Featured Post
ছোটগল্প ।। একটি গাছ একটি প্রাণ ।। সুজয় সাহা
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
একটি গাছ একটি প্রাণ
সুজয় সাহা
বিকেলবেলা স্কুল ছুটির পর শৈবাল ও অর্কন দুই বন্ধু একসাথে বাড়ি ফিরছিল পাড়ার শিশু উদ্যানের পাশের রাস্তা দিয়ে। হঠাৎ রাস্তায় যেতে যেতে তারা লক্ষ্য করল যে পাড়ার শিশু উদ্যানের বেশ কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। তখন শৈবাল বলল–দেখ গাছগুলোর ওপর কেরকম ভাবে নির্মম অত্যাচার করা হচ্ছে। গাছ মানুষের বন্ধু। গাছ নানাভাবে আমাদের উপকার করে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, অক্সিজেন, ওষুধ ইত্যাদি আমরা গাছ থেকে পাই। গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। প্রানী জগতের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্ভিদের বিকল্প নেই। গাছ আছে বলেই পৃথিবী আজও বসবাসের যোগ্য। যেসব এলাকায় গাছের পরিমাণ বেশি সেখানে বন্যা ও ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ কম। গাছপালা মানুষকে সন্তানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। এগুলো কেউ আর ভাবছেনা।
তখন অর্কন শৈবালকে বলল–শুনছিলাম এই জায়গায় একটি বহুতল নির্মিত হবে। সেইজন্য মনে হয় গাছগুলো সব কেটে ফেলা হচ্ছে। অর্কনের কথা শুনে শৈবাল ভ্রারাক্রান্ত মনে বলল–মানুষ কী একেবারে মুরখের জগতে নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছে নাকি রে? নিজের সুখ আহ্লাদ, বিলাসিতার কারণে একটা প্রান কেড়ে নেবে? সবচেয়ে বেশি দুঃখের বিষয় কী জানিস একটি গাছ মানে একটি পুরো প্রানকেই প্রকৃতি মাতার কোল থেকে চিরতরে নির্মূল করে দিচ্ছে। এরা মানুষ নয় মানুষ নয় আস্ত কসাই। অর্কন শৈবালের কথায় সহমত হয়ে বলল–হ্যাঁ রে যা বলেছিস তুই একবার মনে করে দেখ আগে আমাদের বিদ্যালয়ের চারপাশে গাছগাছালির ছড়াছড়ি ছিল। আর এখন বহুতল, রেস্তোরাঁ, শপিং মল ইত্যাদির হাট সেখানে। মানুষ যে আর কবে বুঝবে তার প্রকৃতি, পরিবেশ ও বৃক্ষ বন্ধুদের মর্ম। শৈবাল অর্কনের হাতটি চেপে ধরে বলল–চল না রে আমরা দুজনে যদি এই গাছ কাটা কোনোভাবে আটকাতে পারি। আর বহুতল হবে তো হোক তাই বলে এভাবে গাছেদের কষ্ট দেবে কেন?
অর্কন তখন শান্তনা দিয়ে তাকে বলে–দেখ যেটা হবার সেটা তো হবেই। সেখানে তো তোর বা আমার কোনো হাত নেই। সেটা আজ হোক বা কাল। নিয়তি তো খন্ডানো যাবে না। তার চেয়ে বরং ছেড়ে দে বাড়ি ফিরে যাই এখন। শৈবাল কিছুতেই হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। নাছোড়বান্দা হয়ে ছুটল কাঠুরেদের কাছে। বলতে লাগল– বলছি কাকুরা তোমরা এভাবে গাছেদের ব্যাথা দিচ্ছ কেন? শোনোনি যে গাছেরও প্রান আছে। আমাদের মতো ওদেরও কষ্ট হয় তো নাকি ব্যাথা লাগলে। সেটা কী তোমরা কেউ বুঝতে পারছোনা। একজন কাঠুরে বেশ ক্ষিপ্ত মেজাজে বলল–গাছগুলো সব কী বাবার জমিদারির মধ্যে পড়ে যে আমাদের কাজে ব্যাঘরা দিতে এসছিস। শৈবাল এরপর করুন মুখে অর্কন কে বলল–চল ভাই বাড়ি ফিরে যাই। এদেরকে কিছু বলে লাভ হবে না। আমাদেরকেই কিছু একটা করতে হবে। অর্কনের বাবার বন্ধু চেয়ারম্যান সেই সুবাদে শৈবালকে সে বলল– আজ চেয়ারম্যান কাকু ক্লাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন বিষয়ে একটি মিটিং ডেকেছে সন্ধাবেলায়। সেখানে আমাদের সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন তিনি। আজ সন্ধাবেলায় ভাবছি আমরা দুজনে সেখানে যাবো এবং আমাদের সমস্যার কথা ব্যক্ত করবো।
সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিল সেখানে। তখন শৈবাল এবং অর্কনের মুখ দেখে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন–কীরে তোদের কোনো সমস্যা হয়েছে?
শৈবাল তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল–দেখুন না কাকু যেই পার্কে আমরা বন্ধুরা মিলে খেলাধুলা করতাম সেই পার্কের জমিতে নাকি বাড়ি হবে শুনছি। সেইজন্য পার্কে যত গাছপালা রয়েছে সবগুলো কাটা পড়ছে একের পর এক। এটা কি কোনোভাবে আটকানো যায় না?
চেয়ারম্যান কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করার পর বললেন–সবটাই তো শুনলাম কিন্তু তোরা হচ্ছিস দেশের নতুন প্রজন্ম এক্ষেত্রে তোদেরকেই কিছু করতে হবে। সত্যিই তো গাছ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনধারনের জন্য গাছের ভূমিকা অপরিসীম। গাছ না থাকলে এই পৃথিবীতে কোনো প্রানের অস্তিত্ব টিকে থাকবে না। পৃথিবীতে দূষণ বাড়বে হুহু করে। এভাবে অকথ্যভাবে গাছ কাটা উচিত নয়। আগামীকাল বিশ্ব পরিবেশ দিবস তোরা সবুজায়ন ধ্বংসের বিরুদ্ধে রুখে দাড়া আন্দোলন কর। তারপর তো আমি আছি সাহায্য করার জন্য।
পরের দিন, যেই কাঠুরেরা গাছ কাটতে আসলো সেই মূহূর্তে শৈবাল ও অর্কন অবশিষ্ট একটি গাছকে প্রায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। পার্কের সামনে ভিড় জমে গেল। ভিড়ের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন এগিয়ে এল শৈবাল দের এই গাছ বাচানোর আন্দোলনে উৎসাহ প্রদানের জন্য। এগিয়ে এলেন চেয়ারম্যান সাহেব। তখন শৈবাল কাঠুরেদের উদ্দেশ্যে বলল–নাও গো কাটো গাছ। আজ কিন্তু গাছ কাটার হলে আমাদেরকে ও কাটতে হবে । কোনো উপায় না পেয়ে কাঠুরের দল সেখান থেকে চলে যায়। শৈবাল তার গাছ বাচানোর আন্দোলনে সফল হয়।
____________________________________________________________________________________
নাম:সুজয় সাহা
62/A 3 নং নতুনগ্রাম, হুগলি।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন