Featured Post
ছোটগল্প ।। মামাবাড়ির আম ।। চন্দ্রমা মুখার্জী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মামাবাড়ির আম
চন্দ্রমা মুখার্জী
পিকলু এবছর গরমের ছুটিতে মামাবাড়ি গিয়েছে। না, নিজের মামাবাড়ি নয়, সে তো এই কলকাতা শহরেই। ও গিয়েছে ওর বাবার মামাবাড়ি ফরাক্কায়। আসলে হয়েছে কি, পিকলু আম খেতে খুব ভালবাসে। তো বাবার মামাবাড়িতে মামাদের অনেকগুলো আম গাছ, তাতে প্রচুর আম হয় – হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলী আরো কতকিছু। এর আগে ঠাকুরমা বেঁচে থাকতে ছোটবেলায় ও অনেকবার গিয়েছে ঠাকুরমার সাথে। এখন প্রায় আটবছর আর যায়নি। পিকলু গতবছরই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। তখনই জানতে পেরেছে, বাবার ছোটমামার ছেলেও ওর কলেজেরই সিনিয়র, থার্ড ইয়ারে পড়ে। কলেজ হস্টেলে থাকে। আমের গল্প তো আগে থেকেই ঠাকুরমা, বাবার কাছে শুনেছে। তাই কাকু যখন বলল, ওর সাথে ছুটিতে ওদের বাড়ি আম খেতে যেতে, ও রাজি হয়ে গেল।
সেখানে গিয়ে কিরকম আম খাওয়া হল আর কি কাণ্ডটাই না হল, এবার সেটাই বলি।
পিকলুর ওই কাকুর নাম লালু। যেহেতু এক কলেজে পড়ে, তাই সকলের সামনে কাকু না বলে লালুদা বলে। যদিও লালু ডাকনাম, তাও বলে।
যাকগে, দিনতিনেক হল পিকলু আর লালু ফরাক্কার বাড়িতে এসেছে। এসেই তো দুবেলা, তিনবেলা করে আম খাচ্ছে। সকাল, বিকেল, রাত্তির। ছোটদাদু তো খুব খুশি ওকে পেয়ে। বাকি আরও তিনদাদুও খুশি। সবাই ওকে জিজ্ঞেস করছে, ওর বাবা-মার খবর। বড়দাদু তো কত গল্প শোনাল, ছোটবেলায় বাবা আর ছোটদাদু কি কি দুষ্টুমি করত একসাথে। আর ওদের সঙ্গী ছিল ছোট ঠাম্মা মানে বাবার ছোট মাসি, বড়দাদুর মেয়ে বুলিপিসি আরো পাড়ার কেউ কেউ। ছোটদাদু তো বলেই দিল – "আমি আর তোর বাবা নন্তু যেরকম আম পাড়তাম, তোরাও এবারে সেরকম কর দুজনে।"
পরশুদিন সারাদিন হই-হই করে কাটানোর পর রাতে সবাই শুয়ে পড়েছে। ওদের পাশাপাশি দুটো বাড়ি। দুই বাড়িতে দুইতলা মিলিয়ে চার দাদু থাকেন। বাড়ির পিছনদিকে বড় বাগান, তাতে আম ছাড়াও কলা, পেয়ারা, পেঁপে ইত্যাদি গাছ আছে। পিকলু শুয়েছিল লালুর সাথে, লালুরই ঘরে।
হঠাৎ মাঝরাতে লালু ওকে ধাক্কা দিল, "এই পিকলু ওঠ্।" পিকলু চোখ মেলতেই বলল, "চল্ বাগানে, আম কুড়োব।" পিকলু বলল, "সে কি রে, লালুদা! এই মাঝরাতে আম কুড়োবি কিরে!" লালু বলল, "দূর বোকা। আমরা ঘুমনোর পর দশমিনিট ভালো ঝড় হয়েছে, তারপর কয়েক পশলা বৃষ্টি। ওতেই অনেক আম পড়ে যাবে। সেগুলোই কুড়োব।" পিকলু বলল, "থাক্ না, কাল সকালে কুড়োব। এত রাতে কেউ বাগানে যায়!" "আরে, তুই জানিস না, সকাল হলে বড়জেঠুর নাতি-নাতনি মিমি – মিতুল চলে আসবে। মেজদাও আসবে। তখন ভাগ কম পাব। চল্ না, ভাইপো আমার।" – লালু একেবারে কেঁদে পড়ল। অগত্যা পিকলু রাজি হল এই নৈশ অভিযানে যেতে।
বাগানে একটা টর্চ নিয়ে দুজনে আম কুড়োতে লাগল। বাগানের পিছনে একটা পুকুর আছে, উল্টোদিকের ঘোষদের বাড়ির পুকুর। ওরা যখন আম কুড়িয়ে চলে আসছে, হঠাৎ পুকুরপাড়ে একটা ধুপ করে আওয়াজ পেল। ওটা কিসের আওয়াজ?
পিকলুর ছোট থেকেই সাহসটা কিছু বেশিই আছে, সেইসঙ্গে লালু জুটেছে, যে কি না আবার চিরকালই খুব ডানপিটে। ব্যস, দুজনে মিলে চলল আওয়াজের উৎস খুঁজতে।
পুকুরের কাছাকাছি একটা বড় গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ওরা দেখতে পেল, দুজন লোক পুকুরের পাড়ে একটা থলি নামিয়ে নিচুস্বরে কি সব আলোচনা করছে।
পিকলু ফিসফিস করে বলল, "কি বলছে বল্তো?" লালু মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে ইশারা করল। একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওরা বুঝল, ওই লোকদুটো থলির জিনিসগুলো ভাগাভাগি করছে। তারপর ভাগাভাগি হয়ে যেতেই একজন বলল, "ফট্কে, কাল তাহলে আমরা পাশের পাড়ায় যাব। আজ তো বৃষ্টি এল বলে, বেশিদূর যেতে পারলাম না।" অন্যজন বলল, "তা যা বলেছো, হাবুল। খুব জোর বেঁচে গিয়েছি। বাজ পড়েই নয়তো আজ মারা পড়তাম।" "ওরে, ঐ বাজ পড়ল বলেই তো দীপেন সেন-রা আর আমাদের তাড়া করে আসতে পারল না। আগামী দুদিন এ পাড়ায় সবাই সজাগ থাকবে। তাই কাল ওপাড়ায় যাব।" – হাবুল বলল।
এরপর ওরা চলে গেল। লালু আর পিকলুও বাড়ি ফিরে এল।
ঘরে ঢুকে পিকলু বলল, "পাশের পাড়ায় যাবে আর কেউ ধরতে পারবে না? এ পাড়ার চুরির খবর পাশের পাড়ায় কেউ জানবে না কি করে?" লালু বলল, "পাশের পাড়া বলতে নদীর ওপারে বোঝাচ্ছে। এখানে সবাই তাই বলে। তাই একরাতের মধ্যেই অতদূর খবর পৌঁছবে না। তবে আমি ওই হাবুল আর ফটিককে চিনি। ওরা থাকে নদীর ওপারেই। এদিকে আসে লোকের বাড়ি কল-পাইপ সারাতে। রাতে যে আবার চুরিও করে সেটা তো জানতাম না। দীপেনকাকাদের বাড়ি চুরি করেছে। কাল সকালে কাকাকে জানাতে হবে।"
পিকলু বলল, "একটা কিছু তো করতেই হবে, যাতে কাল ওদের হাতে-নাতে ধরা যায়।" "কি করবি? পুলিশকে বলে কাল সকালে ওদের বাড়ি থেকে ধরিয়ে দিবি?" -লালু বলল। "কিন্তু তাতে তো ওরা জিনিস আগে থেকে সরিয়ে ফেললে বিনা প্রমাণে ছাড়া পেয়ে যাবে, লালুদা।" – পিকলু বলল। হঠাৎ পিকলুর মাথায় একটা আইডিয়া এল।
"কাল যদি রাতে ওদের বাড়ি থেকে ওদেরকে কেউ ফলো করে? কেমন হয়?" – পিকলু বলল। "কিন্তু করবে টা কে?" – লালু বলল। "দাঁড়া, ছোড়দার এক বন্ধু আছে, ওপাড়ার থানায় কাজ করে, ওর সাথে কাল কথা বলছি।" – লালু ভেবে বলল। তারপর ওরা দুজন শুয়ে পড়ল।
তারপর আর কি? পরেরদিন সকালে ওরা বাড়ির সবাইকে ঘটনাটা বলল। গোটা পাড়ায় সবাই চুরির কথা জেনে গেল। কিন্তু কে বা কারা চুরি করেছে, সেটা ওরা পাড়ার কাউকে বলল না। যদি কোনভাবে চোরদুটোর কানে পৌঁছে যায় আর ওরা জিনিস সরিয়ে ফেলে আর চুরি করতে না বেরোয়। রাতে ওরা দুজন, ছোড়দা, ছোড়দার বন্ধু আর থানার বাকি সব পুলিশরা ওদের ধরে ফেলল। চুরি যাওয়া জিনিসগুলো ওদের বাড়িতেই ছিল। ওগুলোও পেয়ে গেল।
আজ সকালে গোটা গ্রাম পিকলু আর লালুকে নিয়ে হইচই করছে। ওদের জন্যই তো চোর ধরা সম্ভব হল। আমার গল্পটিও ফুরোলো।
কিন্তু আমের সাথে গল্পের কি সম্পর্ক ভাবছ তো, আরে বাবা, ঐ আমের জন্যই তো সব। আমের লোভে না বেরোলে কি আর চোর ধরা পড়ত? তোমরাই বলো।
___________________________________________________________________________________
চন্দ্রমা মুখার্জী
ঠিকানা – বি সি – ৮৩, সমরপল্লী,
কৃষ্ণপুর, কলকাতা – ৭০০১০২
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সূচিপত্র
সূচিপত্র
-
-
-
- প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। কিশলয় ৪৬ ।। সেপ্ট...
- নিবন্ধ ।। বাঁচাও সবুজ জাগাও সবুজ ।। মানস কুমার সেন...
- ছোটদের আঁকিবুঁকি ।। কিশলয় মাসিক পত্রিকা ।। ষটচত্বা...
- গল্প ।। দিঘী ও টিয়াপাখি ।। অনুরাগ ভৌমিক
- গল্প ।। আগ্নেয়গিরির পাহাড়ে বিপদ ।। অঞ্জনা মজুমদার
- গল্প।। জাদুকরী ঘুড়ি।।ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ
- ছোটগল্প ।। মামাবাড়ির আম ।। চন্দ্রমা মুখার্জী
- কবিতা ।। মিতালি ।। সুশান্ত সেন
- ছড়া ।। খোকার ইচ্ছা ।। দীনেশ সরকার
- ছড়া ।। ভেবে দেখিস ।। সুজন দাশ
- ছড়া ।। দাদু ।। নজমুল ইসলাম খসরু
- ছড়া ।। শারদ শারদ দূর্গা আদর ।। বিবেকানন্দ নস্কর
- ছড়া।। পুজো এলো ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল
- ছড়া ।। সুকন্যে ।। সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়
- ছড়া।। সবাই সেরা ।। গোবিন্দ মোদক
- ছড়া ।। সেদিন দেখি ।। বদ্রীনাথ পাল
- ছড়া ।। খোকার বায়না ।। শেখ মোমতাজুল করিম শিপলু
- কবিতা ।। রাত্রিযাপন ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
- কবিতা ।। ভালোলাগে ।। পাভেল আমান
- কবিতা ।। মুঠোফোন ।। জীবন সরখেল
- ছড়া ।। শরৎকালের দেশ ।। রানা জামান
-
-
-
-
-
-
-
-
-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন