Featured Post
অণুগল্প ।। ঘুড়ি ।। আবদুস সালাম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
অসীমদের বাড়ির কাজের ছেলে টুকলু।
অসীম রোজ বিকেলে পড়ার পরে ছাদে ঘুড়ি ওড়াই। দারুণ লাগে টুকলুর। ওর মনটা ও ঘুড়ির সাথে উড়তে থাকে । অসীমের ঘুড়ি কেমন মাতালের মতো উলট পালট করে ।
মালিকের ছেলের ঘুড়ি ওড়ানো দেখেই তার স্বাদ মিটিয়ে নেয়।
টুকলুদের পয়সা নাই । ওরা খুব গরিব । ওর মা অসুস্থ । ওর বাবা রাজমিস্ত্রির কাজে বাইরে রায় ।ওদের খুব অভাব।
তাইতো টুকলুর পড়তে যাওয়া হয়না।পরের বাড়িতে কাজ করতে যেতে হচ্ছে। এই সময়টা ছেলেদের খেলে বেড়ানোর সময়।তা নয় টুকলু কে পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালানোর দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে হচ্ছে ।
কাজ শেষ করে বাড়ি গিয়ে মার কাছে রোজ বায়না করে "মা একটো গুড্ডি কিনি দিস্ ক্যানে।মা হামার যা গুড্ডি উড়্যেতে মুন কোরছে। গুড্ডি না দিস তো হামি অদের বাড়ি কাম কোরতে যামু না ।""
মায়ের মন ডুকরে কেঁদে ওঠে । "এইটুকুন ছ্যেল্যাকে হামি কাম কোরতে পাঠ্যেছি ।হায় রে হামাদের কপাল ।"
উপায় নাই তবুও মা ছেলেকে মিথ্যে আশ্বাস দেয়।
"তোর বাপ আসুক।বুলবো হামার টুকলুকে একটো গুড্ডি কিনি দিও তো । তুই ও বুলিস ব্যাটা "!
কিন্তু না টুকলু তার বাবাকে দেখতে পাই না কোনদিনই। বাবা রাজমিস্ত্রি কাজ করে যখন বাড়ি আসি তখন ঢুকলো ঘুমিয়ে পড়ে। আর সকালে ওঠার আগেই মোরগ্রাম স্টেশন এ চলে যায় ট্রেন ধরতে । কোনদিনই বাবা-ছেলে মুখোমুখি হওয়া হয়না। টুকলুর সব রাগ অভিমান গিয়ে পড়ে তার মায়ের উপর। তাই আজ সকালে কিছু না খেয়েই বাড়ি থেকে পালিয়েছে ।বাবাকে খুঁজে আনবো বলে।
অসীমের বাবা খোঁজ নিতে আসে ।ওগো টুকলুর মা ।। তোমার টুকলু কৈ? গরুগুলো যে চেঁচিয়ে মরছে ?
"না তো বাবু আপনাদের বাড়িতো কুন সুঁকালে গেলছে আজ । রোজ দুট্যা বাসি ভাত খেঁয় যায় । আজ তো তাও খাইনি বাবু। হামিতো লিশ্চিন্তে আছি বাবু ।হামার শরীলে জ্বর। তিন দিন দেখি উঠতে পারিয়েনি বাবু ।টুকলুর বাপ্ তো কুন সঁকালের সাঁকো টেন ধরতি গ্যেলছে ।"
হ্যাঁ মোরগ্রাম স্টেশন কে লোকে সাঁকো বাজার বলেই জানে । সাঁকো বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোরগ্রাম গ্রাম। মোরগ্রাম বাসস্ট্যান্ড বলে লোকে যেটাকে জানে সেটার নাম বোখারা । কি করে যে এই স্টেশনের নাম মোরগ্রাম হলো কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারে না । তবে লোকের ধারণা সাঁকো বাজার নাম কি যতোদূর সম্ভব রেলস্টেশন সংলগ্ন মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলাকে একটি নয় ফুটা যুক্ত সাঁকোর মাধ্যমে জুড়ে সংযোগ করা হয়েছে। আর এজন্যই হয়তো এই বাজারের নাম সাকো বাজার হয়েছে।
তবে এটা সঠিক তথ্য নাও হতে পারে।
টুকলু সারাদিন তার বাবার খোঁজে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছে। খাবার বলতে খেয়েছে কচি কচি পড়ে থাকা আম। চৈত্রের প্রখর রোদে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। না খেয়ে স্টেশনের কাছে ডাকবাংলায় আমে গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আজ রবিবার। অসীম দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে হরলিক্স খেয়ে আধ ঘন্টা বই নিয়ে নাড়াচাড়া করার পর ছাড়পত্র পেয়ে গেছে ঘুড়ি ওড়ানোর ।দোতলা ছাদে উঠে ওড়াচ্ছে ঘুড়ি ।জোরে বইছে দক্ষিণা হাওয়া । ঘুড়ি আজ অনেক উপরে উঠেছে। রঙিন স্বপ্নের ডালি মাথায় নিয়ে উড়ে চলেছে আজ। ঘুড়ি আজ যেন মাতাল হয়ে গেছে । উড়তে উড়তে লাটায়ের সূতো শেষ। পরে দমকা হাওয়ায় সূতোয় ধরেছে টান। বেগ ধরে রাখতে পারেনি। ছিঁড়ে গেছে সুতো । মাতাল লোকের মতো মাথা টলতে টলতে ঘুড়ি উড়ে চলেছে আপন মনে।
অসীম ছাদ থেকে নেমে ঘুড়ির পেছনে পেছনে লেগেছে ছুটতে ।এই বুঝি ঘুড়িটা মাটিতে পড়বে।না ঘুড়ি শেষে ঘায়েল হয়ে আটকে গেছে ডাকবাংলার ন্যাড়া আম গাছের মাথায় ।
ঘুম ভেঙেছে টুকলুর।
ঘুম জড়ানো চোখে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ন্যাড়া গাছটার মগ ডালে আঁটকে আছে ঘুড়ি।
দেখে টুকলুর কি আনন্দ। অনেকদিন পর তার ঘুড়ি পাওয়ার স্বাদ মিটবে। এদিকে দেখছে পিছন পিছন ছুটছে অসীম। দুজনেই ভাবছে কি করে গাছ থেকে ঘুড়ি পাড়া যায়। অসীম তো গাছে উঠতে পারবে না । হাতের লাটায় ফেলে দিয়ে তার কি কান্না । ওর মামা এই ঘুড়ি টা এনে দিয়েছিল নলহাটি থেকে। কতো দামি ঘুড়ি এটা ।
টুকলু অসীম কে বললো" কাঁদিয়োনা ,কাঁদিয়োনা --
থামো থামো, এক্ষুনি তুমাকে গুড্ডি পেড়ি দিছি।"
এক লাফে উঠে পড়লো গাছে।ম্যাজিকের মতো ঘুড়িটা গাছের ডাল থেকে খুলে নিয়ে তুলে দিলো অসীমের হাতে। আনন্দ আর ধরে না তখন অসীমের।
অসীমের যেমন আনন্দ তেমনি টুকলুর ও আনন্দ।
অসীমের ঘুড়ি পাওয়ার আনন্দ আর টুকলুর ঘুড়ি পেড়ে এনে দেওয়ার আনন্দ।
অসীম টুকলুর পিঠে হাতে বুলিয়ে দিয়ে বাহবা দিতে লাগলো।
অসীম লাটাই তুলে দিলো টুকলুর হাতে।
ঘুড়ি ওড়াতে সাহায্য করলো অসীম ।টুকলুর অনেক দিনের স্বাদ মিটলো।
আনন্দে অসীম ভুলে গেলো টুকলু তাদের কাজের ছেলে।
ঘুড়িটা আকাশে ডানা মেলে উঠতে উঠতে মেঘেদের সাথেই খেলতে লাগলো লুকোচুরি।
________________________________________________
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন