Featured Post
গল্প ।। পুটকির কাঠবিড়ালি ।। চন্দ্রমা মুখার্জী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
পুটকির কাঠবিড়ালি
চন্দ্রমা মুখার্জী
পুটকিকে মনে আছে তোমাদের? আরে সেই বাচ্চা মেয়েটা যাকে তার মামা পুটকিপুলি বলে ডাকত। না না, আমরা তাকে সে নামে ডাকব না। সে এখন অনেক বড় হয়েছে তাকে পুটকিপুলি বললে সে ভীষণ রাগ করবে। আমরা তাকে তার ভালনাম মেঘনা না ডেকে তার ডাকনাম পুটকি বলেই ডাকব।
পুটকির আগের গল্পদুটো জানো তো তোমরা? সেই শিমুলতলা গিয়ে খরগোশ আর নারায়ণচক গিয়ে টিয়াপাখি আনা? তো এইবার আমি পুটকি কি করে কাঠবিড়ালি পেলো সে গল্প বলব।
এই শীতের ছুটিতে পুটকি ওর বাবার বন্ধু অমিতকাকুর বাড়ি গিয়েছিল। অমিতকাকুর বাড়ি আমেদাবাদ। খুব সুন্দর, শান্ত আর পরিষ্কার জায়গা। অমিতকাকুর বাড়ি ঠিক আমেদাবাদ শহরে নয়, একটু এগিয়ে গিয়ে গান্ধীনগরের কাছে। সেই জায়গাটা আরও পরিষ্কার। প্রচুর গাছপালা আছে চারপাশে। আর আছে গাছে গাছে প্রচুর পাখি আর কাঠবিড়ালি। এই কাঠবিড়ালির সাথে পুটকির কি করে বন্ধুত্ব হল সেই গল্পই এবার বলব।
২৪শে ডিসেম্বর রাতে পুটকিরা অমিতকাকুর বাড়ি এসেছে। ঐ রাতের অন্ধকারে চারপাশটা কেমন, কি আছে কিছুই বুঝতে পারেনি। পরেরদিন সকালে উঠে পুটকি তো অবাক, এতো সুন্দর জায়গা! কাকুর বাড়ির ঠিক পাঁচিল ঘেঁষেই একটা বড় নিমগাছ, আর তাতে – ওমা, কি অবাক কাণ্ড, একজোড়া কাঠবিড়ালি।
পুটকি তো কাঠবিড়ালি দেখে ভীষণ খুশি। ও আগে কোনদিন সামনে থেকে কাঠবিড়ালি দেখেনি। যা দেখেছে বইয়ের পাতায় আর টিভিতে। তাই পুটকি খুব উত্তেজিত হয়ে উঠল। সারাদিন ঐ গাছটার দিকে তাকিয়ে কাঠবিড়ালি দুটোকে খুঁজে বের করাই ওর একমাত্র কাজ হয়ে উঠল। ও যে ঘরটায় ছিল তার জানলা দিয়ে গাছটাকে পরিষ্কার দেখা যায়।
পরেরদিন থেকে পুটকি পারলে সারাদিন ঐ গাছের তলায় বসে থাকে, ঐ কাঠবিড়ালি দুটোকে ধরবে বলে। ওগুলোকে নাকি ও বাড়ি নিয়ে গিয়ে পুষবে। বাবা শুনে খুব খানিক হেসে বললেন, "কাঠবিড়ালিও আবার কেউ কখনো পোষে, শুনিনি তো। তা এতো গুজরাটি কাঠবিড়ালি, তুই ওর ভাষা তো কিছুই বুঝবি না। তারচেয়ে বরং কলকাতা গিয়ে তোকে কোথাও থেকে বাঙালি কাঠবিড়ালি ধরে এনে দেব, তাহলে চলবে তো?" মা শুনেই রেগে গেলেন, "যেখানে যাবি, একটা না একটা কিছু পোষার জন্য বায়না শুরু করবি। আমি আর তোকে কোথাও নিয়েই যাব না।" শুনে পুটকির মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।
পরেরদিন গান্ধী আশ্রম গিয়েও পুটকির মনটা ঠিক যেন সেখানে ছিল না। বারবার ওর মনে হচ্ছিল যে, কখন ও বাড়ি যাবে আর ঐ কাঠবিড়ালি দুটোকে দেখবে। যদিও গান্ধী আশ্রমও খুব সুন্দর জায়গা। সামনে সবরমতী নদী আর তারধারে আশ্রমের পাঁচিলের গায়ে কোটরে প্রচুর টিয়াপাখি। সেই টিয়াপাখিগুলো সামনে এসে খাবার খেয়ে আবার উড়ে চলে যাচ্ছে। আর সেগুলোকে দেখে অনেকদিন পর পুটকির নিজের সেই টিয়াটার কথা মনে পড়ল।
ওখান থেকে ফিরেই বিকেলে পুটকি ছুটতে ছুটতে বাগানের ঐ নিমগাছটার কাছে চলে এল। কিন্তু কাঠবিড়ালি দুটোকে দেখতে পেল না।
সেদিন সন্ধ্যে হয়ে গেল। পুটকির মনটা খারাপ হয়ে আছে। সকাল থেকে আজ সারাদিন ও একবারও কাঠবিড়ালি দুটোকে দেখেনি। রাতে ঘুমোতে গিয়েও ওদের কথা ভাবতে লাগল।
হঠাৎ ও একটা খুটখুট শব্দ শুনে চমকে উঠল। ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসে দেখে, পাশে মা – বাবা কেউ নেই। সামনে তাকিয়ে দেখে দেওয়ালের গা ঘেঁষে যে টেবিলটা আছে, তার ওপর বসে রয়েছে সেই কাঠবিড়ালি দুটো।
ওকে বিছানায় উঠে বসতে দেখে কাঠবিড়ালি দুটো দৌড়ে দৌড়ে ওর কাছে চলে এল। ওর লেপের ওপর দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ একটা কাঠবিড়ালি অন্যটাকে কানে কানে কি যেন বলল। তারপরই হঠাৎ ওর দিকে তাকিয়ে ওকে ধমকে উঠল, "এই দুষ্টু মেয়ে, তুমি কি ভাবো আমরা গুজরাটি কাঠবিড়ালিরা বাংলা জানিনা বা বুঝিনা? আমরা সব জানি, আমরা তোমাদের মানুষদের মতো নই।"
তখন পুটকি প্রচণ্ড চমকে গিয়ে বলল, "আমি না গো, আমার বাবা ওকথা বলেছে।" কাঠবিড়ালিটা আরও রেগে গিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে উঠল, "তুমি কেমন মেয়ে গো? নিজের বাবার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছো, এতো ভাল কথা নয়।" পুটকি কিরকম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল ঐ কাঠবিড়ালিটার দিকে। ওকি এত রাতে পুটকিকে বকতে এসেছে?
ওর এই হতভম্ব ভাব দেখে এতক্ষণে এবার অন্য কাঠবিড়ালিটা মুখ খুলল। সে বলল, "আহা, ওকে অতো বকছ কেন? বাচ্চা মেয়ে, ঘাবড়ে যাচ্ছে। অন্যের ওপর রাগ করে ওর ওপর সেই রাগটা ঝাড়লে হবে? যা বলতে এসেছ, সেটা বলো, তারপর আমরা চলে যাই।"
তখন অন্য কাঠবিড়ালিটা বলতে শুরু করল, "আমরা ঐ নিমগাছটায় থাকি সেটা তুমি খুব ভালই জানো। এবার বলতো দেখি, ঐ গাছটায় আমরা দুজন ছাড়া আর কোন কাঠবিড়ালি নেই কেন?" বলে চোখ পিটপিট করতে লাগল। পুটকি এবার বলল, "আমি কি করে বলব? তোমাদের ছানা নেই? বাবা – মা নেই?"
কাঠবিড়ালিটা আবার উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, "না নেই। যারা ছিল সব হয় মরে গেছে, নয় এদিক – ওদিক চলে গেছে। থাকবেই বা কি করে? গাছ কেটে ফেললে থাকবে কোথায়? আগে এখানে পাশাপাশি আরও দুটো নিমগাছ ছিল। তোমার ঐ কাকুটা কেটে ফেলল। বলল, "এত নিমগাছ কি হবে। এখন শুনছি এই গাছটাও নাকি কেটে ফেলবে, ফুলগাছ বসাবে। তাহলে আমরা থাকব কোথায় শুনি?"
অন্য কাঠবিড়ালিটা বলল, "পুটকি, তুমি তোমার ঐ কাকুটাকে বলে দেখো না যাতে গাছটা না কাটে।" পুটকি বলল, "ঠিক আছে। আমি বলব।"
একথা বলার পরই পুটকির মনে হল, কে যেন ওকে ঠেলছে। ও চোখ মেলে দেখল, মা ডাকছে, সকাল হয়ে গেছে। ও কোনদিকে না তাকিয়ে খাট থেকে নেমেই কাকুর ঘরের দিকে ছুটল। গিয়েই কাকুকে কাল রাতের স্বপ্নের কথা বলল। সব শুনে কাকু তো অবাক।
বাবা-ই তখন কাকুকে পুটকির আগের কাণ্ডকারখানার কথা বলল। তারপর বলল, "গাছটা কাটিস না। এমনিতেও নিমগাছ তো খুব উপকারী।" সব শুনে কাকুও রাজি হল গাছটা না কাটতে। পুটকি খুব খুশি।
কদিন পর বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরনোর সময় পুটকি গাছটার কাছে গেল। কাঠবিড়ালি দুটোকেও দেখতে পেল। ওর মনে হল, ওরা যেন ওকে বলছে, Thank you।
______________________________________________________________________________________
চন্দ্রমা মুখার্জী
ঠিকানা – বি সি – ৮৩,
সমরপল্লী, কৃষ্ণপুর, কলকাতা – ৭০০১০২
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সূচিপত্র
সূচিপত্র
-
-
- প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৭ অক্টোবর,...
- শিশু-কিশোর ভ্রমণ উপন্যাস ।। তিতলির বিশ্বভ্রমণ (তৃত...
- ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় মাসিক পত্রিকা ।। সপ্তচত্...
- গল্প ।। পুটকির কাঠবিড়ালি ।। চন্দ্রমা মুখার্জী
- গল্প ।। মেজমামা আর রোবু ।। অঞ্জনা মজুমদার
- গল্প ।। আলোয় ফেরা ।। অর্পিতা মল্লিক
- প্রবন্ধ ।। হিন্দু শাস্ত্রে মা দুর্গা ও তার পরিবার ...
- গল্প।। বাবলির বিভ্রান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম
- ছড়া ।। সেদিন ভোরে ।। বদ্রীনাথ পাল
- ছড়া ।। তিনি আমার শিক্ষাগুরু ।। ইলিয়াস পাটোয়ারী
- ছড়া ।। ভাবনা ।। সুশান্ত সেন
- ছড়া ।। এসো আলো ।। গোবিন্দ মোদক
- কবিতা ।। হযবরলর জঙ্গলে ।। দীপক পাল
- ছড়া ।। আশ্বিনে ঝড় ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
- কবিতা ।। ভালবাসার দেশ ।। তপন মাইতি
- ছড়া ।। সুখের খণি ।। অজিত কুমার জানা
- ছড়া ।। মায়ের আশীষ ।। বিদ্যুৎ মিশ্র
- ছড়া।। পড়লো কাঠি ঢাকে ।। দিলীপ কুমার পাত্র
- ছড়া ।। পুজো এসেছে ।। শংকর হালদার
- ছড়া ।। সোনা ব্যাঙের বিয়ে ।। সামসুন্নাহার ফারুক
- ছড়া ।। একা একা ।। অমিত কুমার রায়
- ছড়া ।। শিকার ধরে ব্যাঙ ।। রানা জামান
- ছড়া ।। শরতের গান ।। অর্ণব সামন্ত
- ছড়া ।। বিজ্ঞানের ছড়া ।। সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়
- ছড়া ।। চাঁদের বুড়ি ।। প্রবোধ কুমার মৃধা
- ছড়া ।। ময়না ও খোকন সোনা ।। বাপন মান্না
- ছড়া ।। রঙিন ছবি ।। আসগার আলি মণ্ডল
- ছড়া ।। চেনা দায় ।। তপন কুমার বৈরাগ্য
- ছড়া ।। অসুর ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
- ছড়া ।। ভালো দাদু ।। জীবন সরখেল
- ছড়া ।। উৎসবের ছুটি ।। শেখ মোমতাজুল করিম শিপলু
- ছড়া ।। চাঁদের দেশ ।। সুমিতা চৌধুরী
- কবিতা ।। বিদ্যাসাগর ।। পাভেল আমান
- ছড়া ।। যেমন খুশি ।। অজয় বিশ্বাস
- ছড়া ।। মোটা মুটি ।। নজমুল ইসলাম খসরু
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন