ভুতো খুড়ো আর এক সিঁধেল চোর
জীবন পাইক
তখন শীতকাল ৷রাত দুপুরে পাড়া একেবারে নিঝুম ৷সারা পাড়া একেবারে ঘুমের মাঝে ডুবে গেছে ৷গরমকাল হলে বিষয়টা অন্যরকম হত ৷ তখন ঘুম আসতে চাইতো না ,অসহ্য গরমে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে হাঁটা চলা করতো গ্রামীণ মানুষ জন , কুকুরের চিৎকার ও কানে আসত ৷ পথে ঘাটে এরা তখন দল বেঁধে এদিক ওদিক হট্টগোল বাধাতো৷কিন্তু শীতকাল বলে পথের কুকুরগুলো ও আজ হয়তো কোন গরম জায়গা খুঁজে নিরিবিলিতে বেশ ঘুম দিচ্ছে ৷
এই শীতের সময়টা চোর ডাকাতদের মোক্ষম সময় ৷ রাস্তা মাঠ-ঘাট সব ফাঁকা ৷ বিশেষত , যারা সিঁধেল চোর তাদের কথা তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে ৷প্রায় প্রত্যেক রাতে তারা সিঁধ কাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ৷ এরা সিঁধকাঠি দিয়ে হাতের কায়দায় এমন ভাবে মাটির ঘরে এমন ভাবে গর্ত কাটে তাতে বাড়ির মালিক বিন্দুমাত্র টেরই পায় না ৷
ধনী লোকেরা ডাকাতদের থেকে সাবধানে থাকতে চায় ৷তাই তারা লাইসেন্স করা বন্দুক ঘরে সযত্নে রেখে দেয় ৷আর সে কারণে ছিঁচকে চোর,সিঁধেল চোরের দল বড়ো লোকদের বাড়ি এড়িয়ে চলে ৷বাপ মার দেওয়া জানটা বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করাতে চায় না ৷তাই ওরা একেবারে যারা সাধারণ এবং গরীব এরা তাদের ঘরে হানা দেয় ৷থালা ,বাসন, গ্লাস, ঘটি, বাটি এরা রাতের অন্ধকারে সব চুরি করে ৷ পান্তার হাঁড়ি ও পর্যন্ত বাদ যায় না ৷
আমাদের পাড়ায় ছিল শ্রীমান ভূতনাথ বাঁড়ুজ্জ্যে ৷ বামুন মানুষ ৷আমরা তাকে বলি ভূতো বামুন৷ ভূতো বামনের বাড়ির পাশে ছিল মস্ত বড়ো আমগাছ ৷ পাকা আমে গাছ ভরেই থাকত ৷আমগাছে ঢিল ছোঁড়া কারোর জো ছিল না ৷ ভূতো খুড়োর ছিল এমনই দাপট ৷খুড়োর তিন ছেলে ৷তারা ও বাবার মতো কিপটে আর হাড় বজ্জাত ৷বড়ো গোঁয়ারে ও বটে৷ খুড়োর ঘরের বাইরে চার দিকে ছিল মাটির পাঁচিল ৷সারা পাঁচিলে শুকনো তাল পাতা ছাওয়া ৷আমগাছে ও তাল করাত পেরেক দিয়ে শক্ত করে লাগানো ৷
একদিন ঘটে গেল এক কান্ড ৷তখন পোষ সংক্রান্তি ৷পাড়ার অনেক লোক জন গঙ্গাসাগর এ তীর্থ করতে গেছে ৷ মাঝ রাত তখন৷ হঠাৎ ভূতো বামুনের বাড়ির সবাই গলা ফাটিয়ে চিৎকার জুড়ে দেয় চোর চোর ৷সকলের মুখে একই কথা ৷তাল পাতা পাঁচিলের উপর থেকে হুড়মুড়িয়ে ফেলে বাড়ির ভিতরে লাফিয়ে পড়েছে কেউ ৷নির্ঘাৎ সিঁধেল চোর ৷ সিঁধেল চোর না হয়ে পারে না ৷পালাতে পারে নি ৷ আছে ৷অবশ্য ই আছে ৷ লুকিয়ে আছে কোথাও ৷ফিসফিসিয়ে খুড়ো বলে ,খুব সাবধান ৷পালাতে যেন না পারে ৷অন্ধকারে লাঠি হাতে সবাই হামাগুড়ি দিয়ে সিঁধেল চোর খোঁজে ৷
রাত হু হু করে বাড়তে থাকে ৷একটা সময় ঝোপের ভিতর থেকে ভূতো বামনের ছোট ছেলে চোরের ঠ্যাং ধরে চিৎকার জোড়ে ধরেছি ধরেছি ৷আর সেই সঙ্গে চিৎকার মার মার ৷ সেই রাতে এত মার খাওয়ার কথা চোর সাত জন্মে ও ভুলতে পারবে না ৷সকলের চিৎকার এর মধ্যে মার খাওয়া ব্যক্তির কোন কথাই ওরা কানে নিচ্ছিল না ৷একটা সময় ক্ষীণ কন্ঠের আওয়াজ কানে আসতেই ওরা সবাই আঁৎকে ওঠে ৷ওরা ভাবতে পারছে না চোর বলে ওরা এতক্ষণ কাকে মেরেছে ৷বাড়ির সামনে ততক্ষণে পাড়া ভেঙে লোক জমে গেছে ৷
ভোর হতে না হতেই তিন ছেলে বুড়ো বাপকে নিয়ে ছুটলো হাসপাতালে ৷
____________________________________________________________________________________
জীবন পাইক
সুভাষগ্রাম,সোনারপুর,দক্ষিণ ২৪পরগণা
[ছবি: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন