক দৃষ্টি। কলি এখানে অতিথি বলে ওর অবাধ রাজত্ব। দাদুকে ওর সমীহ করার দরকার হয় না। ছোট মেয়ের কন্যা হয়ে সে যে ছাড় পায় তার দৌলতে দাদুর ওপর ওর খবরদারি। তবে বুটু ভোলার থেকে এক ইঞ্চি বড় হওয়ায় ওদের প্রতি ও করুনায় বিগলিত। ওদের স্নেহের পাত্রপাত্রী বলেই বিচার করে। তবে তিনজনের মধ্যে বিবাদ আবাদ নিয়েই ওদের চলে।
একদিন রোজের মতোই কি কারণে কলি ভোলার বিবাদ। বুটু তাতে মজা পায়। প্রথমে কথা কাটাকাটি তারপর হাতাহাতি। হাতাহাতিতে কলি সব সময় যে হাত গুটিয়ে থাকে তা নয়। আর ও জানে ওদের বিবাদে দাদু ওর সঙ্গী। তবে ভোলার মুষ্টি আস্ফালনকে ও একটু ভয় করে। সেদিন ওদের মুখের ঝগড়া হাতে গড়ায়। আর দাদু ঘরে, দেখতে পাচ্ছে না বলে ভোলার পোয়া বারো। সে এক ঘুষি চালিয়ে দেয় কলির মুখে। দাঁতে লেগে কলির দাঁত যায় পড়ে। সে কেঁদে ওঠে। ওর কান্না শুনে ঘর থেকে দাদুর গর্জন। তিনি তার চিরসঙ্গী মুগুরটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে ওঠেন, " কি হইলো ?" জানা যায় দাদু যখন যুবক তখন থেকে তার হাতিয়ার এই মুগুর। তিনি যেমন তার শরীর চর্চায় এই মুগুরের সাহায্য নিতেন তেমনি নিজেকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে এই মুগুর ছিল তার অনুগত সাথী। মুগুরটা নাকি তার হাতে বিভিন্ন মুদ্রায় নাচত। ভোলা সিঁদুরে মেঘ দেখে। দাদু আন্দাজ করেছে বুঝে দৌড়ে পালায়। মুগুর হাতে দাদুর হম্বিতম্বি, "আসুক দেইখ্যা নিবাম, আইজ তরি কি আমারি কি" কলি বিব্রত বোধ করে। সর্বনাশ! যদি এই মুগুর ভোলার ঘাড়ে পড়ে। এবার তার আদরের ভাইয়ের কপালে কি আছে? সে শংকিত হয়ে ওঠে। তার দাঁতের দুঃখ উবে যায়। সে ভাবে তার জন্যই ভাইয়ের এ বিপত্তি। ওকে কি করে রক্ষা করা যায়! দাদু জেনে গেছে ওর দাঁত ভেঙে গেছে। আর এটা ঘটিয়েছে শ্রীমান ভোলা। কলি মরিয়া, কি করে ভাইকে বাঁচাবে? সে সোজা উঠে দাঁড়ায়। দাদুর কাছে গিয়ে মুগুরটা চেপে ধরে তার দাদুকে শাসানি " কি করছো চেঁচাচ্ছ কেন? আমার দাঁতটা নড়া ছিল ওটা এমনিতেই পড়ে গেছে। এর জন্য চেঁচাবার কি আছে? ওটা কি হাতে? দাদু আদুরে নাতনির শাসানিতে চুপ, "চোরের সাক্ষী গাঁট কাটা" বলতে বলতে ঘরের বিছানায় আশ্রয় নেন। অন্তরাল থেকে ভোলা বেরিয়ে এসে কলির কাছে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। সবাই কলির কি হয়েছে জানতে ছুটে আসে।
_____________________________________________
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন