Featured Post
গল্প ।। মহাবিড়ালের দেশে ।। অরুণ চট্টোপাধ্যায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ঢোলগোবিন্দের কড়চা
মহাবিড়ালের দেশে
অরুণ চট্টোপাধ্যায়
ঢোল আর গোবিন্দ এখন প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের নিত্য সহচর। তিনি হলেন গুরুর মত। তার ডাক ডাক কি উপেক্ষা করা যায়? এখন নিত্য মানে রোজ নাও হতে পারে, কিন্তু দশ পনের দিন বা বড় জোর মাসখানেকের মধ্যে। প্রফেসরের এখন নিজের গাড়ি। এ গাড়ি আকাশে ওড়ে। আবার সম্প্রতি মাটিতেও যাতে যায় তার একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আবার চিন্তা আছে জলেও ভাসাবার। তাই এখানে ওখানে যখন খুশি যাওয়ার কোনও অসুবিধে তার নেই। আর তার নেই মানে তার দুই সহকারীরও নেই।
প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস ঠিক করেছেন এবার একটা গবেষণা করবেন। সেই মত সরকারের কাছ থেকে একটা গোটা জঙ্গল কিনে নিয়েছেন। এই জঙ্গল তিনি প্রতিপালন করবেন। মানে জঙ্গলের সব গাছপালা পশুপাখী এই সব। টাকার তো এখন তাঁর কোনও অভাব নেই। কারণ তাঁর আবিষ্কার নিয়ে তাঁর আর দুই বন্ধু ঢোলগোবিন্দেকে অভিনেতা সাজিয়ে ডিরেক্টর কুঞ্জবিহারী যে সিনেমাগুলি করেন তার প্রচুর দর্শক। আর আজকাল কল্পবিজ্ঞান লোকে খুব পছন্দ করছে। তাই হল একেবারে ফেটে পড়ছে। আর মোটা রয়ালটি পেয়ে প্রফেসরের পকেটও ফেটে পড়ছে।
বেশ কিছুদিন প্রফেসর একেবারে চুপচাপ। ঢোলগোবিন্দকে পর্যন্ত ডেকে পাঠান না। ঢোলগোবিন্দের আর ভাল লাগে না। বড় অস্থির হয়ে পড়েছে তারা। প্রায় ছ'মাস হয়ে গেল কিন্তু ক্ষেপচুরিয়াসের কাছ থেকে কোনও ডাক নেই। দুজনেই মনমরা হয়ে ভাবছে তারা কিছু কি দোষ করে ফেলল যে প্রফেসর ক্ষেপে গেলেন তাদের ওপর? ]
এক সকালে ডাক পড়ল। দুজনের। দুজনেই নাচতে নাচতে গিয়ে হাজির।
--জঙ্গলে যেতে হবে। পারবে তো?
ঢোল বলল, অরোরা বোরিওলিস স্যার?
গোবিন্দ বলল, ধুর সে তো থাকে মেরুদেশে। বনে-জংগলে কেন থাকবে?
ঢোল বলল, দেখলি না সেবারে জঙ্গলে সেই মেরুজ্যোতিকে? সেই যে দামি দামি পশু চুরি করছিল একদল লোক।
দুপক্ষকেই থামালেন প্রফেসর, দেখ সেটা মেরুজ্যতি ছিল না।
গোবিন্দ বলল, তবে কী স্যার?
-দেখ ওটা তো ছিল কৃত্রিম। মানে মানুষের বানানো। ওর কোনও নাম হয় না। আমি ওর নাম দিয়েছি বনজ্যোতি। মানে ফরেস্ট ফ্ল্যাশ। আশা করি এতদিনে তোমরা ইংরেজি কিছুটা শিখে গেছ?
ঢোল উৎসাহের সঙ্গে চেঁচিয়ে বলল, হ্যাঁ স্যার।
গোবিন্দ ঢোলের দিকে তাকিয়ে বলল, ইংরিজিতে বল স্যার খুশি হবে। বল ইয়েস স্যার।
তারা দুজনে সমস্বরে বলে উঠল, ইয়েস স্যার।
প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস না ক্ষেপে গিয়ে হেসে বললেন, তো চল। লেট আস স্টার্ট শার্প।
এবার তিনটে ছোট গাড়ির বদলে একটা বড় আকাশ গাড়ি বানিয়েছেন প্রফেসর। সেটা চড়ে উঠে গেলেন আকাশে। এখন এই গাড়ি আর হাতে চালাতে হয় না। শুধু মুখে বলে দিলেই হবে। ঠিক গুগল ভয়েস রাইটারের মত।
প্রফেসর বললেন, স্টার্ট।
অমনি ইঞ্জিন স্টার্ট হয়ে গেল। প্রফেসর বললেন, আপ।
অমনি গাড়ি উঠে গেল আকাশে। প্রফেসর যেই বললেন, স্টপ। গাড়ি থেমে গেল। প্রফেসর বললেন, জি-পি-এস অন। অমনি সামনে মনিটরে জিপিএস চলে এল।
প্রফেসর বললেন, গো এহেড। গাড়ি সামনে চলল। প্রফেসর বললেন, টার্ন রাইট অমনি সে ডানদিকে চলল। এমনি ভাবে লেফট টার্ন হয়। আবার যখন অটোপাইলটে চালাবার ইচ্ছে হল তখন প্রফেসর নির্দেশ দিলেন, ফলো জিপিএস। মানে জিপিএস ধরে এগোও।
গাড়ি জিপিএসের দিক নির্দেশে চলতে লাগল। দুই বন্ধু হাততালি দিয়ে বলল, স্যার এখন আর আপনাকে কিছু করতে হয় না। দারুন।
প্রফেসর বললেন, গাড়িতে একটা সেন্সর লাগানো আছে। সামনে কোনও বাধা দেখলেই সে নিজে থেকেই বামে, ডানে, ওপরে বা নিচে চলে যাবে বাধাকে ডিঙিয়ে নেবে। আর যদি একেবারেই ডিঙ্গোন না যায় তো থেমে গিয়ে পিঁ পিঁ করে আওয়াজ দিতে থাকবে। তখন আবার আমাকে জট ছাড়িয়ে দিক ঠিক করে দিতে হবে। এটা তখন ম্যানুয়াল হবে।
যাই হোক একটু পরেই গাড়ি এসে ঢুকল এক বিরাট জঙ্গলে। বিশাল বড় বড় আকাশ ছোঁয়া গাছে জায়গাটা একেবারে অন্ধকার হয়ে গেছে। কত রকমের গাছ। তারা সব গাছের নাম পর্যন্ত জানে না।
তবে সব জায়গা তো আর সমান নয়। বেশ কিছুটা যেতে এখানে একটু ফাঁকা জায়গাও পাওয়া গেল। এখানে গাছের সংখ্যা কম। অন্ধকার কম আলো বেশি। আকাশের বেশ কিছুটা দেখা যাচ্ছে।
গাড়িটা নিচে নামছে। দুজনের বেশ মজা লাগছে। জঙ্গলে নেমে কত কিছু দেখবে। বেশ বড় ফাঁকা একটা জায়গা দেখে তাদের মনে হল এখানে বেশ খেলা যাবে। পরক্ষণেই মনে হল ইস ব্যাট বল বা ব্যাট মিন্টনের ব্যাট কিছুই তো আনা হল না।
তাদের মনের ভাব বুঝে নিয়ে প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস বললেন, এখানে আমরা একটা মিশনে এসেছি পিকনিক করতে নয় কিন্তু। মিশন বোঝ?
ঢোল মাথা চুলকোল। গোবিন্দ সোৎসাহে বলল, হ্যাঁ স্যার। এই যেমন রামকৃষ্ণ মিশন-
প্রফেসর গম্ভীর হলেন। ঢোলগোবিন্দের মনে হল এটা ক্ষেপে যাবার আগের স্টেজও হতে পারে।
-এ মিশন সে মিশন নয় গোবিন্দ। এ মিশনের মানে হল কোনও বিশেষ কাজের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তির কার্যপালনের অঙ্গীকার বদ্ধ হওয়া।
ঢোল চোখ বড় বড় করে বলল, এখানে আমরা বেড়াতে আসি নি স্যার?
গোবিন্দ বলল। সেই বিশেষ কাজটা কী স্যার?
প্রফেসর বললেন, ক্রমে ক্রমে স্পষ্ট হবে। এখন চুপ করে বসে থাক। নামার প্রস্তুতি চলছে।
কিন্তু গাড়ি মাটি ছোঁয়ার আগেই একটা অদ্ভুত জিনিস দেখে তাদের চক্ষু চড়ক গাছ একেবারে। এখানে ওখানে শুয়ে আছে বিশাল আকারের—
ঢোল ভয় পেয়ে বলল, গোবিন্দ ওগুলো দেখেছিস?
গোবিন্দ বলল, আরিব্বাস এগুলো এত বড়।
-দেখ দেখ দেখতে একেবারে নিরীহ বেড়ালের মত।
প্রফেসর বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ এগুলো বেড়ালই তো। এগুলো হল মহা বিড়াল।
ঢোল বলল, স্যার এগুলো কামড়াবে না তো?
গোবিন্দ হেসে উঠল খুব জোরে, তুই বড্ড ভীতু ঢোল। বেড়াল কখনও কামড়ায়?
ঢোল ভয়ে কেঁপে উঠল, ওরে গোবিন্দ এগুলো বেড়াল নয় এরা যে মহাবেড়াল।
প্রফেসর মুচকি হেসে বললেন, সো হোয়াট? তাতে কী ঢোল?
-স্যার বেড়ালের শুধু দাঁত থাকে আর--
--মহা বেড়ালের থাকবে মহা দাঁত। বিরাট বড় বড় আর ধারাল।
গোবিন্দের কথায় বেশ খুশি ঢোল। স্যার না বুঝতে পারুক বিপদটা গোবিন্দ অন্তত বুঝেছে।
-না না তোমরা ভুল বুঝেছ এদের। স্যার মানে প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস বললেন, এরা খুব শান্ত জীব। যেমন ঘরের বেড়ালেরা হয় কী। তবে এরা মাছ খেতে খুব ভালবাসে আর আমি মাছ সঙ্গে এনেছি।
এতক্ষণে লক্ষ পড়ল এদের। স্যারের সঙ্গে একটা বিরাট ব্যাগ। স্যার সেই ব্যাগ খুলতেই বিরাট বড় বড় মাছ। অন্তত কেজি দশেক তো হবেই। এটা অবশ্য বয়ে এনেছে ঢোল আর গোবিন্দ হাত ধরা ধরি করে। প্রথমে ভেবেছিল এতে বোধহয় তাদের খাবার মানে মিষ্টি আইস স্ক্রিম এসব আছে। কিন্তু ব্যাগের মুখ খুলতেই আঁশটে গন্ধে তাদের বমি আসতে লাগল।
ব্যাগের খোলা মুখ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েছে এক সের দেড় সের ওজনের সব মাছ। সেটা দেখে হোক বা না হোক তাঁর গন্ধ শুঁকেই চঞ্চল হয়েছে মহাবিড়ালের দল। তাদের গলা দিয়ে বেড়ালের মত ঘড় ঘড় করে আওয়াজ আসছে।
ঢোল চেঁচিয়ে বলল, বাপ রে কী আওয়াজ! বেড়ালের এমন আওয়াজ হয়?
--বেড়াল নয় ঢোল মহাবেড়াল। ভুল সংশোধন করে দিল গোবিন্দ।
মাছের গন্ধ পেয়েই বাদামি রঙের বেড়ালটা দৌড়ে এসে গেছে ঢোলের কাছে।
-স্যা-স্যা-স্যা---র র র র—
ভয়ে ঢোলের আওয়াজ এমন বিকৃত হয়ে গেছে।
-দূরে ছুঁড়ে দাও- দূরে ছুঁড়ে দাও। মাছটা দূরে ছুড়ে দাও। প্রফেসরের চিৎকারে টনক নড়ল ঢোলের। সে হাতের মাছটা যতটা সম্ভব দূরে ছুঁড়ে দিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটা কড়মড় করে খেয়েই আবার ছুটে এল ঢোলের কাছে।
এদিকে গোবিন্দ চুপ করে ঢোল আর মহা বিড়ালের এই মাছ মাছ খেলা দেখছিল। বেশ মজা লাগছিল তার। ঢোলের মুখের ভয়ের চিহ্ন দেখে তার হাসি পাচ্ছিল। আশ্চর্য ছেলে বটে তো ঢোল। সামান্য একটা বেড়ালকে দেখে তার এত ভয়?
হাঁ করে মজা দেখছিল গোবিন্দ। হাতে তার একটা বেশ বড় মাছ। দূরে ছুঁড়ে দেবে বলে মাথার ওপর তুলে রেখেছে। তোলাই আছে ঢোলের কান্ড দেখে ছুঁড়তে ভুলে গেছে। এমন সময় পায়ের আঙুলগুলোতে শুড়শুড়ি লাগল। প্রথমে সামান্য চমকে গেলেও পরে বেশ ভাল লাগল। তারপর গায়ের সামনে একটা লোমশ কিছুর অনুভূতি। কানের সামনে ফোঁস ফোঁস করে জোর নিঃশ্বাস আর ঘড়র ঘড়র করে আওয়াজ। এ আওয়াজ চেনা মনে হল তার। চমকে তাকাল নিজের পাশে। তার ঘাড়ের পাশেই নিঃশ্বাস ফেলছে বিরাট চেহারার ফোলা সাদা মহাবিড়াল একটা।
দৌড় দৌড় আর দৌড়। তার পেছন পেছন দৌড় সেই মহাবেড়ালের। সে এক ম্যারাথন দৌড়। তবে না সোজা রাস্তায় না গোল হয়ে। এদিকে সেদিকে যেদিকে পারছে ঢোলের পালিয়ে বেড়াবার প্রচেষ্টা। আর পেছনে পেছনে মহাবিড়ালের তাকে ধরার মরণ পণ ছুট।
গোবিন্দের মুখ একেবারে সাদা হয়ে গেছে ভয়ে। যদি মাছ না পেয়ে বেড়ালটা তাকে আঁচড়ে কামড়ে দেয়? মাছ না থাকলেও মাছের গন্ধে যে ভরে আছে তার সারা গা। এখুনি না এই মহা বেড়াল তার গায়ে লাফিয়ে পড়ে সারা গা চাটতে না শুরু করে। ওরে বাবারে বেড়ালের জিভে যদি কাঁটা থাকে? তবে তো তার সারা গা একেবারে ছড়ে কেটে রক্ত বেরোতে শুরু করে দেবে।
মাছ না থাকলে মানে? হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল হাতের মাছটার কথা। মাথার ওপর উঁচু করা তার হাতে তো এখনও দেড়সেরি মাছটা ধরা আছে। তার মানে তার গায়ের আঁশটে গন্ধের জন্যে নয় হাতের এই মাছটার জন্যেই তার পিছু ছাড়ছে না মহাবিড়ালটা।
এই সময় ঢোল আর প্রফেসর দুজনে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন গোবিন্দ আর মহাবেড়ালের এই কান্ড। ঢোল দারুন মজা পাচ্ছে। হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করছে গোবিন্দকে। আর প্রফেসর চেয়ে আছেন আশংকার চোখে।
--মাছটা দূরে ছুঁড়ে দাও গোবিন্দ। চিৎকার করে বললেন প্রফেসর।
যতদূর পারে মাছ দূরে ছুঁড়ে দিয়েই গোবিন্দ ছুটে আসে যেখানে ব্যাগ ছিল সেখানেই। তারপর রাগ আর ভয়ের চোটে মাছভর্তি ব্যাগটা মাথার ওপর তুলেই ছুঁড়ে দেয় দূরে। অমনি মহাবিড়ালের দল ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই ব্যাগের ওপর।
মহাবিড়ালেরা মনের আনন্দে খাচ্ছে। ঢোল আর গোবিন্দের কিছুমাত্র সন্দেহ রইল না যে তারা বেড়ালই। এত মাছ খেতে ভালবাসে তারা বেড়াল ছাড়া আর কী?
কিন্তু মাছ শেষ। আর একটাও নেই পরে। ঢোল প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে গোবিন্দ বলল, স্যার আর তো মাছ নেই? এবার কী হবে?
গোবিন্দ বলল, কী আবার হবে? ওদের পেট ভরে গেছে। ওরা আর বায়না করবে না।
প্রফেসর বললেন, মনে হচ্ছে ঠিক তাই। ওরা এবার বিশ্রাম করবে। চল আমরা যাই।
ওরা অবাক হয়ে বলল, কোথায় স্যার?
-ওরা মাছ খেতে ব্যস্ত। এই ফাঁকে আমরাও একটু বিশ্রাম করি।
দুজনেরই এখন পেট চুঁই চুঁই করছে। ওদের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন মনের ভাব। প্রফেসর আশ্বাস দিলেন, হবে হবে। খাবার দাবার আইসক্রিম সব আছে।
আকাশগাড়ি আবার প্রস্তুত হল। তিনজনে উঠে পড়ল সে গাড়িতে। গাড়িতে প্রফেসর নিয়ে এসেছিলেন একটা বিরাট গালিচা। সেই গালিচার চার কোণ দড়ি দিয়ে বাঁধা হল চারটে গাছে। সুন্দর এক ঝুলন্ত বসার জায়গা হয়ে গেল। এখানে মহাবেড়ালেরা উঠে আসতে পারবে না।
সুন্দর পরোটা, আলুর দম, মিষ্টি আর আইসক্রিম। এইজন্যেই ক্ষেপচুরিয়াসকে বেশ ভাল লাগে ঢোলগোবিন্দের। নিজেও খেতে ভালবাসেন আবার খাওয়াতেও। খেতে খেতেই বলছেন এক অদ্ভুত গল্প।
-এই জঙ্গলে আগে বাঘ থাকত। একসঙ্গে অনেক।
দুজনেই চমকে উঠল। ভাল করে গালিচা আঁকড়ে না ধরলে পড়েই যেত।
-আর এখন? ঢোল জিজ্ঞেস করল।
প্রফেসর মিষ্টি হেসে বললেন, দেখতেই তো পাচ্ছ?
-বেড়াল? মহাবিড়াল? কেমন যেন চিঁ চিঁ করে বলল গোবিন্দ।
ঢোল চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, তারা সব গেল কোথায় স্যার?
প্রফেসর আবার বললেন, দেখতেই তো পাচ্ছ নাকি?
গোবিন্দ বলল, তার মানে-স্যার?
-হ্যাঁ তারাই এখন মহাবিড়াল হয়েছে। আকারটা খানিক পালটে বেড়ালের মত হলেও চেহারাটা আর বাঘের মত নেই। আর নেই স্বভাবটাও। ওরা এখন খুব নিরীহ প্রাণী। মাংসের বদলে মাছ খায়।
গোবিন্দ বলল, ওরে বাবারে। এর যে আমাদের পুকুরের সব মাছ শেষ করে দেবে স্যার। আমরা খাব কী?
--চিন্তার কী আছে এই জঙ্গলেই পুকুর বানিয়ে দেব। মাছের চাষ হবে—
গোবিন্দ বলল, ওরা মারবে আর খাবে?
প্রফেসর হেসে বললেন, হ্যাঁ।
ঢোল বলল, এটা কি হতে পারে স্যার? বাঘের এই বেড়াল হয়ে যাওয়াটা?
গোবিন্দ মনে করিয়ে দিল, বেড়াল নয় ঢোল। বল মহাবেড়াল।
ঢোল মাথা নাড়ল, ঠিক ঠিক।
-কেন হতে পারে না? হওয়ালেই হতে পারে। জানোই তো বায়োলজির দিক থেকে দেখতে গেলে বেড়াল আর বাঘ এক গোত্রের?
গোবিন্দ বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ ঐ জন্যেই বাঘের—
--মাসি। ঢোল বাকিটা বলে দিল।
খাওয়া দাওয়ার পর আবার মাটিতে নামা হল। মহাবিড়ালেরা তখন জঙ্গলের ভেতরে কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। দেখাই যাচ্ছে না তাদের। প্রফেসর বললেন তাঁর এখানে আসার কারণ।
--আসলে আমি এই পরীক্ষাটা করতে চেয়েছি। তাই আমাকে সরকার অনুমতি দিয়েছে। আর যদি সত্যিই এদের স্বভাব বদলে যায় মানে এরা বেড়ালের মত অহিংস হতে পারে কিনা। আজ তো দেখলে তোমরা নিজে চোখে?
দুজনেই বলল, হ্যাঁ স্যার। দেখলাম। বাঘ কিনা বেড়াল হয়ে গেল। কি অবাক কান্ড!
-আর একটা পরীক্ষা কেবল বাকি আছে।
কথাটা বলে পকেট থেকে একটা ছোট্ট টেপ রেকর্ডার বার করলেন প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস। টেপ অন করলেন। তীব্র আওয়াজ করে একটা ছাগল চিৎকার করে উঠল তার ভেতর থেকে, ম্যা- অ্যা অ্যা অ্যা ---
ঢোল আর গোবিন্দ দুজনেই আশে পাশে তাকিয়ে ভেবেই পেল না ছাগল কোথা থেকে এল।
--ওখান থেকে। হাতের তর্জনী দিয়ে দেখিয়ে দিলেন প্রফেসর টেপ রেকর্ডারটার দিকে। মানে এটা রেকর্ড করা ডাক মাত্র।
জঙ্গলে যেন ভূমিকম্প হল। আকাশে একটা কেমন প্রকান্ড ছায়া ভাসতে দেখা গেল। প্রফেসর ভাল করে তাকিয়ে বুঝলেন এগুলো এমনি ছায়া নয়। গোট তিনচার মহাবিড়াল লাফ মেরেছে একেবারে টেপ রেকর্ডারের দিকে। আর একেবারে বাঘের মত লাফ। জঙ্গল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে আরও।
প্রফেসরের ঠিক মাথার ওপর ছায়াটা। ঠিক মাথার ওপর। টেপের ছাগলটা চেঁচিয়েই যাচ্ছে। প্রফেসরও একটা লাফ মারলেন। লাফটা ঠিক তাঁর আকাশগাড়ির দিকে। কিন্তু সে গাড়ি ততক্ষণে আকাশে উঠে গেছে। ঢোল আর গোবিন্দ দুজনেই গাড়ি নিয়ে পাড়ি দিয়েছে আকাশের দিকে। আর একটা লাফ মারলেন প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস।
সেই লাফে তিনি পৌঁছে গেলেন আকাশগাড়ির নিচের আংঙটা দুটোয়। চেপে ধরতে পেরেছেন অবশেষে। সেই মহাবিড়ালগুলো ততক্ষণে মহা হুংকার ছেড়েছে। একেবারে বাঘের মত।
এর মাসখানেক পরের কথা। ডিরেক্টর কুঞ্জবিহারী খবর দিয়েছেন। ওনার সাম্প্রতিক ছবি প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস আর ঢোলগোবিন্দকে নিয়ে। স্ক্রিপ্ট তো প্রফেসরেরই। উনি নাম দিয়েছেনঃ স্বভাব যায় না মলে।
________________________________________________________
(ডাঃ) অরুণ চট্টোপাধ্যায়
181/44 G.T.ROAD (GANTIR BAGAN)
P.O. BAIDYABATI
DIST. HOOGHLY (PIN 712222)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন