Featured Post

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

ছবি
  সম্পাদকীয় আশা করি ভালো আছো ছোট্ট বন্ধুরা।কন কনে শীতের আবেশ ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে ঋতুরাজের স্পর্শে প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে উঠেছে।কচি পাতা আর রঙিন ফুলের সৌরভে মন কেমন করা পরিবেশ, তাই না? শিমুল পলাশে সব পথ রাঙিয়ে দিয়েছে যেন কেউ। দু-চোখ জুড়িয়ে যায়। সামনেই দোলযাত্রা, রঙের উৎসব। প্রকৃতির সাথে সাথে তোমরাও মেতে উঠবে সেই উৎসবে।খুব মজা করো, তবে সাবধানে, দেখো রং যেন কারোর চোখে না লাগে। যারা এ বছর মাধ্যমিক দিলে তাদের তো বেশ মজা। অনেকটা সময় পাচ্ছো ঘুরে বেড়ানোর , আনন্দ করার। এই অখণ্ড অবসরে আনন্দ উৎসবের মাঝেও একটু গল্প উপন্যাস পড়া, লেখালিখি,আঁকার জন্যও একটু সময় দিও। ভালো লাগবে।বসন্ত ঋতু সৃষ্টির ঋতু। নিজেদের সৃজনশীলতা যাতে ধীরে ধীরে বিকাশ হয় তার জন্য তো তোমাদের কিশলয়ের পাতা রয়েছে। তোমাদের ছোট ছোট প্রয়াস গুলোকে মেলে ধরাই তো এর কাজ। তাই দ্বিধা না করে ভালো মন্দ যাই লেখো,  আঁকো না কেন পাঠিয়ে দাও আমাদের দপ্তরে। তোমাদের কচি হাতের ছোঁয়ায় ভরে উঠুক তোমাদের প্ৰিয় কিশলয়। সবাই ভালো থেকো, সুস্থ থেকো আনন্দে থেকো।     শুভকামনাসহ-- প্রিয়ব্রত দত্ত ও কার্তিক চন্দ্র পাল। কার্যনির্বাহী যুগ্ম...

অণুগল্প ।। ঘুড়ি ।। আবদুস সালাম




ঘুড়ি

আবদুস সালাম

 

অসীমদের বাড়ির কাজের ছেলে টুকলু।

অসীম রোজ বিকেলে পড়ার পরে ছাদে ঘুড়ি ওড়াই। দারুণ লাগে টুকলুর। ওর মনটা ও ঘুড়ির সাথে উড়তে থাকে । অসীমের ঘুড়ি কেমন মাতালের মতো উলট পালট করে ।

 মালিকের ছেলের ঘুড়ি ওড়ানো দেখেই তার স্বাদ মিটিয়ে নেয়।

টুকলুদের পয়সা নাই  । ওরা খুব গরিব । ওর মা অসুস্থ । ওর বাবা   রাজমিস্ত্রির কাজে বাইরে রায় ।ওদের খুব অভাব। 

তাইতো টুকলুর পড়তে যাওয়া হয়না।পরের বাড়িতে কাজ করতে যেতে হচ্ছে। এই সময়টা ছেলেদের খেলে বেড়ানোর সময়।তা নয় টুকলু কে পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালানোর দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে হচ্ছে ।

     কাজ শেষ করে বাড়ি গিয়ে মার কাছে রোজ বায়না করে "মা একটো গুড্ডি  কিনি দিস্ ক্যানে।মা হামার যা গুড্ডি উড়্যেতে মুন  কোরছে। গুড্ডি না দিস তো হামি অদের বাড়ি কাম কোরতে যামু না ।""

  মায়ের মন ডুকরে কেঁদে ওঠে । "এইটুকুন ছ্যেল্যাকে হামি কাম কোরতে পাঠ্যেছি ।হায় রে হামাদের কপাল ।"

  উপায় নাই তবুও মা ছেলেকে মিথ্যে আশ্বাস দেয়। 

"তোর বাপ আসুক।বুলবো হামার টুকলুকে একটো গুড্ডি কিনি দিও তো । তুই ও বুলিস ব্যাটা "!

 কিন্তু না টুকলু তার বাবাকে দেখতে পাই না কোনদিনই। বাবা রাজমিস্ত্রি কাজ করে  যখন বাড়ি আসি তখন ঢুকলো ঘুমিয়ে পড়ে। আর সকালে ওঠার আগেই মোরগ্রাম স্টেশন এ চলে যায় ট্রেন ধরতে । কোনদিনই বাবা-ছেলে মুখোমুখি হওয়া হয়না। টুকলুর সব রাগ অভিমান গিয়ে পড়ে তার মায়ের উপর। তাই আজ সকালে কিছু না খেয়েই বাড়ি থেকে পালিয়েছে ।বাবাকে খুঁজে আনবো বলে।

 

     অসীমের বাবা খোঁজ নিতে আসে ।ওগো টুকলুর মা ।। তোমার টুকলু কৈ? গরুগুলো যে চেঁচিয়ে মরছে ?

"না তো  বাবু আপনাদের বাড়িতো কুন সুঁকালে  গেলছে আজ  ।   রোজ দুট্যা বাসি ভাত খেঁয়   যায় । আজ তো তাও  খাইনি বাবু। হামিতো লিশ্চিন্তে আছি বাবু ।হামার শরীলে জ্বর। তিন দিন দেখি  উঠতে পারিয়েনি বাবু ।টুকলুর বাপ্ তো  কুন সঁকালের  সাঁকো টেন  ধরতি  গ্যেলছে ।" 


     হ্যাঁ মোরগ্রাম স্টেশন কে লোকে সাঁকো বাজার বলেই  জানে ।  সাঁকো বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোরগ্রাম গ্রাম। মোরগ্রাম বাসস্ট্যান্ড বলে লোকে যেটাকে জানে সেটার নাম বোখারা । কি করে যে এই স্টেশনের নাম মোরগ্রাম  হলো কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারে না । তবে  লোকের ধারণা  সাঁকো বাজার নাম কি যতোদূর সম্ভব  রেলস্টেশন সংলগ্ন মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলাকে একটি নয় ফুটা যুক্ত সাঁকোর মাধ্যমে জুড়ে  সংযোগ করা হয়েছে। আর এজন্যই হয়তো এই বাজারের নাম সাকো বাজার হয়েছে।

 তবে এটা সঠিক তথ্য নাও হতে পারে।

   টুকলু সারাদিন তার বাবার খোঁজে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছে। খাবার বলতে খেয়েছে কচি কচি পড়ে থাকা আম। চৈত্রের প্রখর রোদে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। না খেয়ে স্টেশনের কাছে ডাকবাংলায় আমে গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়েছে।

  আজ রবিবার। অসীম দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে হরলিক্স খেয়ে আধ ঘন্টা বই নিয়ে নাড়াচাড়া করার পর ছাড়পত্র পেয়ে গেছে  ঘুড়ি ওড়ানোর ।দোতলা ছাদে উঠে ওড়াচ্ছে ঘুড়ি ।জোরে বইছে দক্ষিণা  হাওয়া ।  ঘুড়ি আজ অনেক উপরে উঠেছে। রঙিন স্বপ্নের ডালি মাথায় নিয়ে উড়ে চলেছে আজ। ঘুড়ি আজ যেন  মাতাল হয়ে গেছে । উড়তে উড়তে লাটায়ের সূতো শেষ। পরে দমকা হাওয়ায় সূতোয় ধরেছে টান।    বেগ ধরে রাখতে পারেনি। ছিঁড়ে গেছে সুতো । মাতাল লোকের মতো মাথা টলতে টলতে ঘুড়ি উড়ে চলেছে আপন মনে।

 অসীম ছাদ থেকে নেমে ঘুড়ির পেছনে পেছনে লেগেছে ছুটতে ।এই বুঝি ঘুড়িটা মাটিতে পড়বে।না ঘুড়ি শেষে ঘায়েল হয়ে আটকে গেছে  ডাকবাংলার ন্যাড়া আম গাছের মাথায় ।

ঘুম ভেঙেছে টুকলুর।

ঘুম জড়ানো চোখে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ন্যাড়া গাছটার মগ ডালে আঁটকে আছে ঘুড়ি।

  দেখে টুকলুর  কি আনন্দ। অনেকদিন পর তার ঘুড়ি পাওয়ার স্বাদ  মিটবে।  এদিকে দেখছে পিছন পিছন  ছুটছে অসীম। দুজনেই ভাবছে কি করে গাছ থেকে ঘুড়ি পাড়া যায়। অসীম তো গাছে উঠতে পারবে না । হাতের লাটায় ফেলে দিয়ে তার কি কান্না । ওর মামা এই ঘুড়ি টা এনে দিয়েছিল নলহাটি থেকে। কতো দামি ঘুড়ি এটা ।

    

     টুকলু অসীম কে বললো" কাঁদিয়োনা ,কাঁদিয়োনা --

থামো থামো, এক্ষুনি তুমাকে গুড্ডি পেড়ি দিছি।"

    এক লাফে উঠে পড়লো গাছে।ম্যাজিকের মতো ঘুড়িটা  গাছের ডাল থেকে খুলে নিয়ে তুলে দিলো অসীমের হাতে। আনন্দ আর ধরে না তখন অসীমের।

অসীমের যেমন আনন্দ তেমনি টুকলুর ও আনন্দ।

অসীমের ঘুড়ি পাওয়ার আনন্দ আর টুকলুর ঘুড়ি পেড়ে এনে দেওয়ার আনন্দ।

 অসীম টুকলুর পিঠে হাতে বুলিয়ে দিয়ে বাহবা দিতে লাগলো।

অসীম লাটাই তুলে দিলো  টুকলুর হাতে।

 ঘুড়ি ওড়াতে সাহায্য করলো অসীম  ।টুকলুর অনেক দিনের স্বাদ মিটলো।

আনন্দে অসীম ভুলে গেলো টুকলু তাদের কাজের ছেলে।

   ঘুড়িটা আকাশে ডানা মেলে উঠতে উঠতে  মেঘেদের  সাথেই খেলতে লাগলো লুকোচুরি।

________________________________________________

 



আবদুস সালাম
প্রয়াস , শ্রীকান্তবাটি মাদারল্যান্ড
ডাক রঘুনাথগঞ্জ   মুর্শিদাবাদ

[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]

মন্তব্যসমূহ

সপ্তাহের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

দুটি ছড়া ।। তীর্থঙ্কর সুমিত

গল্প ।। দিন বদলায় ।। চন্দন দাশগুপ্ত

গল্প ।। সূর্যোদয় ।। দীপক পাল

ছড়া ।। চৈতালি সুর ।। দুর্গা চরণ ঘোষ

ছড়া ।। ঐক্যতান ।। সুদানকৃষ্ণ মন্ডল

ছড়া ।। ঝগড়া নিয়ে ছড়া ।। অরবিন্দ পুরকাইত

ছোটর কলম ।। মামারবাড়িতে দুপুরবেলা ।। অনমিতা মুখার্জি

ডালমুটের ছড়া ।। গোবিন্দ মোদক

কবিতা ।। মোদের ছোট্র গাঁ ।। খগেশ্বর দেব দাস

মাসের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

দুটি ছড়া ।। তীর্থঙ্কর সুমিত

গল্প ।। দিন বদলায় ।। চন্দন দাশগুপ্ত

গল্প ।। সূর্যোদয় ।। দীপক পাল

ছড়া ।। চৈতালি সুর ।। দুর্গা চরণ ঘোষ

ছড়া ।। ঐক্যতান ।। সুদানকৃষ্ণ মন্ডল

ছড়া ।। ঝগড়া নিয়ে ছড়া ।। অরবিন্দ পুরকাইত

গদ্যরচনা ।। অচেনাকে ভয় ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত

ছোটগল্প ।। একটি গাছ একটি প্রাণ ।। সুজয় সাহা

বছরের পছন্দ

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 38th issue: January 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ত্রয়োত্রিংশ সংখ্যা ।। জুন ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সুচিপত্র ।। 37th issue: December 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। চতুর্ত্রিংশ সংখ্যা ।। জুলাই ২০২৪

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 31st issue: April 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪০ ।। মার্চ ২০২৫

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ,39th issue: February 2025

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 32nd issue: May 2024

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 30th issue : March 2024

অতি প্রিয়

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। আত্মপ্রকাশ সংখ্যা ।। অক্টোবর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। দ্বিতীয় সংখ্যা ।। নভেম্বর ২০২১

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 4th issue: January 2022,

নিবন্ধ ।। শিশু-কিশোর সাহিত্যবলয়ে শিশুরাই যেন ব্রাত‍্য না থাকে ।। অরবিন্দ পুরকাইত

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। 7th issue: April 2022

নিবন্ধ ।। দেশীয় উদ্ভিদ কেন গুরুত্বপূর্ণ ? ।। ডঃ চিত্তরঞ্জন দাস

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১০ ।। জুলাই ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১১ ।। আগস্ট ২০২২

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র : 8th issue: May 2022

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় - ১২ ।। সেপ্টেম্বর ২০২২