অঞ্জলি দেনন্দী, মম
বাবা সালকিয়াতে থাকতো। বৌবাজার চাকরী করতো। প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় চৈতন্যবাটীতে আসতো। আর রবিবার বিকেলে আবার চলে যেত। আমি, মা, ভাই, বোন, দাদু, ঠাকুমা, পিসিমা চৈতন্যবাটীতে থাকতুম। দু কাকা বাবার কাছে ওখানে থাকতো। আর দু পিসীমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।
আমরা ভাই বোনেরা তখন ছোট। মা অন্য ছ'দিন আমাদের চান করাতো। আর বাবা রবিবার দুপুরে আমাদের নিয়ে খিরকি ঘাটের জলে নামাতো। সবার ছোট বোন একদম ছোট তাই তাকে চান করিয়ে বাবা বাড়ি পাঠিয়ে দিত। কাছেই ছিল বাড়ি। এরপর বাবা দু হাতে দুটি গামছা আমার ও ভায়ের পেটের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে ধরতো। আমরা উপুড় হয়ে জলের ওপরে ভেসে থাকতুম। বাবা পিঠের ওপর ওই গামছা দুটির দু প্রান্ত একসঙ্গে করে টেনে তুলে ধরে থাকতো। আমরা বাবার দু হাতে ধরা দু গামছায় আটকে জলের ওপরে খুব হাত ও পা ছুঁড়তুম। সেখানে জলের গভীরতা আমাদের বুক পর্যন্ত। আর বাবার তো অনেকই কম। মাঝে মাঝেই বাবা গামছা দুটো খুলে নিত। আমরা তো সাঁতার কাটতে কাটতে হঠাৎই তখন আর ভেসে থাকতে পারতুম নি। খানিকটা জল খেয়ে ফেলতুম। এরপর আমাদের পা জলের নিচের মাটি স্পর্শ করতো। এবার বাবা আবার আমাদের গামছায় বেঁধে ধরে আর একটু বেশি জলে নিয়ে যেত। আমাদের দেহ গামছায় আটকে দু হাতে তুলে ধরে থেকে সাঁতার কাটাতো। এরপর বাবা আবার গামছা খুলে নিত। আর ঝটপট নিজে পাড়ের কাছে সরে গিয়ে বলতো, "আয়! আমার কাছে সাঁতরে আয়!" আমরা দুমদাম হাত, পা ছুঁড়ে জলের ওপরে, দম বন্ধ করে কোনপ্রকারে বাবার কাছে এসে পৌঁছোতুম। এভাবে অনেকক্ষণ চলতো আমাদের সাঁতার শেখা। মা তো কলকাতার মেয়ে ছিল, আগে আমাদের নিয়ে, দেওরদের নিয়ে, স্বামীর সঙ্গে একসঙ্গেই সালকিয়াতেই থাকত। এখন চৈতন্যবাটীতে থাকে। তাই সাঁতার জানতো না। এভাবেই বেশ ক'টা রবিবার কেটে গেল। এবার বাবা নিজে সাঁতরে, আমাদের ধরে, মাঝ পুকুরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল। আর বাবা একা সাঁতরে পাড়ের দিকে আসতে লাগলো। আমাদের বলল, "আমার কাছে আয়!" আমরা সাঁতরে বাবাকে অনুসরণ করে ঘাটের দিকে আসতুম। পুরোপুরি সাঁতার শিখে গেলুম। বাবা ও আমরা তখন অনেকবার খিরকি পুকুরের এ পাড় থেকে ও পাড় সাঁতরে যেতুম ও আসতুম।
এরপর বাবা আমাদের নিয়ে দামোদর নদের জলে একসঙ্গে সাঁতার কাটতো। আমরা খুব আনন্দের সঙ্গে সাঁতার কাটতুম।
এরপর বহু বছর কেটে গেছে। আমার বিয়ে হয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে দিল্লীতে এসে পতির সঙ্গে থাকি। বরের সঙ্গে ভ্রমণ করতে গিয়ে সাগর ও মহাসাগরে দুজনে সাঁতার কাটি।
এরপর আমাদের ছেলে জন্ম নিল। সে বড় হল। স্কুলের সুইমিং পুলে শিক্ষকের কাছে সুইমিং শিখলো। তারপর আমরা তিনজনে মিলে হরিদ্বার গিয়ে গঙ্গায় সাঁতার কাটলাম। তারপর আবার তিনজন মিলে বেড়াতে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে, আরবসাগরে এবং ভারত মহাসাগরে সাঁতার কাটলাম।
এরপর ছেলে আরও বড় হল। ভারতের বাইরে, বিদেশে থাকলো। আমরাও তার সঙ্গে বিদেশে থাকি। একসঙ্গে তিনজন মিলে নানা দেশে ঘুরি। আর অবশ্যই নানা বিদেশী সমুদ্রে সাঁতার কাটি। বয়স কিন্তু সাঁতার কাটতে বাধা দেয় না। আশা করছি এরপর আমাদের পুত্রবধূও আমাদের তিনজনের সঙ্গে একসঙ্গে সাঁতার কাটবে.............
_________________________________________________________________________________
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন