খাদের বুড়ি
মিঠুন মুখার্জী
দার্জিলিং-এ চায়ের বাগানে শতাব্দী বাবা-মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে চারিপাশের সৌন্দর্য দেখছিলেন। সৌরভ ছেলেকে নিয়ে পরে হোটেল থেকে আসার কথা। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্যে শতাব্দীর মন আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছিল। এরকম সময়ে সে রবি ঠাকুরের "আকাশ ভরা সূর্য তারা" গানটি গাইতে শুরু করেন। কখনো বাবা-মার সঙ্গে ছবি তুলছিলেন। চা বাগানের অসাধারণ সৌন্দর্য দুচোখ ভরে মুগ্ধ নয়নে দেখছিলেন তারা। হঠাৎ শতাব্দী লক্ষ করেন খাদের পাশের একটি লম্বা বেঞ্চে একটি বৃদ্ধা পিছন ফিরে বসে আছেন। তার পাশে একটি বাচ্চা ছেলে কাঁদছে। সে কাঁদছে অথচ বৃদ্ধাটি খাদের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছেন। তার হাতের মুঠোয় বাচ্চাটার হাত ধরা। এটি শতাব্দী লক্ষ করে আস্তে আস্তে তাদের দিকে এগিয়ে যান। সন্ধ্যে হবে হবে তখন। সূর্য পাটে বসেছে। শতাব্দী এগিয়ে গিয়ে দেখেন বাচ্চা ছেলেটি অনেক চেষ্টা করছে তবু বৃদ্ধার মুষ্টি থেকে তার হাত কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না। শতাব্দী বেঞ্চের পেছন দিকে এসে বৃদ্ধাকে ডাকলেন। বললেন --- "ওই ছেলেটি কাঁদছে, আপনি হাত ছাড়ছেন না কেন?" তার কথার কোন উত্তর দিলেন না বৃদ্ধা। যেমনভাবে বসেছিল ঠিক তেমনভাবেই বসে থাকেন। শতাব্দী বারবার ডাকা সত্বেও উত্তর না দেওয়ায় রেগে গিয়ে বৃদ্ধাটির পিঠে হাত দিয়ে ডাকলেন। বৃদ্ধটি হঠাৎ ঘার ফেরালো শতাব্দীর দিকে। তাকে দেখে শতাব্দী প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠলেন। ভয়েতে মুহূর্তের মধ্যে সেখানেই জ্ঞান হারালেন। তার চিৎকার শুনে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তার বাবা-মা ছুটে শতাব্দীর কাছে আসেন। তাঁরা দেখেন শতাব্দী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে আছেন। তাদের কাছে জলের বোতল ছিল। জল নিয়ে শতাব্দীর বাবা তার চোখে-মুখে ছিটা দেয়। তার জ্ঞান ফিরতেই সে ভূত ভূত বলে তার মাকে জড়িয়ে ধরেন। এমন ভয় পেয়েছে যে চোখ খুলতেই সে চায়না। এরই মধ্যে তার ছেলে ও স্বামী সেখানে এসে উপস্থিত হন। সৌরভ কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই সে মাকে ছেড়ে সৌরভকে জড়িয়ে ধরেন। ছেলে শ্রীকান্ত মায়ের ভয় পাওয়া ও কান্না দেখে কেঁদে ফেলে। সৌরভ অনেক বুঝিয়ে শতাব্দীকে শান্ত করেন। তারপর কি ঘটেছে সেটি তার কাছ থেকে জানতে চান। শতাব্দী নিজেকে সামলে নিয়ে সমস্ত ঘটনাটা সৌরভ ও তার মা-বাবাকে বলেন। যে লম্বা বেঞ্চে বৃদ্ধা ও ছোট ছেলেটি বসে ছিল এখন তা সম্পূর্ণ ফাঁকা। সৌরভ বলেন --- "তোমার মনের ভুল হতে পারে! ভালো করে দেখো কেউ নেই !" শতাব্দী বলেন --- "তোমরা বিশ্বাস করো, আমার মনের ভুল নয়, আমি পরিস্কারভাবে সব দেখলাম। বৃদ্ধাটির চোখ দুটি লাল টকটকে, মুখে রক্ত লেগে আছে, বিকট দেখতে। যে কেউ তাকে দেখলে ভয় পাবে -- এটা আমি নিশ্চিত।"
এরপর সন্ধ্যা নেমে আসায় তারা আর দেরি করেন না। সৌরভ বলেন --- "এখানে আর না থাকায় ভালো। জানিনা, এখানে কি ঘটেছে। তবে ও যখন বলছে কিছু একটা নিশ্চয়ই আছে। চলো, আমরা এখানে না থেকে হোটেলে ফিরে যাই।" তারপর তারা পায়ে হেঁটে হোটেলে ফিরে আসেন। বিশেষ উল্লেখ্য শতাব্দী তার পরিবারকে নিয়ে কলকাতায় বেহালাতে থাকেন। বাবা - মার একমাত্র মেয়ে বলে নিজের সংসারে মা-বাবাকে নিয়ে থাকেন। বাবা স্কুল টিচার ছিলেন। রিটার করেছেন পাঁচ বছর হয়েছে। মা গৃহবধূ। শতাব্দী ও সৌরভ একই কলেজের বাংলার অধ্যাপক-অধ্যাপিকা। দুজনে ভালোবাসা করে বিয়ে করেছেন দশ বছর। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভালো। পুজোর ছুটিতে তারা সকলে মিলে দার্জিলিং বেড়াতে এসেছেন। দর্জিলিং এসেছেন আজ দুদিন।
এদিকে তারা হোটেলে ফিরে গিয়ে শতাব্দীর দেখা ঘটনাটা হোটেল ম্যানেজারকে জানান। ম্যানেজারও বাঙালি। বারাসাতে বাড়ি। তিনি সমস্ত ঘটনাটি শোনার পর বলেন --- "আপনারা ওই চা বাগানে গেছেন কেন? ওখানে যাওয়া নিষিদ্ধ। ওখানে একটা বোর্ড লাগানো আছে দেখেন নি? অনেকদিন আগের একটা ঘটনা, ওখানে যে খাদটা আছে, ওই খাদে এক বৃদ্ধা ও তার নাতি গাড়ি এক্সিডেন্টে পড়ে গিয়ে মারা যান। তাদের ওই দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কারণে আত্মার সদ্গতি হয়নি। ওখানে অনেকেই ওদেরকে দেখেছেন। তাই পর্যটন দফতর থেকে ওই বাগানে ঢোকা নিষেধ করে দিয়েছেন। আর কখনো ওখানে বা ওর আশেপাশে যাবেন না।" ম্যানেজারের কাছে সব শুনে শতাব্দীর সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। সে যে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে তার চোখ মুখ দেখলেই বোঝা যায়।
রাতে হোটেলে খেয়ে দেয়ে সকলে ঘুমোতে যায়। শতাব্দীর কিছুতেই ঘুম আসেনা। চোখ বুজলেই বৃদ্ধাটির মুখ ভেসে ওঠে আর বাচ্চাটার কান্নার মুখও। এক ঘন্টা পর চোখ বুজিয়ে সৌরভ ও শ্রীকান্তকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ভোর রাতে স্বপ্ন দেখেন, সেই বুড়িটি তার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে খাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর চোখ দু'টি বিস্ফোরিত, লাল। বলছেন --- "চল আমার সাথে, খাদে পড়ে মৃত্যু কত ভয়ংকর হয় দেখ। আমরা মরতে চাই নি। গাড়িটি আমাদের কেন খাদে পড়ে গেল?" এরপর শতাব্দীকে খাদের কাছে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়। তিনি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন। বুড়িটাকে বলেন --- "আমাকে খাদে ফেলবেন না। আমার ছোট্ট একটি ছেলে আছে, স্বামী আছে, বাবা-মা আছেন। আমি মারা গেলে তাদের কি হবে !! আমাকে মারবেন না দয়া করে।" এরপর বৃদ্ধাটি কোন কথা না বলে শতাব্দীকে ঠেলা দেন। হঠাৎ শতাব্দী চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠে খাটের উপর কান্না করতে থাকেন। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে একেবারে কুঁকড়ে যান। সারা শরীর থেকে ঠান্ডার মধ্যে ঘাম ঝরে পড়তে থাকে। তার চিৎকারে সৌরভ ও শ্রীকান্তের ঘুম ভেঙে যায়। পাশের ঘর থেকে বাবা- মা ছুটে আসেন। সৌরভ বুঝতে পারেন কালকের বিষয়টি নিয়ে হয়তো ভয়ের কোনো স্বপ্ন দেখেছেন শতাব্দী। অনেক বুঝিয়ে সে যাত্রা তারা শতাব্দীকে শান্ত করেন। মায়ের এরকম অবস্থা দেখে ছোট্ট ছেলেটির মুখ একেবারে ছোট হয়ে যায়। শতাব্দী কিছুতেই আর দার্জিলিঙে থাকতে চান না। সে বাড়ি ফেরার জন্য সৌরভকে বলেন। তার মনের অবস্থা ঠিক নেই। অনেক ভেবে চিন্তে সৌরভ বলেন --- "ঠিক আছে, আমরা আজ কালিম্পং- এ যাব। সেখানে গিয়ে দুদিন থেকে কলকাতায় ফিরে যাব। ঘুরতে এসে মাঝপথে চলে গেলে সকলের আনন্দটা মাটি হয়ে যাবে।" সৌরভের কথায় নিজেকে সামলে নিয়ে শতাব্দী রাজি হন।
সকাল ন'টা নাগাদ তারা হোটেল ছেড়ে দিয়ে একটা গাড়ি ভাড়া করে কালিম্পং- এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ঘন্টা দুয়েক পর তারা কালিম্পং এসে পৌঁছান। সেখানে একটি সুন্দর হোটেলে ঘর ভাড়া নেন। বাবা মার জন্য একটি ও তাদের তিনজনের জন্য একটি। সবকিছুতেই শতাব্দী অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু গতকালকের ব্যাপারটা সে না চাইলেও তার মাথার মধ্যে ঘুরে ফিরে চলে আসে। সারা বিকেল প্রকৃতির অপরূপ শোভা ও ঝরনা দেখে মুগ্ধ হন সকলে। তারপর সন্ধেবেলায় মার্কেটিং করেন। শতাব্দী ছেলের জন্য একটা সুন্দর জ্যাকেট কেনেন ও বরের জন্য একটা সাদা সোয়েটার। বাবা- মার জন্য দুটি চাদর কেনেন। নিজের জন্য কিছু কেনেন না। সৌরভ বলেন -- 'সবার কথা ভেবে তো নিজের কথা ভাবার সময় পেলে না। নিজের জন্য কিছু নাও।' শতাব্দী বলেন --- "আমার অনেক আছে, আমার লাগবে না।" সৌরভ জোড়াজোরি করায় একটা মাফলার ও একটা জ্যাকেট কেনেন শতাব্দী। তার বই পড়ার প্রতি খুব নেশা। মার্কেটের পাশে কয়েকটি বইয়ের দোকান দেখতে পেলেন তিনি। তিনি একটি দোকান থেকে একটি গল্পের বই কেনেন। গল্প-সংকলন টির নাম 'যে যায়, আর ফেরে না!!' । রাত আটটা নাগাদ মার্কেটিং শেষ করে হোটেলে পৌঁছান সবাই। রাতের খাবার হোটেলে অর্ডার করে দেন সৌরভ। হোটেলে ফিরে ইলেকট্রিক কেটলিতে শতাব্দী চা করে সবাইকে দেন ও নিজে নেন। চা খাওয়া শেষ হলে গল্পের বইটি খুলে বসেন। সূচিপত্রটি প্রথমে ভাল করে চোখ বুলান তিনি। দেখেন, সেখানে একটি গল্প রয়েছে 'খাদের বুড়ি' নামে। লিখেছেন অনির্বাণ সাহা নামক একজন সাহিত্যিক। বিরাশি পাতায় এই গল্পটি শুরু। তিনি পাতা খুলে গল্পটি পড়তে শুরু করলেন। খানিকটা পড়ার পর দেখলেন এ সেই দার্জিলিংয়ের ভুতুড়ে বুড়ির খাদে পড়ে যাওয়ার গল্প। কিছুটা সাহস ও কিছুটা ভয়ের সহিত গল্পটি শতাব্দী পড়লেন। এই বুড়ির বাড়িও কলকাতায়। নাম সুমিত্রা দেবী। গত দশ বছর আগে নাতি ও ছেলে-বৌমাকে নিয়ে দার্জিলিঙে বেড়াতে এসেছিলেন। একটা গাড়িতে ছেলে ও বৌমা, অন্য গাড়িতে নাতি ও তিনি ছিলেন। খুব বড়লোক পরিবারের মহিলা ছিলেন তিনি। সামনের দিক থেকে হঠাৎ একটা গাড়ী এসে যাওয়ায় তার গাড়িচালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের নিয়ে খাদের মধ্যে গাড়ি সমেত পড়ে যান। তারপর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা পেছনের গাড়ি থেকে বৌমা রবিনা দেবী দেখে শোকে ও শকে পাথরের মতো হয়ে যান। তারপর দশবছর কেটে গেছে। গাড়িটি যেখানে পড়ে গিয়েছিল তার আশেপাশের চা-বাগানে অনেকেই অনেকবার তাকে ও তার নাতিকে দেখেছেন। তবে আজ পর্যন্ত তারা কারো কোন ক্ষতি করেন নি। তবে প্রচন্ড ভয় পেয়ে সুখকর ভ্রমন মাঝপথে অসমাপ্ত রেখে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। এই গল্পটি পড়ার সময় বৃদ্ধাটির মুখ বারবার শতাব্দীর চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। এরপর বই বন্ধ করে খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকেন তিনি। সৌরভ তাকে জিজ্ঞাসা করেন --- কি হয়েছে? শতাব্দী বলেন ---"কিছু হয়নি"। এরপর হোটেল থেকে তাদের ঘরে খাবার দিয়ে যান। সকলে হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে বসেন। সেদিনের মেনু ছিল ভাত, ডাল, মাছ ও পাঁপড় ভাজা। রাত এগারোটায় সবার খাওয়া শেষ হয়।
রাত সাড়ে এগারোটার সময় যে যার ঘরে ঘুমাতে যান। শতাব্দীর আজও ঘুম আসতে চায় না। ছেলে ও সৌরভ ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক সময় আগে। কিছুতেই মন থেকে বুড়ি ও তার নাতির মুখ ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না তিনি। বারবার ঘুমোনোর চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। শতাব্দীর মনে হতে লাগল তার আশে পাশে খাদের সেই বুড়িটি রয়েছে। এরপর ছেলেকে জড়িয়ে অনেক চেষ্টা করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত তখন তিনটা। হঠাৎ শতাব্দী দেখেন ওর পায়ের কাছে কে যেন কাঁদছে। দেখেন একটি ছোট্ট ছেলে বলছে -- আমাকে বাঁচান, আমাকে মেরে ফেলবে। দরজা হঠাৎ খুলে গেল। বিকট হাসতে হাসতে ঘরে প্রবেশ করলেন সেই খাদের বুড়ি। পরনে সাদা কাপড়, চুলগুলো সাদা, চোখ দুটো লাল। চোখ থেকে যেন জ্যোতি বেরোচ্ছে। মুখের সামনে মাত্র দুটি দাঁত। রক্তের দাগ সারা গায়ে। সেই ছেলেটিকে আঙুল তুলে ছেড়ে দিতে বলছেন। আমি ছেলেটির হাত মুঠো করে ধরে রেখেছি। আমি বললাম--ওকে কোনমতে নিয়ে যেতে দেব না। আমার সামনে বুড়িটি এগিয়ে আসতে ভয়ে আমার বুক ধুকধুক করতে লাগল। বিছানায় শুয়ে থাকা আমার ছেলেটিকে বুড়িটি হঠাৎ আঙুলের ইশারায় একবার উপরে তুলে ধরে আবার বিছানায় নামিয়ে দেয়। হঠাৎ যে ছেলেটির হাত ধরা ছিল তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুখটা পাল্টে গিয়ে সেই বুড়ির নাতির মুখ হয়ে গেল। সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এবার বুড়িটিও বিকট হাসি হাসতে লাগলেন। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। বুড়ি আমাকে বলছেন --- "কিরে দার্জিলিং থেকে পালিয়ে কালিম্পং-এ চলে এলি? আমার হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাবি ভাবছিস? কোন দিন সম্ভব নয়। আমি যখন তোর প্রতি দৃষ্টি দিয়েছি,তখন যতক্ষণ না তোকে ওইখানে নিয়ে যেতে পারছি, আমার শান্তি নেই। আমি খাদের বুড়ি সুমিত্রা দেবী।" এই বলে সে শতাব্দীর ছেলেকে কাঁধে তুলে নাতিকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। শতাব্দী অনেক বারন করলেও বুড়িটি শোনেন না। শতাব্দী সৌরভ ও বাবা-মাকে চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকলেও কেউ এগিয়ে আসেননি।
এরপর বুড়ির পিছন পিছন কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াতে লাগেন শতাব্দী। বৃদ্ধার বীভৎস রূপ দেখলে যে কেউ ভয় পাবে। মাঝেমাঝে মাটি ছেড়ে শুন্যে উঠে যাচ্ছেন। একটি খাদের সামনে এসে শতাব্দীর ছেলেকে নিয়ে বুড়িটি দাঁড়ান। শতাব্দীকে ব্ল্যাকমেইল করে বলেন-- "তুই খাদে ঝাঁপ দে, নতুবা তোর ছেলেকে এখনই খাদে ফেলে দেবো।" শতাব্দী প্রচন্ড কান্না করতে থাকে ও ছেলেকে ছেড়ে দিতে বলেন। বুড়ির অনেক বলাতেও শতাব্দী খাদে ঝাঁপ দেয় না। তাই বুড়ি রেগে গিয়ে ওর ছেলেকে খাদে ছুঁড়ে ফেলে দেন। এরপর প্রচণ্ড চিৎকার করে "না" বলে ঘুম ভেঙে উঠে বসে শতাব্দী। তার চিৎকারে সবার ঘুম ভেঙে যায়। শতাব্দী উঠে বলে --- "শ্রীকান্তকে ফেলে দিল, শ্রীকান্ত কে ফেলে দিল !!" আর কাঁদতে লাগল। সৌরভ বলেন --- শ্রীকান্তকে কোথায় ফেলে দিল? কে ফেলে দিল? ঐ তো বিছানায় শুয়ে রয়েছে।" ভয়ে শতাব্দীর সারা শরীর কাঁপতে থাকে। সৌরভ বুঝতে পারেন দার্জিলিং- এর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে এখানে। পরদিন সকালে সৌরভ আর দেরি না করে কলকাতায় ফেরার ব্যবস্থা করেন। শতাব্দীর চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ তখনো লক্ষণীয়। দেরি না করে বাগডোগরা থেকে দিনের দিন প্লেনের টিকিট কেটে বিকেল চারটেয় দমদম বিমানবন্দরে এসে নামেন। দমদম থেকে একটা গাড়ি নিয়ে বেহালার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। রাস্তায় যেতে যেতে সৌরভ শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন, ওর মনের অবস্থা একেবারে ভালো নয়। শরীরও টেনশনে খারাপ হয়ে গেছে। কি ভেবে আমরা গেলাম আর মাঝ পথে কিভাবে ফিরে আসতে হল। সবকিছু নষ্টের মূলে ওই 'খাদের বুড়ি'। একরাশ হতাশা ও খারাপ স্মৃতি নিয়ে সকলে বাড়ি ফিরে আসেন। সময়ের সাথে সাথে কর্মব্যস্ততায় সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যায়। শুধু শতাব্দীর অবচেতন মনে 'খাদের বুড়ি' মাঝে মাঝে স্মৃতি হয়ে ভেসে ওঠে ।
______________________________________________
মিঠুন মুখার্জী
গ্ৰাম -- নবজীবন পল্লী
পোস্ট + থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগনা
পিন -- ৭৪৩২৫২
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন