Featured Post
গল্প ।। শীত বুড়ির কথা ।। দীপক পাল
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
শীত বুড়ির কথা
দীপক পাল
- ' এই দাদাভাই, কখন উঠবি ঘুম থেকে? বিকেল হয়ে গেছে তো অনেকক্ষণ। চল না, আমরা দুজনে খেলি।'
ধড়মড় করে উঠে বসলো বাবুসোনা। চোখ দুটো কচলে নিয়ে এদিক ওদিক চেয়ে চট করে উঠে দাঁড়াল। কল্পনা মাসী ওদের পাশে শুয়ে ছিল, পাশ ফিরে শুলো এখন। অন্য একটা ঘরে ওদের মায়েরা বক বক করছে খালি। হেসেও উঠছে মাঝে মাঝে। গতকাল বাবুসোনারা রাত সাড়ে আটটায় দুর্গাপুরে সোনামণিদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে মাত্র দু দিন তিন রাতের জন্য। সোমবার সকালেই কলকাতায় ফিরে যাবে। সোনামনির বাবা অনিরুদ্ধ হসপিটাল ডিউটিতে গেছে। মা আজ হসপিটাল ডিউটিতে যায়নি। বাবুসোনার বাবা সঞ্জয় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সোনামনি ফিসফিস করে বাবুসোনাকে বলে,
- ' দাদাভাই আমাদের বাড়ির পেছনের বাগানে খেলবি?'
- ' হ্যাঁ যাবো চল।'
দুজনে চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির পেছনের দরজাটার খিল খুলে বাগানে প্রবেশ করলো। দরজাটা ভেজিয়ে দিতে ভুললো না। ছোট্ট বাগানে কত গাছের ভীড়। প্রথমেই আছে পাশাপাশি দুটো বড়ো কলা গাছ আর তাতে কলার কাঁদি ঝুলছে। তার পাশে আছে দুটো লেবু গাছ। লিলি ফুল গাছ। তাতে সাদা লিলি ফুল ফুটে আছে কত। তাছাড়া আছে লজ্জাবতী গাছ। একটু ছোঁয়া পেলেই পাতাগুলো গুটিয়ে যায়। তার পাশে দুটো এ্যালভেরা গাছ। দুরকমের নয়নতারা ফুলগাছ। আছে গন্ধরাজ ফুলের গাছ। বেশ বড়ো। কত ফুল ফুটে আছে গাছে। কি সুন্দর গন্ধ সেই ফুলের। আর এক পাশে আছে কাঁঠালি চাঁপার গাছ। সেই গাছেও কত সুগন্ধি ফুল ফুটে আছে। এই দুই ফুলগাছের সুন্দর গন্ধে গোটা বাগান মাত। আবার আগাছা জন্মেছে অনেক। একটা ব্যাপার ওদের বড়ো মুগ্ধ করলো আনন্দও দিল। কিছু রঙিন প্রজাপতি আর ফড়িং। উড়ে এক বার এ ফুলে বা পাতায় বসছে আবার উড়ে অন্য ফুলে বা পাতায় বসছে। বাবুসোনা ও সোনামনি ওদের ধরার জন্য ছুটছে, ও হো হো হি হি করে হাসছে। কি যে মজা তা আর বলার নয়। লজ্জাবতী লতা নিয়ে কিছুক্ষণ খেলল। তারপর দুজনে দুটো শুকনো ডাল কুড়িয়ে নিয়ে বড়ো গাছগুলোকে সেইটা দিয়ে পেটাতে লাগলো ও কৃত্রিম শাসন করতে লাগলো। ওই ডাল নিয়ে ফড়িং ধরার জন্য তাদের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করলো। একসময় সোনামনি বললো,
- ' অ্যাই দাদাভাই ফুল নিবি? চল তাহলে গন্ধরাজ আর কাঁঠালি চাঁপার গাছের নিচে।'
দুজনে শুকনো ডালগুলো দিয়ে লাফিয়ে উঠে গাছ দুটোর গায়ে আঘাত করে কয়েকটা ফুল মাটিতে ফেললো। সেগুলোর থেকে দুটো করে ফুল দুজনে মিলে কুড়িয়ে নিয়ে মাথা তুলতেই সামনে দেখলো একটা বুড়ী সাদা কাপড় পরে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। পাশে পড়ে আছে একটা লাঠি। বুড়ির মাথার অল্প চুল, তাও সব সাদা। বুড়ি ওদের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। ওরা অবাক হলেও ভাবলো চারিদিকের এত উঁচু পাঁচিল ডিঙিয়ে বুড়ি ঢুকলো কি ভাবে। কেমন একটু ভয় ভয় করতে লাগলো ওদের। কিন্তু পালাল না। সোনামনি শক্ত করে দাদার হাত ধরে থাকলো। ভয় ভয় করলেও বাবুসোনা সাহস করে এগিয়ে গেলো বুড়ির দিকে। বলে,
- ' তুমি কে গো দিদা? তুমি কথা থেকে এসেছ?'
বুড়ি ওদের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলো।
- ' আমি এই সময় এসে বেশ কিছুদিন থাকি আর সব জায়গায় ঘোরা ঘুরি করি চুপি চুপি। আমি শীত বুড়ি। আমার ভাই কার্তিক এখান থেকে চলে গেলেই আমি সুট করে এখানে ঢুকে পড়ি। আমি সবাইকে কাঁপুনি ধরিয়ে সাবধান করে দিই। আমাকে অবজ্ঞা করে সবাই মুশকিলে পরে যায়। তোমাদের দেখে আমার খুব ভালো লাগলো আর মায়াও হলো। তাই আমি এই বাগানে ঢুকে বসে বসে তোমাদের খেলা দেখ ছিলাম। তোমরা যে আমাকে দেখে ভয় পাওনি, উপরন্তু আমার সাথে কথা বলছো, এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। তোমরা দুজনে একটা করে পাতলা জামা পরে আছো কেনো? এক্ষুনি সন্ধ্যে নামবে। তোমরা তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে গরম জামা পরে নাও। আমি এখন যাই। আমি এখন ঘুরবো সর্বত্র।'
সোনামনির খুব মজা লাগলো। ভয় সরিয়ে বলে,
- ' তুমি কি রোজ এইরকম ভাবে ঘুরে বেড়াও সবখানে?'
- ' না কার্তিক ভাইটা চলে গেলেই আমি আসি। কিছুদিন থাকি তারপর আমার ছোট্ট মিষ্টি ভাই বসন্ত আসলেই আমি চলে যাই। ও আবার গান গাইতে গাইতে নেচে নেচে আসে সঙ্গে আনে মিষ্টি হাওয়া। এর পরে আসে মেজ রাগী ভাইটা। বসন্তকে ধমকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে দাপটে অনেকদিন শাসন করে বেড়ায় এই জায়গা। চলি এবার।'
- ' এর পরে কি হয় দিদা? ' উঠে দাঁড়িয়ে বলে শীত বুড়ি,
- ' এরপর আসে আমার ছোট মিষ্টি বোন বৃষ্টি। ও এসে ওর মেজদা তপনের মাথায় জল ঢেলে ওর মাথাটা ঠান্ডা করে দেয়। ওকে সব ভাইরা খুব ভালোবাসে। তাই ওকে কেউ কিছু বলে না। এমনিতেই বৃষ্টি খুব কাঁদুনে ও একটুতেই ঝর ঝর করে কাঁদে আর বড্ড ঘ্যান ঘ্যানে। ও কিন্তু সহজে বাড়ি ফিরতে চায় না। ওর বড়দা শরৎ এসে গেলেও ওর আবদারের জন্য ওকে সহজে কিছু বলে না।'
হঠাৎ দেখে শীত বুড়ি কেমন হওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ওদেরও কেমন শীত শীত করতে লাগলো। সূর্য্য অনেক আগেই ডুবে গেছে। দিনের আলো নিভে আসছে। চটপট ওরা ঘরে ফিরে এলো বাগান থেকে। ঘরে ঢুকে দেখে সঞ্জয় টিভি দেখছে। ওদের দেখেই বললো,
- ' কোথায় ছিলে তোমরা এতক্ষণ? মায়েরা খুঁজছে।'
- ' আমরা বাগানে খেলছিলাম। এই দেখো ফুল। কি সুন্দর গন্ধ।' সোনামনি বলে। ওদের কথা শুনে মলি ও সোমা রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো। মলি মেয়েকে বলে,
- ' অ্যাই সোনামনি, তোরা বাগানে গিয়েছিলি না? খুব ফুল নষ্ট করেছিস তো?'
- ' না নষ্ট করিনি। মা আমাকে একটা গরম জামা পরিয়ে দাও তো।' ওর কথা শুনে বাবুসোনাও সোমাকে বলে,
- ' আমাকেও একটা গরম জামা পরিয়ে দাও।' মলি বলে,
- ' দেখেছ বৌদি, অন্য দিন গরম জামা পরাতে গেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আর আজকে নিজে থেকেই গরম জামা পড়তে চাইছে। কি সৌভাগ্য আমার।' সোমা বলে,
- ' আরে আমার ছেলেটাও গরম জামা পড়তেই চায় না। জোর করে পরালে কিছুক্ষণ পরেই খুলে ফেলে। ওর নাকি খুব গরম লাগে।'
সোনামনি আর বাবুসোনা কোনো কথা বলে না। চুপচাপ থাকে। এখনো তারা শীত বুড়িকে যেন ওদের সামনে দেখতে পাচ্ছে।
______________________________________________________________________________________
দীপক কুমার পাল,
ডিটিসি সাউদার্ন হাইটস,
ব্লক-৮, ফ্ল্যাট-১বি,
ডায়মন্ড হারবার রোড,
কলকাতা-700104
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন