Featured Post
গল্প ।। ভূতের সঙ্গে নেট যোগাযোগ ।। অরুণ চট্টোপাধ্যায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ঢোলগোবিন্দের কড়চা (দ্বিতীয় পর্ব)
ভূতের সঙ্গে নেট যোগাযোগ
অরুণ চট্টোপাধ্যায়
এমন কথা কখনও শোনে নি এরা দুজন। ঢোল অবাক হয়ে বলল, এও কি সম্ভব স্যার?
প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস ক্ষেপে গিয়ে কটমট করে তাকালেন তার দিকে।
সন্তুষ্ট হতে পারছে না গোবিন্দও। সে বলল, মানে এই- ভূতেদের সঙ্গে- ইয়ে মানে-
-সম্ভব খুব সম্ভব। ক্ষেপচুরিয়াস বললেন, একেবারে ফাইভ হান্ড্রেড পারসেন্ট সম্ভব।
এরা দুজনে তবু মুখ চাওয়া চায়ি করছে। মহাকাশ পরিক্রমা সফল হয়নি তবে বিজ্ঞানী প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের চিত্রনাট্য নিয়ে তৈরি করা ছোটদের সেই চলচ্চিত্র বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। ক্ষুদে বৈজ্ঞানিক অভিনেতা হিসেবে ঢোলগোবিন্দও এখন বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে। তাদের বেশ নাম-ডাক হয়েছে। ইস্কুলে ক্লাস এইট ফেল করলেওঅভিনয়ে শুধু পাশ নয় একেবারে সাবাশ!
সেই আনন্দে প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসও এখন উড়ে বেড়ান গবেষণার আকাশে। তাঁর দুই পাশে দুই ডানা ঢোল আর গোবিন্দ। মিলেমিশে ঢোলগোবিন্দ। ঠিক করেছেন এক একটা করে গবেষণা করবেন আর তার চিত্রনাট্য রচনা করবেন। সেই ডিরেকটর আত্মপ্রকাশ কুঞ্জবিহারী তা পরিচালনা করবেন।
কিন্তু মূল সমস্যাটা কি নিয়ে? প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস এখন গবেষণা করছেন যে গভীর বিষয় নিয়ে সেটিই আসল সমস্যা। প্রফেসর জোর গলায় বললেন, একেবারে ফাইভ হান্ড্রেড পারসেন্ট সম্ভব।
মাথা চুলকে ঢোল বলল, কিন্তু স্যার ভূতের তো ছায়া ছাড়া আর কিছু নেই।
গোবিন্দ তাড়াতাড়ি বলল, ওদের তো ছায়াও নেই স্যার। শুধুই মায়া- প্রতিবাদ করে ওঠে ঢোল, না না ওদের দয়ামায়াও নেই।
গোবিন্দ বলল, ঠিকই তো। নাহলে হাড় সর্বস্ব হয়ে ওরা অমন হাড় কাঁপানো ভয় দেখাতে পারে? দাঁত বার করে এমন হাসে যে কত লোকের যে দাঁতি পড়ে যায়?
-আবার কত হাতি দঁকে পড়ে যায়। ঢোল বলল।
-শোন শোন, বাজে না বকে আমার কথা শোন। হেঁকে উঠলেন প্রফেসর, ভূত মানে কি?
ঢোল বলল, ওই যে স্যার মানুষ মরে-
গোবিন্দ বলল, নাকি সুঁরে কথাঁ বলে স্যাঁর।
প্রফেসর বলতে থাকেন, ভূত হল অতীত। মানুষ হল বর্তমান মানে যা আছে। আর তোমরা নিশ্চয় জান টাইম মেশিনেকরে অতীতে যাওয়া যায়? তার মানে ভূতেদের সঙ্গে একটা যোগসূত্র রচনা করা যায়? এটা তো আমরা অনেক আগেই করে ফেলেছি। ভূত যদি অতীত হয় আবার অতীতের সঙ্গে যদি টাইম মেশিনের সাহায্যে যোগাযোগ করা যায় তাহলে ভূতেদের সঙ্গেই বা যোগাযোগ করা যাবে না শুনি?
প্রফেসরের যুক্তিতে দুজনেই হাঁ। সমস্বরে বলে উঠল, আপনি ঠিক স্যার আপনিই ঠিক। কিন্তু ক্ষেপচুরিয়াস আবার উঠলেন ক্ষেপে, আবার কিন্তু কিসের?
ঢোল বলল, তবে কি আমরা টাইম মেশিনে চড়ে যাব স্যার?
-না। আমরা নেটে চড়ে যাব। মানে ইন্টারনেটের পিঠে চড়ে।
-মানে? দুজনেই অবাক।
-আরে বাছা আজকাল গাড়িঘোড়া আর কত লোকে চড়ে? তাতে বিস্তর ঝামেলা আর সময় কত বেশি লাগে বল? এককালে খাম পোস্টকার্ডে চিঠি যেত। কত দিন সময় লাগত জান? আর এখন তাই সবাই নেটের পিঠে চড়ে। সময় মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
ঝামেলা-
কেবল নেট থাকলেই হল।
প্রফেসর ঢোলগোবিন্দকে বলে দিলেন কিছুদিন পরে আসতে। তিনি গবেষণা শেষ করে জানাবেন। তারা দুজন আর কি করবে।
সত্যি এমন সময় তো আর বিজ্ঞানীকে বিরক্ত করা যায় না। তারা চলে গেল।
দিন কয়েক পরে প্রফেসর ওদের আবার ডেকে বললেন, আমি এমন একটা মেশিন বার করব যাতে মানুষ আর অতীতে যাবে না।
অতীত উঠে আসবে মানুষের কাছে।
ঢোল ফিসফিস করে গোবিন্দকে বলল, সত্যি জিনিয়াস আমাদের এই ক্ষেপচুরিয়াস কাকু।
গোবিন্দ আমতা আমতা করল, কিন্তু স্যার-
-আবার কিন্তুটা কিসের? ক্ষেপে গেলেন বিজ্ঞানী ক্ষেপচুরিয়াস।
-স্যার সে তো প্ল্যানচেট করেও আনা যায়? মৃত পূর্বপুরুষরা নাকি টেবিল নাচিয়ে বা এমন কিছু করে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়।
ঢোলের হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ল। তার এক বন্ধুর বাবা মারা গেল। কিন্তু বলে গেল না তার টাকা কোথায় আছে। একজনের পরামর্শে তার বাবার আত্মাকে আনার জন্যে প্ল্যানচেট করা হল। সেটাই বলল।
-তারপর? গোবিন্দ আগ্রহী হয়ে প্রশ্ন করল। প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের চোখেও জিজ্ঞাসা।
-তারপর আর কি। ওই বন্ধুর এক বন্ধুকে মিডিয়াম করা হয়েছিল। সবাই যখন একমনে ডাকছে বাবাকে তখন সেই মিডিয়াম বন্ধুর ডান হাত উঠে এল সেই ছেলের গালের দিকে। তাকে ক’ষে একটা চড় মারল। তার মুখ দিয়ে নাকি সুরে বেরিয়ে এল একটা কথা, আমি বেঁচে থাঁকতে আমাকে এমন ভাঁবে ডাঁকিস নি তোঁ কোঁনোদিন? তাঁহলে তোঁ আমি অঁকালে মরতুম না।
এখন মরে যেতে আমার টাঁকার খোঁজ?
-তারপর? প্রফেসর জানতে চাইলেন।
-সেই চড় খেয়ে ছেলে মানে আমার বন্ধু নাকি তিনদিন অজ্ঞান হয়েছিল। জীবনে আর কখনও প্ল্যানচেট নাম মুখে আনেনি।
-না না প্ল্যানচেট নয়, প্রফেসর বললেন, এ তো বোগাস। এর সঙ্গে বিজ্ঞান নেই। আমার যন্ত্রে অতীত মানে পাস্ট টেন্স নিজেই প্রেজেন্ট টেন্স হয়ে উঠে আসবে।
দশদিন পরে প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের আবার ডাক এল। ঢোলগোবিন্দ ছুটতে ছুটতে এসে হাজির। নিশ্চয় ভূতেদের সঙ্গে নেট যোগাযোগ হয়ে গেছে।
এখানেও সেই প্ল্যানচেটের মত ব্যবস্থা। সন্ধ্যে সাতটায় তাদের আসতে বলেছিলেন প্রফেসর। তারা সাড়ে ছটার মধ্যেই এসে হাজির।
বিজ্ঞানী
বাড়ি ছিলেন না। এলেন ঠিক সাতটায়। কিন্তু কোথায় তার ভূত ধরা কল? ঢোল বলল, মোবাইলে ভূতকে কল করবেন নাকি স্যার?
গোবিন্দ বলল, না না ইমেল করবেন স্যার।
প্রফেসর হাসলেন কিছু বললেন না।
ড্রয়িং রুমের সব দরজা জানলা বন্ধ করে দেওয়া হল। সভয়ে তারা প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার সম্ভবত আলো নিভবে আর একটা মোমবাতি জ্বলবে মিটমিট করে। গা ছমছম করে উঠল তাদের।
আলো নিভল বটে তবে মোমবাতির বদলে জ্বলে উঠল একটা লাল নাইট ল্যাম্প। টেবিলে পেপার ওয়েটের বদলে রয়েছে একটা ল্যাপটপ।
মাঝে ল্যাপটপের মুখোমুখী গম্ভীর মুখে বসে স্বয়ং প্রফেসর। তার দুইপাশে চোখেমুখে ভয় আর কৌতূহল নিয়ে বসে আছে ঢোলগোবিন্দ।
ঢোল সাহস করে বলেই ফেলল, ভূত কি তবে আসবে স্যার? কে মিডিয়াম?
নীরবে ল্যাপটপের দিকে হাত দেখিয়ে প্রফেসর বুঝিয়ে দিলেন আধুনিক এই যন্ত্রটাই হল মিডিয়াম।
-ভূত কি সত্যি আসবে স্যার? প্রশ্নটা আবার করল ঢোল।
-আসবে না। প্ল্যানচেট তো নয় এটা। গোবিন্দ বলল।
-আসবে। বললেন সহসা গম্ভীর হয়ে যাওয়া প্রফেসর, তোমরা আর কথা বল না। আওয়াজ কর না। যা জিজ্ঞেস করব তার বাইরে কিছু বলবে না।
ঢোলগোবিন্দের বুকে কাঁপন ধরল। পরিবেশটা সত্যি বড় ঘোলাটে হয়ে উঠছে।
-ভূত আসবে না তবে অতীত আসবে। আর এসে দেখা দেবে ল্যাপটপের পর্দায়। প্রফেসর বললেন।
-সে আবার কি? ঢোলের প্রশ্নে নীরবে সম্মতি জানাল গোবিন্দও।
-অতীত মানে অতীত থেকে কেউ। কাকে আনতে চাও তোমরা বল? ইতিহাসের কাউকে আনতে পার।
-তারা সত্যি আসবে এখানে? ঢোল তো অবাক।
গোবিন্দ বলল, আমার দাদু মারা গেছে গতবছর। আমার জন্মদিনে আমাকে একটা গিফট দেওয়ার কথা ছিল। দাদুকে ডাকতে পারি?
মানে সেই গিফট এখন পাব কিনা-
গোবিন্দ বলল, আমার মনে হয় পাবি না।
-কেন কেন?
-আরে পরলোকে কি আর আমাজন বা ফ্লিপ কার্ট আছে নাকি যে তোর দাদু গিফট পাঠিয়ে দেবে?
প্রফেসর দৃঢ়স্বরে বললেন, না ওনাদের আনা যাবে না।
-কেন স্যার? গোবিন্দ কথাটা বলে ফেলে প্রায় কেঁদে ফেলল। তার বড় আশা ছিল দাদুর সঙ্গে যদি নেটে যোগাযোগ করা যায় তো গিফটটার কথা বলবে।
প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস ক্ষেপে গেলেন, বলেছি না ভূত নয় অতীত আসবে। ইতিহাসের পাতা থেকে কাউকে ডাকতে পার। রাজাটাজা এসব। বাদশা সম্রাট।
কিন্তু তোমার দাদু তো আর ইতিহাস হন নি? কি এমন কাজ করেছিলেন যে ইতিহাস হবেন?
ঢোল বলল, কাঁদিস নি ভাই। ভেবে দেখ ইতিহাস হওয়া কি আর যে সে কাজ। সকলে কি আর ইতিহাস হতে পারে? ভাগ্য করতে হয়।
-তোমরা এবার চুপ কর। গম্ভীর ভরাট গলায় বললেন প্রফেসর। এমনই ভরাট সেই গলা যে দুজনেই বেশ ভয় পেয়ে গেল। তাদের গা ছমছম করতে লাগল।
-বল ইতিহাসের পাতা থেকে কাকে ডাকব? ক্ষেপচুরিয়াসের চোখে ঘোলাটে দৃষ্টি। কেমন যেন ভূতুড়ে লাগল। এদের সন্দেহ হল প্রফেসর নিজেই ভূত নয় তো?
ঢোল অতিকষ্টে বলল, আমি তো ইতিহাসে কাঁচা স্যার।
গোবিন্দ বলল, আমি ইতিহাসটা একটু একটু জানি। পড়তে খারাপ লাগে না।
-তবে বাবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাক কি বল? প্রফেসর নিজেই বললেন।
কিন্তু বাবর নামটা ইতিহাসের কোন ক্লাসের কোন পাতায় আছে এরা দুজনেই দিব্বি ভুলে গেছে। চোখ বুজে প্রফেসর বলতে লাগলেন,
বাবর বাবর বাবর--- দি গ্রেট এম্পারার বাবর।
অমনি ল্যাপটপের পর্দায় ফুটল একটা ইমেল অ্যাড্রেস- অমুক অমুক অমুক বাবর অ্যাট দি রেট পাস্ট ওয়ার্লড ডট কম।
ঢোল ফিসফিস করে গোবিন্দকে বলল, দেখলি পাস্ট ওয়ার্ল্ড মানে হল অতীত জগত মানে ভূতের দেশ।
একটু পরেই অবাক কান্ড। বিকট একটা আওয়াজ। প্রচন্ড ধোঁয়া ল্যাপটপের পাতায়। সেই ধোঁয়া কেটে গিয়ে বেরিয়ে এল অতীতের সম্রাট বাবরের হাসিমুখ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল একটুও কিন্তু ল্যাপটপে হাত ছোঁয়ান নি ক্ষেপচুরিয়াস।
সব নিজে থেকে হচ্ছে। ভৌতিক কান্ড আর কি।
-বাবর এসেছেন। যা প্রশ্ন করার কর। তাড়াতাড়ি কর। অতীত থেকে বর্তমানে এসে কেউ বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। ওনার কষ্ট হয়।
ভরাট গলায় বললেন প্রফেসর।
কিন্তু কি প্রশ্ন করবে। ঢোল আর গোবিন্দ মুখ চাওয়া চায়ি করতে থাকে। ইতিহাসের বইয়ের মলাটের ছবিটা ছাড়া আর কিছু তো মনে নেই তাদের।
সব বুঝে গেলেন প্রফেসর। বললেন, আমিই তবে প্রশ্ন করি?
দুজনে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।
-আপনি কি ভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের স্থপতি বাবর?
ছবির বাবর সঙ্গে সঙ্গে হাসল। বলল, হ্যাঁরে বেটা আমিই। বল কি বলবি।
বাবর স্বয়ং কথা বলছে। তাও আবার উর্দু নয় পরিষ্কার বাংলায়। এরা খুব অবাক।
-জাঁহাপনা আপনি কি দিয়ে যুদ্ধ করতেন?
-কামান রে বেটা কামান। ভারতে আমিই যুদ্ধে প্রথম কামান ব্যবহার করেছিলুম।
-সেটা কোন যুদ্ধ জাঁহাপনা.?
-প্রথম পানিপথের যুদ্ধ। ইব্রাহিম লোদি হেরে গেল। আমি ভারতে পা রাখলুম।
আর কি প্রশ্ন? তাড়াতাড়ি বল। এখানে নেটের চার্জ অনেক। বেশিক্ষণ নেটে থাকতে পারব না।
-আর কিছু নয়। আপনি আসতে পারেন।
গোবিন্দ বলল, এবার আকবরকে ডাকুন না স্যার? বড় ভাল সম্রাট ছিলেন।
চোখ বুজে এক ভাবে ডেকে চললেন প্রফেসর, আকবর আকবর আকবর- দি গ্রেট এম্পারার আকবর।
পর্দায় ফুটে উঠল, এম্পারার আকবর দি গ্রেট, অ্যাট দি রেট পাস্ট ওয়ার্ল্ড ডট কম।
প্রফেসর একটুও হাত দিলেন না ল্যাপটপে। মুখে শুধু বললেন, কানেক্ট প্লিজ।
আবার সেই ধোঁয়া আর শব্দ। সে সব কেটে গেলে সম্রাট আকবরের ছবি। হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন, বল বেটা বল?
-জাঁহাপনা আপনি কত বছর বয়েসে সিংহাসনে আরোহন করেন?
-মাত্র বার বছর বয়েসে। এই বয়েসে তুই হাফ প্যান্ট পরে ইস্কুলে যেতিস।
প্রফেসর বেশ লজ্জা পেয়ে বললেন, আচ্ছা আপনি যেতে পারেন জাঁহাপনা।
তিনি গেলেন। এবার এলেন শাহজাহান। ডান হাতে ধরা সুন্দর একটা লাল গোলাপ।
প্রফেসর প্রশ্ন করলেন, আপনার শ্রেষ্ঠ কীর্তি কি জনাব?
-তাজমহল। সারা পৃথিবী জানে আর তুই জানিস না? বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এটা।
আগ্রাতে যমুনা নদীর তীরে রয়েছে। এখনও দেখা হয়ে ওঠে নি বুঝি? খাঁটি শ্বেত পাথরের।
তবে এখন এই এসিড বৃষ্টিতে ফুটো ফুটো হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে সালফিউরিক আর নাইট্রিক এসিড পড়ে তা জানিস তো বাছা?
তোরা একটু যত্ন করলে তবে আর বেশ কিছুদিন ধবধবে সাদা থাকবে।
ভয় কাটিয়ে খুক খুক করে হেসে উঠল দুজনে।
প্রফেসরের চোখ বোজা তবু মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, অর্ডার অর্ডার!
ওরা ভয়ে চুপ করে গেল।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কি খোদাবন্দ?
ক্ষেপে গিয়ে সম্রাট জবাব দিলেন, কে আবার? আমার বংশের কুলাংগার ওই ঔরংজেব আর কি।
এবার ল্যাপটপের পর্দা কাল হয়ে এল। আর ঘরে জ্বলে উঠল উজ্জ্বল আলো।
-হল তো? এবার গাম্ভীর্যের বদলে যেন সাফল্যের উজ্জ্বল হাসি হাসছেন ক্ষেপচুরিয়াস।
-মার্ভেলাস স্যার। সত্যি অতীত যেন উঠে এসেছে আমাদের কাছে। ঢোল বলল।
-দেখ সব কিন্তু হয়েছে ভূতের রাজ্য বা পাস্ট ওয়ার্ল্ডের ইচ্ছেয়। আমি কিন্তু ল্যাপটপ ছুঁই নি একটুও।
ঢোল ঘাড় নাড়ল। গোবিন্দ বলল, হ্যাঁ স্যার এটা ঠিক।
বাইরে বেরিয়ে ঢোল উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, স্যার সত্যি একটা জিনিয়াস। দারুণ যন্ত্র বার করেছেন।
গোবিন্দ একটু মুখ বেজার করে বলল, এ কেমন যেন। ভৌতিক ভৌতিক তো মনে হল না?
ঢোল খানিক ভেবে বলল, মন খারাপ করছিস কেন ভাই? আসলে ডিজিট্যাল যুগে ভয় বোধহয় কমে গেছে। কিন্তু ভেবে দেখ সেই
কোন মোঘল যুগের বাবর, আকবর এসব লোক কথা বলল তোর সঙ্গে সেটা কি কম? ইতিহাসের হোক আর যাই হোক আসলে এরা তো ভূতই নাকি?
আবার একদিন প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের সঙ্গে দেখা তাদের। মানে তারাই এসেছিল প্রফেসরের বাড়ি। প্রফেসর অবাক।
জিজ্ঞেস
করলেন, তোমরা আবার? আর নতুন তো কোনও আবিষ্কার এখনও করি নি?
ঢোল হেসে বলল, না না স্যার। আমরা আপনার পুরোন আবিষ্কার আবার একবার দেখব।
-কেন কেন সেদিন দেখা হয় নি?
গোবিন্দ বলল, সেদিন আপনি ইতিহাসের ভূতেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন স্যার। আজ আমরা বিজ্ঞানের ভূত মানে
বিজ্ঞানী
ভূতেদের সঙ্গে নেটে কথা বলতে চাই।
-তাই নাকি?
-আসলে আপনি তো একজন বিজ্ঞানী তাই আর কি।
-তা কোন বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলবে?
-এই ধরুন নিউটন, আইনস্টাইন, গ্যালিলিও এই সব আর কি। ঢোল বলল।
-দেখ তাহলে আরও কটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। অন্তত দশদিন।
গোবিন্দ
বলল, কিন্তু আপনি তো সেই ডিজিট্যাল প্ল্যানচেট মেশিন আবিষ্কার করেই ফেলেছেন স্যার। এখন আর দেরি হবে কেন?
বিজ্ঞানী যেন একটু ঘাবড়ে গেলেন। পরে সামলে নিয়ে বললেন, আসলে আমি মেল করে জেনেছি ওনারা এখন পাস্ট ওয়ার্লডে খুব ব্যস্ত।
ঢোল বলল, নতুন কিছু আবিষ্কার করছেন নাকি স্যার?
-তা বিজ্ঞানীদের তো সেটাই কাজ। প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস বললেন, এস আর দিন দশেক পরে। আশা করি তখন সময় দিতে পারবেন।
দিন দশেক পরে এক সন্ধ্যায় আবার সেই রুদ্ধদ্বার ঘরে প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের সঙ্গে ঢোলগোবিন্দ। ঘরে একটা লাল নাইট ল্যাম্প মিটমিট করে জ্বলছে।
টেবিলের ওপরে খোলা ল্যাপটপ। তার থেকে হাত দুয়েক দূরে বসে প্রফেসর চোখ বুজে আছেন। সেই চেনা ডিজিট্যাল ভৌতিক পরিবেশ।
প্রফেসর চেঁচিয়ে উঠলেন, স্যার আইনস্টাইন!
কালো পর্দায় নিজে থেকেই ফুটে উঠলঃ আইনস্টাইন অ্যাট দি রেট পাস্ট সায়েন্স ওয়ার্ল্ড ডট কম। মানে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ইমেল ঠিকানা।
চোখ বুজে আছেন প্রফেসর। সবাই সাগ্রহে অপেক্ষা করে আছে কখন ল্যাপটপে আইনস্টাইনের মুখ দেখা যায়। কিন্তু বদলে টিঁ টিঁ করে শব্দ কান ঝালাপালা করে দেয়। শব্দ থেমে গিয়ে লেখা ফুটলঃ বিজি ফর টেন ডেজ।
চোখ খুললেন প্রফেসর। ল্যাপটপ দেখে বললেন, হল না।
ঢোল বলল, স্যার নিউটন, স্যার নিউটন।
আবার চোখ বুঝলেন। পর্দায় ফুটল নিউটনের ইমেল ঠিকানাঃ আইজ্যাক নিউটন অ্যাট দি রেট পাস্ট সায়েন্স ওয়ার্ল্ড ডট কম।
একটু পরে আবার সেই টিঁ টিঁ করে বিচ্ছিরি আওয়াজ। সেটা শেষ হতে লেখা ফুটলঃ বিজি ফর টেন মান্থ। ওরে বাবা এ আবার ডেজ নয় মান্থ।
ঢোল আর গোবিন্দ মুখ চাওয়াচায়ি করতে থাকে।
চোখ খুলে প্রফেসর বললেন, বললাম না এখন
সব বিজ্ঞানীরা খুব ব্যস্ত। তোদের ভাগ্য খুব খারাপ। তবে আর একটা কারণ-
কি একটা কথা বলতে গিয়ে চুপ করে রইলেন প্রফেসর।
উদগ্রীব ঢোল প্রশ্ন করল, কি কারণ স্যার?
-আমার মনে হয় বিজ্ঞানে তোরা তেমন ভাল রেজাল্ট করিস না হয়ত তাই।
ওরা মনঃক্ষুন্ন হয়ে চলে গেল। কি আর করা যাবে। বিজ্ঞানে ভাল নয় তারা তাই দেখা হল না। তবে ইতিহাস দু’পাতা করে মুখস্থ করেছিল বলেই হয় মোঘল যুগের সম্রাটরা দেখা দিয়েছিল।
কিছুদিন পরে দেখা সেই পরিচালক কুঞ্জবিহারীর সঙ্গে। ওদের কথা শুনে বললেন, দেখ প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস সত্যিই কিন্তু একটা যন্ত্র বার করেছেন।
আমাদের তো জানিয়েছেন।
এরা খুব উৎসাহিত হয়ে পড়ল। তবে ব্যাপারটা মিথ্যে নয়। গোবিন্দ লাফিয়ে উঠে বলল, তাই নাকি?
ঢোল বলল, আপনাকে বলেছেন বুঝি?
এক গাল হেসে ডিরেকটর বললেন, হ্যাঁ তা তো বটেই। তোমরা জান না বুঝি?
দু’জনে সমস্বরে বলে উঠল, কি?
-উনি আবার একটা স্ক্রিপট লিখছেন ওনার দ্বিতীয় আবিষ্কার নিয়ে। এটাও আমি পরিচালনা করব আর তোমরা থাকবে অভিনয়ে।
খুব খুশি দুজনে। বলল, তাই নাকি? কি নাম দিয়েছেন বইয়ের?
-ভূতের সঙ্গে নেট যোগাযোগ। ওটার একটা ইংলিশ ভার্সন হবে- নেট কমিউনিকেশন উইথ দি পাস্ট ওয়ার্ল্ড।
গোবিন্দ মুখভার করে বলল, ইতিহাসের সঙ্গে পারলেন কিন্তু বিজ্ঞানীদের সঙ্গে পারলেন না।
ডিরেকটর ফিসফিস করে বললেন, শোন একটা কথা বলি। কাউকে কিন্তু বল না।
-কি? দুজনে বলে উঠল।
-আসলে উনি একটা ডিজিট্যাল প্রোগ্রাম বার করেছেন যাতে ল্যাপটপ না ছুঁয়েও ল্যাপটপ খুলে যায়। শুধু মাত্র মুখ দিয়ে আওয়াজ করলেই হবে।
শব্দ মানে সাউন্ড সেন্সিং সিস্টেম। এই যে ইমেল ঠিকানা উনি মুখে বলছেন সঙ্গে সঙ্গে সেটা ল্যাপটপে টাইপ হয়ে যাচ্ছে আর-
ঢোল বলল, সাইট খুলে যাচ্ছে?
-আরে না না। সাইট আবার কোথায় পাওয়া যাবে? ভূতেদের কি আবার ইমেল থাকে?
হতাশ ঢোল বলল, থাকে না?
গোবিন্দ হাঁ হয়ে বলল, তবে?
-একটা ভিডিও খুলে যাবে। উনি যখন বাবর বাবর করছিলেন তখন বাবরের ভিডিওটা খুলল। কিন্তু এগুলো ইন্টার অ্যাকটিভ মানে বাটন দিয়ে অপারেট হয়। আবার প্রফেসরের আবিষ্কারে সেই বাবর চুপ করে থাকবে যতক্ষণ না তিনি কোনও প্রশ্ন করছেন। তিনি যেই বাবরকে প্রশ্ন করলেন সঙ্গে সঙ্গে ভিডিওর সেই সিনটা খুলে গেল। এখানে হাতের বদলে মুখের শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। বাবর তখন উত্তর দিল।
এই রকম ভাবে তিনি যখন শাহজাহান বললেন তখন শাহজাহানের ভিডিও খুলল। এখানে ভিডিওগুলো তৈরি হয়েছে ছবির অ্যানিমেশন করে।
অ্যানিমেশন ভিডিও অবশ্য তিনি বানান নি। বানিয়েছে তাঁর এক মাল্টিমিডিয়া এক্সপার্ট বন্ধু। তবে বাকিটা মানে এই যে শব্দ মানে সাউন্ড ধরে ধরে নেটের কাজকর্ম এটা কিন্তু প্রফেসরের ইউনিক জব।
এদের মুখে হাসি ফুটল। তা ভূতের সঙ্গে যোগাযোগ না হোক ভূতুড়ে যোগাযোগ তো বটেই। এ কাজ প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াস ছাড়া আর কেই বা করতে পারে?
ডিরেক্টর বললেন, বন্ধ ঘরে নাইট ল্যাম্পের ভূতুড়ে আলোয় চোখ বুজে টেবিলে খোলা ল্যাপটপ আর তার হাত দুয়েক দূরে প্রফেসরের বোজা চোখ।
তিনি একমনে ইতিহাস বলছেন আর অমনি পর্দায় আসছে ইতিহাসের
ইমেল ঠিকানা- ইতিহাস অ্যাট দি রেট পাস্ট ওয়ার্ল্ড ডট কম। প্রফেসর বলছেন- খোল। অমনি সেই সাইট খুলে যাচ্ছে।
তারপর প্রফেসর বলছেন- বাবর অ্যাট দি রেট পাস্ট ওয়ার্ল্ড ডট কম। অমনি বাবর চলে আসছে পর্দায়। এই তো?
এদের চোখ তো গোল্লা গোল্লা। ঢোল প্রশ্ন করল, আপনি কি করে জানলেন ডিরেক্টর কাকু?
-সত্যি তো। বন্ধ ঘরে তো কারোর চোখের নজর পৌঁছোয় না? গোবিন্দর জিজ্ঞাসা।
-পৌঁছোয়। ডিরেক্টর হাসলেন, পৌঁছোয় ক্যামেরার চোখ।
-মানে? দুজনে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল।
-মানে হল সেই দৃশ্যের ভিডিও রেকর্ডিং সেদিনই হয়ে গেছে। আমরা ক্যামেরা ফিট করে এসেছিলুম। নানা এঙ্গেল থেকে। আর সাউন্ড রেকর্ডিং সিস্টেম।
তোমরা জানতেও পার নি।
ঢোল বলল, এই একটা সিন মাত্র?
গোবিন্দ মুষড়ে পড়ে বলল, মাত্র একটা সিনে সিনেমা কাবার?
-আরে না না। শিগগির হয়ত-
বাকিটা না বলে চোখে একটা ইঙ্গিত খেলিয়ে চলে গেলেন ডিরেকটর।
দশদিন পরে প্রফেসর ক্ষেপচুরিয়াসের ফোন এল। তিনি আজ সন্ধ্যায় ডেকেছেন।
-তার মানে? চোখে মজা ফুটিয়ে ঢোল বলল।
-তার মানে ডিজিট্যাল প্ল্যানচেট। নতুন সিনেমার নতুন সুটিং। হুররে! মজায় হাততালি দিয়ে নেচে উঠল গোবিন্দ।
_________________________________
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন