আকাশের কথা
মনোরঞ্জন ঘোষাল
ছোট বেলায় দিনের আলোতে মাঝে মাঝে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতাম। গামলার মত উল্টানো নীল আকাশ। মাথার উপরে ছাদের মত আমাদের ঘিরে রেখেছে। কত বড় সে। যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্ত সে ছড়িয়ে রয়েছে। সামনের ঐ ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে দূরে জঙ্গলের ওপারে যেন মিশে গেছে। দিনের বেলায় সূর্য তার গা বেয়ে এক দিক থেকে অন্য দিকে চলে যায়।
সূর্য ঠিক সময় ধরে নিয়ম করে রোজ এমনটি করে।
মেঘেরা ঐ আকাশের কোল দিয়ে উড়ে যায়। কত পাখি ওড়ে। তবে তারা আকাশের কোলের কাছে মেঘেদের মত যেতে পারে না।
তবে উড়োজাহাজ একেবারে আকাশের গা বেয়ে যেতে পারে। কখনও মেঘেদের থেকেও উপরে একেবারে আকাশের গা ঘেঁসে চলে।
ঘুড়ি যেতে পারে না। হয়তো পারে, অত সুতো কোথায়? আবার বেশি দূর পাঠালে ওরা সুতো ছিঁড়ে চলে যায়।
গরমের সময় জমির আলে বেনার গোড়ায় বাঁসা বাঁধে যে ছোট ছোট ভরা পাখি গুলো। তারাও আকাশকে ছুঁতে ছুটে যায়। পারে না। কিছুটা উপর দিকে উঠে ধপ করে নীচে নেমে আসে। ঠিক ঢিল ছুড়ে দেবার মত।
তখন থেকেই আমি ভেবেছিলাম, আকাশটা আসলে আমাদের মাথার উপর নীল রঙের একটা কাপড়ে তৈরী চাঁদোয়া।
রাতের অন্ধকারে সেই নীল রঙ দেখা যায় না। সব কালো হয়ে যায়। ঐ চাঁদোয়ার গায়ে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে চাঁদ। তবে সে সূর্যের মত নিয়ম করে গোটা রাত ধরে, এপার থেকে ওপারে যায় না। কখন হনুমানের মত কোথা থেকে লাফিয়ে পড়ে সেই চাঁদোয়ার গায়ে। আবার কখন চলে যায়।
তারারা সকলে ঐ আকাশের গায়ে লুকিয়ে থাকে। চাঁদের মত নড়াচড়া করে না। অনেকে চাঁদকে ভয় পায়। তাই লুকোচুরি খেলার মত টুকি টুকি করে। তবে সকলে না। অনেকেই বুক ফুলিয়ে পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে থাকে নিজেরা।
ভারী সুন্দর লাগত দেখতে। মাঝে মাঝে মনে হতো যেন কালো কাপড়ে কেউ ছোট বড় চুমকি বসিয়ে দিয়েছে।
এমন ভাবনা নিয়ে দিন চলে গেল। আমি বড় হয়ে উঠলাম।
লেখাপড়া করছি। একদিন জানতে পারলাম ও আকাশ চাঁদোয়া, তবে কাপড়ের তৈরী নয়। আসলে আকাশ বলে অমন কিছু নেই।
বেশ অবাক হলাম! তাহলে সূর্য, চাঁদ কোথায় হাঁটে? তারারাই বা কোথায় থাকে?
আরো অবাক হলাম জেনে যে, ওরা সকলে ভেসে বেড়ায় শূন্যে।
______________________________________________________________________________
মনোরঞ্জন ঘোষাল
আত্মারামপুর
পশ্চিম রামেশ্বরপুর
বজ বজ
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা
পিন 700140
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
আমার
উত্তরমুছুন