চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি
এস এম মঈনুল হক
ছবি আঁকা শেষ হতেই ঘরের মধ্যে ছবিটা কে রেখে সব জানালা বন্ধ করে দিলেন। পিয়েরো কিছুই জানেন না। ঘরে ঢোকামাত্রই সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে বেরিয়ে এলেন। কি ছিল সেই ভয়ংকর ছবি দৃশ্য? লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একটা বড় কাঠের পাটাতনের উপর গুহার ছবি আঁকলেন। গুহার মধ্যে আধো আলো আধো ছায়ার এক অপার্থিব পরিবেশ। তার সামনে এক ভয়ঙ্কর ড্রাগনের ছবি। তার মাথায় শিং । চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলছে, ভয়ঙ্কর হিংস্র নাকগুলো যেন ছুরির ফলা। নাক দিয়ে বেরিয়ে আসছে আগুনের লেলিহান শেখা। পিয়েরো শান্ত হতেই লিওনার্দো গম্ভীর গলায় বললেন আমি মনে হয় আমার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পেরেছি। এইবার আর ছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করলেন না পিয়েরো। এই পিয়েরো অ্যান্টানিও দ্য ভিঞ্চিই হচ্ছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির পিতা। ইতালির রেনেসাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিধাতার পরিহাসে এক কুমারী নারীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ১৪৫২ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ছিলেন অশেষ মেধা সম্পন্ন ব্যক্তি। ছোট থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ আকর্ষণ। তাঁর পিতাও ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। বাবার কাছে ছবি আঁকা শিখতে চাইলে তাঁর বাবা সরাসরি তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। লিওনার্দো উপলব্ধি করতে পারলেন বাবার অনুমতি ছাড়া ছবি আঁকা সম্ভব নয়। তখনই তিনি এই ভয়ঙ্কর ড্রাগনের ছবি এঁকে তার বাবাকে প্রমাণ দিলেন যে সে তার ছাত্র হওয়ার যোগ্য। এবার তিনি লিওনার্দোকে ছবি আঁকবার অনুমতি দিলেন। ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভেরোক্কিয়োর কাছেই লিওনার্দো শিখেছিলেন কেমন করে মানবজীবনের গভীরে ডুব দিয়ে তার অপার রহস্যময়তাকে ফুটিয়ে তুলতে হয় রঙের তুলিতে। এই কারণেই ভেরোক্কিয়োকে তাঁর গুরু হিসাবে স্বীকার করেছেন। দেখতে দেখতে দশ বছর ফ্লোরেন্সে কাটিয়ে দিলেন লিওনার্দো। এই সময় তিনি এঁকেছেন বেশ কিছু ছবি- অ্যাননসেশন, মেরি ও যীশুর দুখানি ছবি, এক রমণীয় প্রতিকৃতি। তিনি যীশুর শেষ ভোজের একটা ছবি এঁকেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন- The last supper. চিত্র শিল্পের জগতে লাস্ট সাপার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি। যীশু তাঁর বারো জন শিশ্যকে নিয়ে শেষ ভোজে বসেছেন। তাঁর দু'পাশে ছয় জন করে শিষ্য। সামনে প্রশস্ত টেবিল। পেছনে জানালা দিয়ে মৃদু আলো এসে পড়ছে। যীশু বলেছেন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাকে ধরিয়ে দেবে। ছবিটি সান্তামারিয়া কনভেন্টের এক দেওয়ালে আঁকা হয়েছিল। দি লাস্ট সাপার লিওনার্দোর এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। তিনি বিশেষভাবে একটা ছবি এঁকেছিলেন ছিলেন- ভার্জিন অব দ্য রক্স। ঝুলে পড়া এক পর্বত। তার মধ্যে ফুটে উঠেছিল চিরন্তন মানব আত্মার এক রূপ। এই সময় তিনি এঁকেছিলেন তার জগৎবক্ষাপ ছবি- মোনালিসা। এই ছবিটি আঁকতে তাঁর তিন বছর সময় লেগেছিল। কে এই মোনালিসা এ বিষয়ে ভিন্নমত আছে। কয়েকজনের অভিমত মোনালিসার প্রকৃত নাম ছিল লিজা। তিনি ছিলেন ফ্লোরেন্সের এক অভিজাত ব্যক্তির স্ত্রী। ভিন্ন মত অনুসারে মোনালিসা ছিলেন জিয়োকোন্ত নামে এক ধনী বৃদ্ধের তৃতীয় পত্নী। নাম মাদোনা এলিজাবেথ। দিনের পর দিন তিনি অসংখ্য ভঙ্গিতে মুখের দিকে ছবি এঁকেছেন। কিন্তু কোনও ছবি তার মনকে ভরিয়ে তুলতে পারেনি। একদিন লিওনার্দোর চোখে পড়ল এলিজাবেথের ঠোঁটের কোনায় ফুটে উঠেছে বিচিত্র এক হাসি। এই হাসির জন্য যেন তিনি তিন বছর অপেক্ষা করেছিলেন। মুহূর্তে তুলির টানে ফুটিয়ে তুললেন সেই রহস্যমন্ডিত কালজয়ী হাসি। ১৫১৬ সালে লিওনার্দো ফারসী সম্রাটের আমন্ত্রণে প্যারিসে গেলেন। সম্রাট লিওনার্দোকে খুবই সম্মান করতেন। ক্রমশই স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছিল। ডান হাত অকর্মণ্য হয়ে গিয়েছিল। বাঁ হাতে তখন ছবি আঁকতেন। এই সময় তিনি ঈশ্বরের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন ।অবশেষে ৬৭ বছর বয়সে ২রা মে ১৫১৯, তিনি ইহ জগৎ ত্যাগ করেন। সেই সময় তিনি ছিলেন ইতালিয় রেঁনেসাসের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ।
____________________________________________________________________________________
গ্রাম: ফুলসহরী, ডাকঘর:
রমনা শেখদিঘী, জেলা:
মুর্শিদাবাদ, পিন কোড:
৭৪২২২৭.
[চিত্রঃ: ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে সংগৃহীত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন