[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
বিশ্ব মানবতার আলোকে শবে বরাতের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা
পাভেল আমান
সারা জাহান মুসলিমদের কাছে শবে বরাত একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। শবে বরাত অত্যন্ত মহিমান্বিত প্রভূত বার্তা বাহক মুসলিম মানসে। সেই চিরন্তন গুরুত্বকে মনেপ্রাণে উপলব্ধ করে মুসলিমরা শবে বরাতের মহানুভবতা আধ্যাত্মিকতা বাস্তবিক জীবনে ইসলামকে আরো বেশি মনে প্রানে আঁকড়ে ধরে। পুরো বিশ্বব্যাপী মুসলমান সম্প্রদায় কাছে একটি প্রায়শ্চিত্তের রাত ও মুক্তির রাত বলে বিশ্বাস করে। তাই সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রতিবছর এটা বিশ্বাসের সাথে পালন করে। হাদিসে অনুসারে নবী মুহাম্মদের কথা অনুযায়ী শবে বরাতেকে এমন একটি রাত হিসাবে বিবেচনা করা হয় যখন মহান আল্লাহ আগামী বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই রাতে রহমত ও ক্ষমার দরজা প্রশস্ত খোলা থাকে এবং মানুষ তার অসীম রহমতের জন্য আল্লাহর কাছে যেতে পারে। এই রাতে মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কে কি তার কাছ থেকে এই রাতে চেয়ে নিচ্ছেন। এ কারণেই শবে বরাত সমস্ত মুসলমানদের জন্য বরকতময় পূর্ণ একটি রাত।হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সৌভাগ্যের রাত হিসাবে পালন করেন। এই রাতে ধর্মপ্রাণদের জন্য কৃপার দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ। তাই এই রাতটি পবিত্র শবে বরাত হিসাবে পালিত হয়। তাছাড়া অনেক সময় ইংরেজি ক্যালেন্ডার বা আরবি ক্যালেন্ডার গুলোতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী অনেক সময় শবে বরাতের উল্লেখ করা থাকে যেটা নির্দিষ্টভাবে সে তারিখ প্রদান করা হয় না যে ওই দিনেই শবে বরাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর ইংরেজি ক্যালেন্ডার এর একই দিনে শবে বরাত অনুষ্ঠিত হয় না কারণ আরবি মাসগুলো কখনো ২৯ দিন বা কখনো ৩০ দিনে হয়ে থাকে। তাই ২০২৩ সালে শবে বরাত কবে এ বিষয়টি নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা অসম্ভব একটি বিষয়। ইসলামের ধর্মের বিশেষ বিশেষ দিন বা উৎসব গুলো আরবি মাসের চাঁদের উপর নির্ভর করে। এবছর ৮ মার্চ পালিত হলো শবে বরাত।
শবে বরাত মুসলিমদের কাছে এককথায় রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে, কারণ আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে শাবান মাসের পরেই আসে রমজান মাস। শবে বরাত অনুষ্ঠিত হওয়ার পনের দিন পরেই সাধারণত রমজান মাস শুরু হয়ে যায়। যখন শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর দিনে সিয়াম পালন করবে। শবে বরাত মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দা দের জন্য বিশেষ উপহার। তাই এ রাত সম্পর্কে আমাদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। রাতটি ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে হবে। পবিত্র এই রজনীতে আমাদের সবার উচিত নিজের যাবতীয় গোনাহের জন্য তাওবা করে রাব্বুল আলা মিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। মনের নেক আশা আকাঙ্খা পূরণে ও মৃতদের মাগ ফেরাতের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা।মুসলিমরা শবে বরাতকে তিনটি সবচেয়ে পবিত্র রাতের একটি হিসেবে বিবেচনা করে এবং বিশ্বাস করে এই রাতে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতালা ভাগ্য নির্ধারণ করেন রিজক এবং জীবিকা পরবর্তী বছরের জন্য। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বব্যাপী মানবজাতির কল্যাণ কামনার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা 'শবে বরাত' নামেই অধিক পরিচিত। পরিশেষে শবে বরাত পালনের মধ্যে দিয়ে আমাদের মধ্যে বিদ্বেষ বিভাজন হতাশা অনৈক্য ভেদাভেদের বিনাশে জেগে উঠুক মনুষ্যত্ব সংহতি সম্প্রীতি শান্তির বাতাবরণ। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নেমে আসুক বিশ্ব মানবতা সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন। পরিশেষে একটি কথা ধর্মীয় আদর্শ মূল্যবোধ বিবেক চেতনা নৈতিকতার আত্মিকতাই জেগে উঠুক বিশ্বমানবতা নির্মূল হোক হিংসা-বিদ্বেষ ক্রোধ বিভাজন ও নৃশংস অমানবিকতা। পথ চলাতে সেই চিরন্তন ধর্মীয় উদারতা সহিষ্ণুতা স্থিতিশীলতা সর্বোপরি মানবিক ভাবনাকে পাঠিয়ে করে হয়ে উঠি প্রকৃত মানুষ। শবে বরাতের অন্তর্নিহিত অর্থ ও প্রাসঙ্গিকতা অনুধাবনে বিশ্ব ব্যাপী মুসলিমদের মধ্যে নেমে আসুক বিশ্বশান্তি মানবতাবোধ।
____________________________________________________________________________________________________________
পাভেল আমান
হরিহরপাড়া, মুর্শিদাবাদ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন