Featured Post
ছোটোগল্প ।। ইচ্ছে পূরণ ।। রঞ্জন ব্যানার্জী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ইচ্ছে পূরণ
রঞ্জন ব্যানার্জী
চারদিনের মাথায় প্রবল বৃষ্টিপাত টা একটু কমেছে। তবুও ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে কখনো সখনো।তিনদিন ধরে প্রবল নিম্নচাপ চলছে।।প্রবল বৃষ্টিতে চারিদিকে জল থৈ থৈ।নর্দমা, রাস্তা পুকুর আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না।বর্ষাতি পরে জল ঘেঁটে ঘেঁটে অফিস যেতে মন্দ লাগছে না।অফিস থেকে ফেরার পথে শর্টকার্ট এ বড়ো রাস্তা ছেড়ে গলিপথ ধরেছি।এই গলিপথে নর্দমা ও রাস্তার জলস্তর এক হয়ে গেছে।।কিন্তু বোঝা যাচ্ছে কোনটা রাস্তা আর কোনটা নর্দমা।হটাৎ পায়ের কাছে কি যেন একটা কিলবিল করতে তাকিয়ে দেখি দুটো রঙিন মাছ।ল্যাটা মাছের মতো দেখতে অনেকটা ।পা দিয়ে জল ছুড়ে তাড়ালেও দেখলাম মাছ দুটো পালালো না।ভেসে রইলো।ব্যাগ থেকে একটা পলিব্যাগ বের করে টপাটপ করে ব্যাগ এ ভরে ফেললাম।বাড়িতে এনে একটা কাঁচের বয়াম এ পরিষ্কার জলে ছেড়ে দিলাম।মাছগুলো স্থির হয়ে আমাকেই খালি দেখতে লাগলো।
হাত পা ধুয়ে তাড়াতাড়ি টিভি টা চালালাম।ভারত অস্ট্রিলিয়ার ক্রিকেট ম্যাচ দেখবো বলে।কিন্তু চালানোর সাথে সাথেই টিভিটা দুম করে একটা আওয়াজ দিয়ে অফ হয়ে গেলো।কি আপদ এই দুর্যোগে কোনো মেকানিক ও আসবে না।চুপ করে বসে কাগজ টা পড়তে গেলাম দেখি কারেন্ট টা অফ হয়ে গেলো।অগত্যা মোমবাতি ই ভরসা।কিছুক্ষন পর আলো চলে আসলে আমি মাছ টাকে দেখতে গিয়ে দেখি আমার পোষা বিড়ালটা একদৃষ্টিতে মাছদুটো কে দেখছে আর বয়াম টা ভাঙার চেষ্টা করছে।আমার খুব রাগ হলো।রেগে গিয়ে বিড়াল টাকে বললাম "তুই থামবি,নইলে এক ঘুষিতে তোর দাঁত ভেঙে দেবো। " বলার সাথে সাথে বিড়াল টা টেবিল থেকে একলাফে নীচে পড়লো আর ওর সামনের দুটো দাঁত ভেঙে গেলো।আমি তাড়াতাড়ি ওটাকে তুলে ওর দাঁতে ওষুধ লাগিয়ে ওর সেবা করলাম।আমি ভাবতে লাগলাম মাছ দুটো আসার পর থেকেই আমার বাড়িতে অঘটন শুরু হয়েছে।এরপর থেকে যখনই বিড়াল তাকে খুঁজতাম তখনই ও বয়েম তার আশপাসে ঘুর ঘুর করতো।।
বিড়াল টার আর একটা সমস্যা ছিল।ও যখন পাঁচিলে ঘুমোতো তখন একটা কাক কোথা থেকে উড়ে এসে ওকে ঠুকরে দিয়ে উঁচু কার্নিশে বসে মজা দেখতো।আর বিড়ালটা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওকে ধরার জন্য কার্নিশে লাফ দিতো।কাক টা একবার এর বাড়ির কার্নিশে আর একবার ওর বাড়ির কার্নিশে গিয়ে বসতো বিড়ালটাকে ঠুকরে দিয়ে।আর বিড়ালটা ওকে ধরার জন্য পাগলের মতো এ কার্নিশ থেকে ও কার্নিশে লাফ দিয়ে বেড়াতো।।এটা ছিলো ওদের নিত্যদিনের খুনসুটি।।বিড়াল টা কাক টার ওপর এতই রেগে ছিলো যে একবার যদি ওকে ধরতে পারতো তাহলে ওর ঘাড় মটকে দিতো।
দু তিনদিন আর কোনো অঘটন ঘটলো না।আমিও আর কোনো মনের খারাপ ইচ্ছেও প্রকাশ করিনি।আর বিড়ালটাও এই কদিন মাছ গুলোকে খাবে বলে বয়াম টাকে পাহারা দিয়ে গেছে।
একদিন রবিবার ঘুম থেকে উঠে দেখি বয়েম টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে কিন্তু মাছ দুটোর কোনো চিহ্ন নেই।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কার কাজ।।যাইহোক কাঁচের টুকরো গুলোকে সাবধানে তুলে পরিষ্কার করে বাজার চলে গেলাম।বাজার থেকে ফিরছি।বাড়ির কাছাকাছি আসতেই একটা হৈ হৈ আওয়াজ।কিছু লোক আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে কিছু দেখছে।আমিও আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেই কালো কাক টা আর তার পিছনে আমার পোষা বিড়ালটা।কাকটা আবার ঘুমন্ত বিড়াল টাকে ঠুকরে দিয়ে জ্বালাতন করেছে আর ওই বিড়ালটা মনের ইচ্ছে পূরণের মাছ দুটো কে খেয়ে কাক টার পিছনে ডানা মেলে সারা আকাশ উড়ে বেড়াচ্ছে।।আর কাক টা প্রাণভয়ে সারা আকাশ উড়ে পালাচ্ছে।।।
---------------------------
রঞ্জন ব্যানার্জী
15/12 লেনিন সরণি
পোস্ট-শ্রীরামপুর
জেলা-হুগলী
পিন-712203
--------------------------
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন