টেক বাবু
অর্পিতা মালিক
শহরের উপকণ্ঠের এই আবাসনের অতি বিজ্ঞ ও বিদগ্ধ ব্যক্তি হলেন রমেনবাবু। কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নিয়েছেন, বয়স পঁচাত্তর হলেও মনের দিক থেকে এখনও কলেজ পড়ুয়া। প্রযুক্তির প্রতি তার আগ্ৰহ এতোটাই বেশী যে, ছোটরা তাকে আদর করে"টেক দাদু 'বলে ডাকে ।
রমেনবাবু একজন চেইন স্মোকার , তার প্রযুক্তি প্রীতির জন্য তিনি সিগারেট ছেড়ে ই-সিগার বা ভেপ ধরলেন কারণ এতে ক্ষতি কম । সঠিক ভাবে ব্যবহার না করতে পারলেও , তার টুথব্রাশ থেকে শুরু করে সেভিং সেট সবই ইলেকট্রনিক।
তবে সমস্যা হলো , রমেনবাবুর প্রযুক্তি -প্রেমটা একটু ----বেশ খটোমটো ধরনের !মানে ঐ আর কি --- একদিন হঠাৎই তিনি একটা স্মার্ট ফোন
কিনে ফেললেন , বললেন ,"এইটা দিয়ে নাকি লোকজন দুনিয়া চালায় , আমিও চালাব এই ফোন চালিয়ে আমিও স্মার্ট হয়ে যাব '।
. প্রথম দিনেই তিনি ফোনে কথা বলার বদলে নিজেই নিজের কানে ফোন ধরে বলতে থাকলেন ," হ্যালো শুনতে পাচ্ছ ? আমি রমেন-তোমার কাকা '। ফোনের ওদিকে কে ছিল জানা না থাকলেও , ফোন তখনও সুইচ অন করা হয় নি ।
এরপর শুরু হলো তার আ্যপ শেখার উৎসাহ । হোয়াটস অ্যাপ ইনস্টল করার পর প্রতিদিন তিনি অন্তত কুড়িটি সুপ্রভাত মেসেজ পাঠাতেন,যার মধ্যে গোটা আষ্টেক ছিল আ্যনিমেটেড ফুল আর গাদা ফুলে ভর্তি ।কারো জন্মদিন পড়লে এমনভাবে উইশ করতেন যেন জাতীয় উৎসব ।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ফেসবুক। অনেক তথ্য জেনে তিনি প্রোফাইল খুললেন, পরিচিত, অপরিচিত অনেককে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন । সবাই ছবি দেয় দেখে ওনারও ইচ্ছা হলো ছবি পোস্ট করার। অনেক ভেবে চিন্তে তিনি নিজের ছোট বেলার কিছু ছবি ওয়ালে দিলেন। ছবিতে দেখা গেল তিনি উলঙ্গ অবস্থায় পুকুরে স্নান করছেন ।ব্যাকগ্ৰাউন্ডে তার ঠাকুমা জল ভরছেন একটা বালতিতে।
কেউ কিছু বললে তিনি বলেন , "সংস্কৃতি ভুলে গেলে চলে ?এর মধ্যে একটা ঐতিহ্য আছে।'
তার প্রযুক্তির প্রেম যখন তুঙ্গে উঠলো তখন ঠিক করলেন একটা স্মার্ট ওয়াচ কিনলে কেমন হয় ? কিনলেনও , কিন্তু কব্জির বদলে তিনি সেটা পায়ের গোড়ালিতে আটকে হাঁটতে শুরু করলেন । উৎসুক ব্যক্তিদের বললেন," ওয়াকি্ং ট্র্যাকার না ?পায়ে পরলেই তো বোঝা যাবে হাঁটছি !'
সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ছিল একদিন তিনি
নিজে নিজে অনলাইনে মাছ অর্ডার করলেন।
কিন্তু ঐ যা হয় আর কি ভুলবশতঃ বিড়ালের খাবারের আ্যডে ক্লিক করে সেটা অর্ডার দিয়ে ফেললেন । পরদিন সকালে দেখা গেল রমেনবাবু দরজায় দাঁড়িয়ে কুরিয়ার মারফত আসা এক বাক্স "টুনা ফিশ, বিড়ালের খাবার '
ডেলিভারি নিচ্ছেন । পাশের বাড়ির একজন জিজ্ঞেস করলেন, "কি বিড়াল পুষছেন নাকি? '
অম্লান বদনে চেনা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বললেন, "এটা খুবই ভালো,তাই ভাবছি এবার পুষবো'।
নিন্দুকেরা বলে, " আপনি তো মশাই বাঙালি ঘরের গর্ব '।
সগর্বে রমেনবাবু বলেন," টেকনোলজিই হলো আসল হিরো বাকি সব জিরো , যে টেকনোলজি জানে একমাত্র সেই গর্ব করতে পারে । আমি তো শিখছি ----তবে একটু ঘুরপথে '।
এইভাবেই রমেনবাবু " টেক বাবু ' হয়ে উঠেছেন। তার ভুলগুলোই সবার আনন্দের উৎস। তিনি যেন এক চলন্ত কৌতুক --যাকে দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।
______________________________________________________________________________________
অর্পিতা মালিক
৪৬৮ ড্রিম পার্ক, ব্লক-বি ১,
ফ্ল্যাট-১এ
সোনারপুর স্টেশন রোড,
কলকাতা-৭০০১৫০
[চিত্রঃ: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন